Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

সমুদ্রে ৩৬ ঘণ্টার লড়াই শেষে উদ্ধার ৯ মৎস্যজীবী

উত্তাল সমুদ্রে ভরসা ছিল একটা কাঠের পাটাতন। তাতেই প্লাস্টিকের বল বেঁধে ভেলা তৈরি করে নিয়েছিলেন গঙ্গেশ্বরী ট্রলারের নিখোঁজ ৯ জন মৎস্যজীবী। প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরবেন, সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে লড়তে সেই আশাও ছিল বাতুলতা।

উদ্ধার হওয়া নয় মৎস্যজীবী। —নিজস্ব চিত্র।

উদ্ধার হওয়া নয় মৎস্যজীবী। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
পেটুয়াঘাট শেষ আপডেট: ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫ ০০:২৫
Share: Save:

উত্তাল সমুদ্রে ভরসা ছিল একটা কাঠের পাটাতন। তাতেই প্লাস্টিকের বল বেঁধে ভেলা তৈরি করে নিয়েছিলেন গঙ্গেশ্বরী ট্রলারের নিখোঁজ ৯ জন মৎস্যজীবী। প্রাণ নিয়ে ঘরে ফিরবেন, সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউয়ের সঙ্গে লড়তে লড়তে সেই আশাও ছিল বাতুলতা। তবুও মনের কোথাও একটু আশার আলো তখনও ছিল। ৩৬ ঘণ্টার লড়াই শেষে উদ্ধার করা গিয়েছে ন’জন মৎস্যজীবীকেই।

গত শুক্রবার বিকেলে পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দর থেকে ‘গঙ্গেশ্বরী’ ট্রলারে গভীর সমুদ্রে মৎস্য শিকারের উদ্দেশে বের হন ৯ জন মৎস্যজীবী। ট্রলারের ৯ জন মৎস্যজীবীর মধ্যে ৭ জনের বাড়ি কাঁথির জুনপুট এলাকায়। বাকি দু’জন নন্দীগ্রাম ও নরঘাটের শীতলপুরের বাসিন্দা। শনিবার রাতে দুর্ঘটনার কবলে পড়ে ট্রলারটি। ট্রলারের মাঝি তপন গিরির কথায়, “শনিবার রাতে গভীর সমুদ্রে প্রায় বাংলাদেশের জলসীমার কাছে মাছ শিকারের জাল ফেলার সময় জালটি ট্রলারের পিছনের পখায় আটকে যায়। ভেঙে যায় ট্রলারের পাখার স্যাফ। এরপরই ট্রলার অচল হয়ে পড়ায় বিপত্তির শুরু।’’ তাঁর কথায়, ‘‘ শনিবার সারারাত ধরে অচল ট্রলারে বসে থাকার পর রবিবার ট্রলারে ত্রিপল টাঙিয়ে পাল তৈরি করি। পালের হাওয়ায় ট্রলার প্রায় ৩৬ ঘণ্টা ভেসে ছিল। তবে সমুদ্রের দৈত্যাকার ঢেউয়ের ধাক্কায় ট্রলার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়। সেই সময় প্রাণে বাঁচতে ট্রলারে ওঠানামার সিঁড়ি হিসেবে একটি কাঠের পাটার সঙ্গে ট্রলারে থাকা জালের ১৬টি প্লাস্টিকের বল বেঁধে ভেলা তৈরি করি। সেই ভেলায় চড়ে উত্তাল সমুদ্রে ভাসতে থাকি।’’ ‘‘দীর্ঘক্ষণ ধরে সমুদ্রে ভাসার পর সোমবার রাতে শিখর নন্দিনী নামে একটি ট্রলার আমাদের উত্তাল সমুদ্র থেকে উদ্ধার করে’’ বলেন তপনবাবু।

উত্তাল সমুদ্রে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে বেঁচে আসা গঙ্গেশ্বরী ট্রলারের দক্ষ মৎস্যজীবী দ্বারিক হাতির কথায়, “৪০ বছর ধরে গভীর সমুদ্রে ট্রলারে করে মাছ শিকার করতে যাচ্ছি। কিন্তু মৃত্যুকে এত সামনে থেকে কখনও দেখিনি।’’ এ বার ট্রলারে করে গভীর সমুদ্রে করে প্রথমবার মাছ ধরতে গিয়েছিলেন নন্দীগ্রামের বাসিন্দা তরুণ মৎস্যজীবী শেখ আব্দুল আলম। তাঁর কথায়, ‘‘সবাই মিলে ঠিক করেছিলাম যাই হোক না কেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত কাঠের পাটাতন ছাড়ব না।’’

মঙ্গলবার বিকেলে পেটুয়াঘাট মৎস্যবন্দরে গিয়ে উদ্ধার হওয়া মৎস্যজীবীদের সঙ্গে কথা বলেন বন্দরের আধিকারিক প্রদ্যুৎ পাহাড়ি, জেলা মৎস্য আধিকারিক দিলীপ দে, মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক অরুন মাইতি প্রমুখ। অরুণ মাইতি জানান, “উদ্ধার হওয়া গঙ্গেশ্বরী ট্রলারের রেজিষ্ট্রেশন থাকলেও ট্রলারের ৯ জন মৎস্যজীবীর কোনও বিমা করা ছিল না। এমনকী ট্রলারে মৎস্যজীবীদের জন্য ছিলনা কোনও লাইফ জ্যাকেটও।’’ পেটুয়াঘাট মৎস্য বন্দরের নেতা শ্যামল জানা জানিয়েছেন, “ট্রলারের বিপদে পড়ার খবর জানার পরেই সোমবার রাতে মৎস্য দফতর ও কোস্ট গার্ডের সঙ্গে যোগাযোগ করি।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE