Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

পাঁচ দিনে জেলায় বৃষ্টি ২৪৬ মিলিমিটার, ফুঁসছে নদী

এখনও কংসাবতী জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়নি। তবে ঝাড়খণ্ডের গালুডি জলাধার থেকে ২ লক্ষ ১৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই জল সুবর্ণরেখায় এসে মিশছে। স্বাভাবিক ভাবেই সুবর্ণরেখার জলস্তরও বাড়ছে।

জলমগ্ন: উপরে, চন্দ্রকোনার ডিঙালে ভেঙেছে শিলাবতীর বাঁধ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

জলমগ্ন: উপরে, চন্দ্রকোনার ডিঙালে ভেঙেছে শিলাবতীর বাঁধ। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও খড়্গপুর শেষ আপডেট: ২৫ জুলাই ২০১৭ ০১:২৬
Share: Save:

টানা বৃষ্টিতে ভাসছে রাস্তা। জলমগ্ন খড়্গপুর শহর ও গ্রামীণের বিস্তীর্ণ এলাকাও। জলের তলায় বিস্তীর্ণ এলাকার চাষ জমি। জলস্তর বাড়ায় চন্দ্রকোনার ডিঙালে শিলাবতীর বাঁধ ভেঙেছে। প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ইতিমধ্যে পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার ২৬ হাজার হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ক্ষতির পরিমাণ বেশি ঘাটালে।

গত পাঁচ দিনে পশ্চিম মেদিনীপুরে ২৪৬ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বাঁকুড়াতেও অতিবৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির জল শিলাবতী দিয়ে রূপনারায়ণে মিশছে। ঘাটালের বাঁকার কাছে শিলাবতী নদী বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে। এখানকার বিস্তীর্ণ এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। কংসাবতী, সুবর্ণরেখা, রূপনারায়ণেও জলস্তর বেড়েছে। মেদিনীপুরের কাছে অ্যানিকেতেও জলস্তর ছিল বিপদসীমার একেবারে কাছে। এখনও কংসাবতী জলাধার থেকে জল ছাড়া হয়নি। তবে ঝাড়খণ্ডের গালুডি জলাধার থেকে ২ লক্ষ ১৮ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। এই জল সুবর্ণরেখায় এসে মিশছে। স্বাভাবিক ভাবেই সুবর্ণরেখার জলস্তরও বাড়ছে।

তিন দিনের টানা বৃষ্টিতে খড়্গপুর শহরের পথঘাট জলের তলায়। জলমগ্ন শহরের ১, ২, ২৫, ২৬, ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিস্তীর্ণ এলাকা। ক্ষতিগ্রস্ত বেশ কিছু মাটির বাড়িও। শহরের বুলবুলচটির বাসিন্দা বীরেন মাইতি বলেন, “নিকাশি নিয়ে পুরসভা উদাসীন। তাই প্রতিবছর বর্ষা এলেই আমাদের দুর্ভোগে পড়তে হয়।” খড়্গপুর গ্রামীণের মীরপুরের বাসিন্দাদের জন্য শিবির খোলা হয়েছে। খড়্গপুরের পুরপ্রধান প্রদীপ সরকার সরকার বলেন, “টানা বৃষ্টি চলায় জল তো বাড়বেই। বেশ কিছু ত্রিপল বিলি করা হয়েছে। প্রতিটি এলাকায় আমাদের লোকেরা কাজ করছে।”

মেদিনীপুর শহরে কালেক্টরেট চত্বরে জমেছে জল। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

কাঁসাই খাল উপচে ভাসছে বালিচক সংলগ্ন ভোগপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা। এলাকার বাসিন্দাদের মানুষকে বালিচক ভজহরি হাইস্কুলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা চন্দন পাল বলেন, “কাঁসাই খালের লকগেট মাত্র দু’ফুট চওড়া হওয়ায় জল বেরোতে পারছে না। চারিদিক জলে ভরে গিয়েছে। বাড়িতে জল ঢুকছে।”

বরিষার কাছে চণ্ডীয়া নদীর জলের তোড়ে বাঁধের পাঁচশো মিটার অংশ ধসে যাওয়ায় ক্ষতিগ্রস্ত রাস্তা। পিংলার গোবর্ধনপুর, পিণ্ডরুই, ক্ষীরাই-সহ বিস্তীর্ণ এলাকার জমিও জলমগ্ন।

এ দিন ওই সমস্ত এলাকা ঘুরে দেখেন পিংলার বিধায়ক তথা জলসম্পদ উন্নয়ন মন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র। তিনি বলেন, “খুব খারাপ পরিস্থিতি। চণ্ডীয়ার জল বিপদসীমা বরাবর বইছে। বরিষা, পিণ্ডরুই-সহ বেশ কিছু এলাকার অবস্থা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন। কিছু বাড়িরও ক্ষতি হয়েছে।”

মেদিনীপুর মহকুমায় সবথেকে খারাপ পরিস্থিতি কেশপুরের। কেশপুরের সবক’টি চাতাল জলের তলায়। বাস চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। দুর্গত এলাকায় ত্রিপল বিলির কাজ শুরু হয়েছে। সামনেই আমন চাষের মরসুম। এখন বীজতলা তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। জমি জলের তলায় চলে যাওয়ায় বহু বীজতলা নষ্টের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

জেলা প্রশাসনের এক সূত্রে খবর, ঘাটাল মহকুমায় ১০, ৬২৫ হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত দাসপুর, চন্দ্রকোনা এলাকাও। খড়্গপুর মহকুমায় ১১,২২৫ হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। মেদিনীপুর মহকুমায় ৪,১০০ হেক্টর জমি জলের তলায় চলে গিয়েছে। সোমবার পশ্চিম মেদিনীপুরে আসেন কৃষিমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু। পূর্ণেন্দুবাবু বলেন, “অতিবৃষ্টির জেরে বেশ কিছু জমি জলমগ্ন হয়েছে। জেলার রিপোর্ট চেয়েছি।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE