Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

রাজবাড়ির প্রাচীন ১০টি বিগ্রহ উধাও

কখনও চুরি গিয়েছে প্রাচীন বিগ্রহ। কখনও চুরির চেষ্টা হয়েছে। তাই বাইরের মন্দির থেকে সরিয়ে সেগুলি নিয়ে আনা রাজবাড়ির অন্তঃপুরে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। নারায়ণগড়ের হাঁদলা রাজবাড়ি থেকে মোট ১০টি মূর্তি ও তিনটি শালগ্রাম শিলা চুরি হয়ে গেল।

নারায়ণগড়ের হাঁদলা রাজবাড়ির ঘর (ইনসেটে) থেকে বিগ্রহগুলি চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ। ছবি: রাজপরিবারের সৌজন্যে।

নারায়ণগড়ের হাঁদলা রাজবাড়ির ঘর (ইনসেটে) থেকে বিগ্রহগুলি চুরি গিয়েছে বলে অভিযোগ। ছবি: রাজপরিবারের সৌজন্যে।

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১০ জুলাই ২০১৬ ০১:১৪
Share: Save:

কখনও চুরি গিয়েছে প্রাচীন বিগ্রহ। কখনও চুরির চেষ্টা হয়েছে। তাই বাইরের মন্দির থেকে সরিয়ে সেগুলি নিয়ে আনা রাজবাড়ির অন্তঃপুরে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হল না। নারায়ণগড়ের হাঁদলা রাজবাড়ি থেকে মোট ১০টি মূর্তি ও তিনটি শালগ্রাম শিলা চুরি হয়ে গেল।

শনিবার সকালে মন্দির খুলতে এসে পুরোহিত পঙ্কজকুমার পণ্ডা দেখেন, দরজার দু’টি তালা ভাঙা। রাজপরিবারের সদস্যরা এলে জানা যায় ১০টি বিগ্রহ ও তিনটি শালগ্রাম শিলা খোয়া গিয়েছে। চুরি যাওয়া মূর্তিগুলির মধ্যে ছ’টি অষ্টধাতুর ও চারটি পিতলের। অষ্টধাতুর মূর্তিগুলি বেশিরভাগই রাধা-কৃষ্ণের যুগল মূর্তি। তার কোনওটির শ্রীমতির বিগ্রহ নেই, কোনওটির নেই কৃষ্ণ মূর্তি। পিতলের চারটি মূর্তিই গোপালের।

দুপুরে আসে নারায়ণগড় থানার পুলিশ। পরে থানায় চুরির অভিযোগ দায়ের হয়। নারায়ণগড় থানার অদূরে এমন ঘটনায় প্রশ্নের মুখে নিরাপত্তা।

জানা গিয়েছে, বর্ধমান থেকে অবিভক্ত মেদিনীপুরের নারায়ণগড়ে এসেছিলেন রাজা গন্ধর্বনারায়ণ পাল। আনুমানিক ৬৭১ বঙ্গাব্দে (ত্রয়োদশ শতক) তিনিই নারায়ণগড়ের হাঁদলায় এই রাজবাড়ি ও অদূরে বিষ্ণু মন্দির নির্মাণ করেন। সেই সময়ই মন্দিরে অষ্টধাতুর ছ’টি বিগ্রহ ও কষ্টিপাথরের একটি শিবলিঙ্গ স্থাপন করা হয়। পরে বিভিন্ন সময়ে স্থাপিত হয় পিতলের গোপাল মূর্তি ও শালগ্রাম শিলাগুলি।

চুরির উপদ্রবও বহু দিনের। বছর কুড়ি আগে অষ্টধাতু ও পিতলের সব বিগ্রহগুলি চুরি গিয়েছিল। পরে অবশ্য স্থানীয় পুকুরে বস্তাবন্দি অবস্থায় সব বিগ্রহগুলিই উদ্ধার হয়। বছর পনেরো আগে ফের মন্দিরের গেট ভেঙে বিগ্রহ চুরির চেষ্টা হয়। তারপরই বিগ্রহগুলি বাড়ির ভিতরে একটি ঘরে নিয়ে আসা হয়। তখন শুধু শিবলিঙ্গ স্থানান্তরিত হয়নি। গত বছর অগস্টে সেটি চুরি যায়। আর উদ্ধার হয়নি।

রাজ পরিবারের সূত্রে জানা গিয়েছে, বাড়ির ভিতরেও বিগ্রহগুলিকে সুরক্ষিত রাখার পুরো বন্দোবস্ত ছিল। পুরোহিত পুজো সেরে বেরিয়ে গেলে দু’টি দরজায় সর্বক্ষণ তালা দেওয়া থাকে। এখন রাজবাড়ির পাঁচ শরিকের পরিবার ওই বাড়িতে থাকেন। শুক্রবার রাতে সব মিলিয়ে আটজন বাড়িতে ছিলেন। তাঁদের অবশ্য দাবি, কেউই কিছু টের পাননি। এ দিন সকালে পুরোহিতের হাঁকডাকে সব জানাজানি হয়।

রাজপরিবারের সদস্য মোহিনীকিঙ্কর পাল বলেন, “মূর্তিগুলিকে যত্নে রাখতেই পুরনো মন্দির থেকে বাড়ির ভিতরে আনা হয়েছিল। তা-ও রক্ষা করতে পারলাম না। আমরা হতাশ। প্রায় ১২ ফুট উঁচু পাঁচিল টপকে কেউ ঢুকেছিল বলে মনে হচ্ছে।’’ এমন ঘটনায় ভেঙে পড়েছেন কলকাতাবাসী মোহিনীবাবুর নাতনি অদিতি পাল। তিনি বলেন, “সুপ্রাচীন বিগ্রহগুলি আর আমাদের বাড়িতে নেই, ভাবতে পারছি না।’’ এই অবস্থায় নিরাপত্তার দাবি তুলেছেন রাজপরিবারের সদস্যরা। মোহিনীবাবুর ভাইপো অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অরুণকুমার পাল বলেন, “গত বছর শিবলিঙ্গ চুরি গেল। পুলিশে জানালেও উদ্ধার হয়নি। থানা থেকে এক কিলোমিটারের মধ্যে যে ভাবে চুরি হল, তাতে আমরা চাই এলাকায় পুলিশি টহলদারি বাড়ানো হোক।’’ তদন্ত শুরু হয়েছে বলে জানিয়েছে নারায়ণগড় থানার পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narayangarh Rajbari Idol stolen
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE