Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

এখনও ইস্পাত শিল্পের স্বপ্নই দেখে শালবনি

মাঠের এককোণে বসেছিলেন গৌতম মাহাতো। জিন্দল প্রকল্পের জন্য জমি দিয়েছে গৌতমের পরিবার। আশা ছিল, শিল্প হলে কাজ পাবেন। বছর ছাব্বিশের গৌতম বলছিলেন, “বড় কারখানাটা হলে একটা কাজ পেতাম। সে জন্যই জমি দিয়েছিল পরিবার। কারখানা আর হল কোথায়? সভায় যদি বড় কারখানাটার কথা শুনি তাহলে মনে জোর পাব।”

শালবনির সভায় বক্তা সূর্যকান্ত মিশ্র। ইনসেটে, শিল্প ও কাজের দাবিতে সভাস্থলের মাঝে মাঝেই ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানার।— সৌমেশ্বর মণ্ডল

শালবনির সভায় বক্তা সূর্যকান্ত মিশ্র। ইনসেটে, শিল্প ও কাজের দাবিতে সভাস্থলের মাঝে মাঝেই ছিল প্ল্যাকার্ড, ব্যানার।— সৌমেশ্বর মণ্ডল

বরুণ দে
শালবনি শেষ আপডেট: ২৩ জানুয়ারি ২০১৬ ০২:২২
Share: Save:

তখনও সভা শুরু হয়নি। সবে মাঠে ভিড় জমতে শুরু করেছে। গোবরু থেকে পদযাত্রা রওনা দিয়েছে বামেদের সভাস্থলের উদ্দেশে।

মাঠের এককোণে বসেছিলেন গৌতম মাহাতো। জিন্দল প্রকল্পের জন্য জমি দিয়েছে গৌতমের পরিবার। আশা ছিল, শিল্প হলে কাজ পাবেন। বছর ছাব্বিশের গৌতম বলছিলেন, “বড় কারখানাটা হলে একটা কাজ পেতাম। সে জন্যই জমি দিয়েছিল পরিবার। কারখানা আর হল কোথায়? সভায় যদি বড় কারখানাটার কথা শুনি তাহলে মনে জোর পাব।”

শুক্রবার শালবনির সভায় সেই বড় কারখানার কথা শোনালেন সিপিএমের রাজ্য সম্পাদক সূর্যকান্ত মিশ্র। বুঝিয়ে দিলেন, ক্ষমতায় ফিরলে বামেরা শালবনিতে ইস্পাত কারখানাই করবে। সভা থেকে সূর্যকান্তবাবুর ঘোষণা, “ইস্পাত কারখানাই হবে এখানে।”

শিল্প ও কাজের দাবিতে গত শনিবার সিঙ্গুর থেকে শুরু হয়েছিল বাম পদযাত্রা। এ দিন তা শেষ হল শালবনিতে। তারপরই সভা। সভায় শিল্প নিয়ে রাজ্য সরকারকে বিঁধতে ছাড়েননি বিরোধী দলনেতা। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সমালোচনা করে সূর্যকান্তবাবুর মন্তব্য, “সিঙ্গুরে ন্যানো কারখানা হওয়ার কথা ছিল। পাঠালেন কোথায়, সানন্দে। আপনার লজ্জা হওয়া উচিত ছিল।’’ তিনি জানান, শিল্পমন্ত্রীকে তিন বছর আগে প্রশ্ন করেছিলেন, শালবনির ইস্পাত কারখানার কী হল? এক বছর গেল। জবাব নেই। দু’বছর গেল জবাব নেই। তিন বছরের মাথায় উনি যে দিন জবাব দিলেন, যে দিন বিধানসভায় সুর্যবাবু ছিলেন না। সিপিএম রাজ্য সম্পাদকের তির্যক মন্তব্য, ‘‘উনি বলেছেন, শালবনিতে পাঁচিল হয়েছে, রাস্তা হয়েছে, ওমুক হয়েছে, তমুক হয়েছে। হ্যাঁ আপনারা করেছেন, পাঁচিলটা ভাঙার চেষ্টা করেছেন। যেটুকু হয়েছে আমরাই করেছি।”

এ দিন সকালে শালবনির গোবরু থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। দুপুরে তা শালবনি সদরে পৌঁছয়। এরপরই সভা শুরু হয়। সূর্যবাবু মনে করিয়ে দেন, কলকারখানা আর কাজের দাবিতেই এই পদযাত্রা শেষ হয়ে গেল মানেই কর্মসূচিতে দাঁড়ি পড়ল না। তাঁর কথায়, “আমাদের অনেক অনেক দূর যেতে হবে। আর তার জন্য এই সংগঠনটাকে (বিপিএমও) বাঁচাতে হবে। বুথে বুথে সংগ্রাম কমিটি গড়ে তুলতে হবে। প্রত্যেকে যাতে ভোট দিতে পারে তা সুনিশ্চিত করতে হবে।”

সূর্যবাবু মনে করিয়ে দেন, শালবনিতে হওয়ার কথা ছিল ইস্পাত কারখানা। আর তার সহযোগী হিসেবে সিমেন্ট কারখানা। এখানে যা বিদ্যুত্‌ লাগত, তা-ও উত্‌পাদন হওয়ার কথা ছিল। আর এখন শুধু সিমেন্ট কারখানার কথা বলা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রীকে বিঁধে তাই এই বাম নেতার বক্তব্য, ‘‘আপনি থাকতে এখানে সিমেন্ট তো দূর, এক ইঞ্চি মাটিও কাটা হবে না। কিন্তু ইস্পাতই হবে। ইস্পাত কারখানাই হবে এখানে। আর তার থেকে সিমেন্ট তৈরি হবে। এটাই আমরা বলছি। এটাই দাবি।” সূর্যকান্তবাবুর মতে, রাজ্যে যেটুকু শিল্প করার সম্ভাবনা রয়েছে, তা বামপন্থীরাই করতে পারবে। আর বর্তমান সরকার ল্যাংচা, তেলেভাজা শিল্পের গল্প শোনাচ্ছে। সভায় ছিলেন শ্যামল চক্রবর্তী, রবীন দেব, প্রবোধ পণ্ডা, ক্ষিতি গোস্বামীরা। সিপিআইয়ের রাজ্য সম্পাদক প্রবোধ পণ্ডার কটাক্ষ, “শুধু সফর করলে শিল্প আসে না। তার জন্য সুষ্ঠু নীতি চাই। মুড়িভাজা শিল্প, তেলেভাজা শিল্পের গল্প শুনিয়ে কিছু হবে না!” প্রবীণ সিটু নেতা শ্যামল চক্রবর্তীর মন্তব্য, “রাজ্য থেকে শিল্প-সম্ভাবনা উড়ে গিয়েছে। পশ্চিমবাংলা লক্ষ্মীছাড়া হয়ে গিয়েছে। ওই অলক্ষ্মীকে বাংলা থেকে দূর করতে হবে!” সভা শেষে শালবনির জিন্দল প্রকল্পের জমিদাতা সংগঠনের নেতা পরিষ্কার মাহাতোরও বক্তব্য, “এখানে ইস্পাত প্রকল্প হলেই ভাল। মানুষ তো তার জন্যই জমি দিয়েছে।”

২০০৮ সালের ২ নভেম্বর। প্রস্তাবিত ইস্পাত প্রকল্পের শিলান্যাস ঘিরে এমনই জমায়েত হয়েছিল শালবনিতে। ২০১৬ সালের ২২ জানুয়ারি সেই শিল্প চেয়েই ফের জমায়েত হল শালবনিতে। এর মধ্যে পারাং নদী দিয়ে বয়ে গিয়েছে অনেক জল। সভায় আসা কার্তিক দাস নামে বছর চব্বিশের এক যুবক জিন্দলদের জমির দিকে তাকিয়ে বলছিলেন, “ঠিকঠাক ভাবে কাজ হলে এই সময়ে বড় কারখানার চিমনি দিয়ে ধোঁয়া বেরতো!” সভামঞ্চে তখন গান হচ্ছে, ‘লাগো, ওই লাগো রে, বেকারেরা মুড়িভাজায় লাগো!”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE