Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
ভোট মিটেছে। কাজে গতি নেই। পঞ্চায়েতে গরহাজির প্রধান। প্রকল্প-পরিষেবা নিয়ে বাড়ছে ক্ষোভ।

বকেয়া টাকা অমিল, থমকে একশো দিনের কাজের চাকা 

একশো দিনের কাজের এই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। ফাইল চিত্র

একশো দিনের কাজের এই ছবি এখন দেখা যাচ্ছে না বললেই চলে। ফাইল চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ২৭ জুন ২০১৯ ০০:৩৬
Share: Save:

লোকসভা ভোটের পরে বদলে গিয়েছে দুই জেলার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট। তার প্রভাব পড়েছে পঞ্চায়েতের একশো দিনের কাজে। বেশিরভাগ জায়গায় বন্ধ কাজ। বকেয়া টাকাও মিলছে না। বাড়ছে ক্ষোভ। কোথাও কোথাও একশো দিনের কাজে শাসক তৃণমূলের বিরুদ্ধে দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের অভিযোগ তুলে সরব হয়েছে বিজেপি।

অনেক পঞ্চায়েত এলাকায় নতুন করে একশো দিনের কাজ শুরুই হয়নি। যেমন মেদিনীপুর সদর ব্লকের মণিদহ পঞ্চায়েতের রূপসায় একশো দিনের প্রকল্পে জমি সমান করার কাজ শুরু করার কথা। মুচিবেড়ায় পুকুর সংস্কার হওয়ার কথা। পরিকল্পনাও তৈরি। কিন্তু কাজ এখনও শুরু হয়নি। কেন? পরিচালিত মণিদহ পঞ্চায়েতের উপপ্রধান অঞ্জন বেরার আশ্বাস, ‘‘শীঘ্রই কাজ শুরু হবে।’’

পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, একশো দিনের কাজে সারা জেলায় প্রায় ৯২ কোটি টাকা বকেয়াও রয়েছে। অনেকেই ভেবেছিলেন ভোটের পরে বকেয়া মজুরি পেয়ে যাবেন। কিন্তু আপাতত শ্রমিকদের এই আশা মিটছে না। জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এই প্রকল্পে ক’মাস টাকা আসেনি। তাই টাকা ব্লকে পাঠানোও যায়নি। টাকা এলে সব মিটিয়ে দেওয়া হবে।’’

প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, একশো দিনের প্রকল্পে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলায় বছরে গড়ে সাড়ে ৪০০ কোটি টাকারও বেশি কাজ হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবর্ষেই প্রায় ৪৯০ কোটি টাকার কাজ হয়েছে। ওই অর্থবর্ষে ঝাড়গ্রাম জেলায় ২০০ কোটি টাকার কাছাকাছি কাজ হয়েছে। তার মধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুরে এখনও পর্যন্ত ৯২ কোটি ৪০ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা মজুরি বকেয়া রয়েছে। ঝাড়গ্রামে বকেয়া মজুরির পরিমাণ ৪২ কোটি ৬৯ লক্ষ টাকা। ঝাড়গ্রাম জেলার কিছু পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ এখন বন্ধ। ঝাড়গ্রাম লোকসভা আসনে বিজেপি জয়ী হওয়ার পরে তৃণমূল পরিচালিত একের পর এক পঞ্চায়েত প্রধানের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগে সরব হয়েছে গেরুয়া শিবির। সুপার ভাইজার নিয়োগ ও একশো দিনের কাজের মাস্টার রোল নিয়েও অভিযোগ উঠেছে।

নিয়ম অনুযায়ী, কাজ শেষের ১৫ দিনের মধ্যে ফান্ড ট্রান্সফার অর্ডার (এফটিও) হওয়ার কথা। শ্রমিকদের একাংশের ক্ষোভ, পঞ্চায়েতে টাকা চাইতে গেলে ঘোরানো হচ্ছে। অনেক প্রধান বিষয়টি মেনেও নিচ্ছেন। শালবনির এক পঞ্চায়েত প্রধান যেমন মানছেন, ‘‘জেলা থেকে টাকা না-আসায় টাকা দেওয়া যাচ্ছে না। এ দিকে কখনও প্রশাসনিক বৈঠক, কখনও দলীয় বৈঠকে আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে।’’

ভোটের ফল প্রকাশের পরে ঘাটাল মহকুমা জুড়েও কার্যত বন্ধ একশো দিনের কাজের প্রকল্প। ২৩ মে পর থেকে ঘাটাল, চন্দ্রকোনা-১ ও ২ ব্লক, দাসপুর ১ ও ২ ব্লকের বেশিরভাগ পঞ্চায়েতে ওই প্রকল্পটি স্তব্ধ। গড়বেতা ৩ ব্লকের তৃণমূল পরিচালিত নয়াবসত পঞ্চায়েতের প্রধান অনিমা হাজরা ভোটের ফল বেরোনোর সপ্তাহ দুয়েক পরে পঞ্চায়েত অফিসে আসতেই বিজেপি ঘেরাও করে বিক্ষোভ দেখায়। ওই পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ এখন বন্ধ আছে।

গড়বেতা ২ অর্থাৎ গোয়ালতোড় ব্লকেও একশো দিনের কাজ কারা তদারকি করবে তা নিয়ে তৃণমূল ও বিজেপির স্থানীয় স্তরের নেতাদের মধ্যে দড়ি টানাটানি শুরু হয়েছে। ব্লকের ১০টির মধ্যে অন্তত ৬টি পঞ্চায়েত এলাকায় লোকসভা ভোটের পর কাজ শুরু করাই যাচ্ছে না। বিডিও স্বপন দেবের আশ্বাস, ‘‘আমি জটিলতা কাটানোর চেষ্টা করছি।’’

একই সমস্যা খড়্গপুরেও। সম্প্রতি এই মহকুমার খেলাড় পঞ্চায়েতের প্রধান ও উপপ্রধান তৃণমূল ছেড়ে বিজেপিতে যোগ দিয়েছেন। তারপর সেখানে একশো দিনের কাজ শুরু হয়নি। কেশিয়াড়ি পঞ্চায়েতে একশো দিনের কাজ চালু করা যায়নি। ওই পঞ্চায়েতের প্রধান তৃণমূলের ও উপপ্রধান বিজেপির। পঞ্চায়েতেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা রয়েছে বিজেপির। কেশিয়াড়ির বিডিও সৌগত রায় বলেন, “সম্প্রতি বৈঠক হয়েছে। আশা করি দু’এক দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram 100 Days Work Lok Sabha Election 2019
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE