মৃত বাঘরোল। নিজস্ব চিত্র
কাঁথির ভগবানপুর-২ ব্লকের উদবাদাল খালে চলে আসা ডলফিনের মৃত্যুর ঘটনার রেশ এখনও কাটেনি। ওই ঘটনায় স্থানীয় মানুষের সচেতনতার পাশাপাশি বন দফতরের ভূমিকার কঠোর সমালোচনা হয়েছিল। এ বার নন্দকুমার ব্লকের কামারদা গ্রামে একটি বাঘরোলকে পিটিয়ে মারার অভিযোগ উঠল বাসিন্দাদের বিরুদ্ধে। বৃহস্পতিবার সকালে গ্রামের ধান জমিতে মৃত অবস্থায় বাঘরোলটিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়।
বাসিন্দাদের একাংশ মৃত বাঘরোলটিকে দক্ষিণ নারিকেলদা পঞ্চায়েত অফিসের সামনে হলদিয়া-মেচেদা জাতীয় সড়কে ফেলে দেয়। পরে নন্দকুমার থানার পুলিশ গিয়ে সেটিকে উদ্ধার করে। স্থানীয়দের একাংশের অভিযোগ, বুধবার রাতে গ্রামের কিছু বাসিন্দাই বাঘরোলটিকে পিটিয়ে মারে। এমনকী মৃত্যু নিশ্চিত করতে তার গলায় নাইলন দড়ির ফাঁসও লাগানো হয়। যদিও এদিন সকাল ১১টা পর্যন্ত বন দফতরের লোকজন এই ঘটনার কথা জানতা না বলে স্বীকার করেছেন বন দফতরের হলদিয়ার রেঞ্জ আধিকারিক প্রকাশ মাইতি। সংবাদ মাধ্যমে বিষয়টি জানার পর তিনি বনকর্মীদের ওই গ্রামে পাঠান। পুলিশের কাছ থেকে বাঘরোলের মৃতদেহ নিয়ে ময়নাতদন্তে পাঠায় বনকর্মীরা। প্রকাশ বলেন, ‘‘কী ভাবে বাঘরোলটির মৃত্যু হয়েছে, তার তদন্ত হচ্ছে। বাঘরোল সহ বিভিন্ন পশু-পাখি মারা বন্ধ করতে বাসিন্দাদের সচেতন করতে বিভিন্ন ভাবে প্রচার চালানো হয়। ওই সব প্রাণীদের ছবি সহ বিবরণ দিয়ে জনবহুল বাজারে ও অফিসে পোস্টার দেওয়া হয়েছে।’’
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে খবর, কামারদা গ্রামে দক্ষিণ নারিকেলদা পঞ্চায়েত অফিসের কয়েকশো মিটার দূরেই কামারদা উত্তরপল্লি। এলাকায় মাস দেড়েক ধরে কয়েকটি বাঘরোল দেখতে পাওয়া যাচ্ছিল বলে খবর। গ্রামের বিভিন্ন পান বরজ ও খড়িবনের মধ্যে বাঘরোল থাকার কথা জানতে পারেন বাসিন্দারা। সন্ধ্যার পর গ্রামের রাস্তায় তাদের ঘুরতেও দেখা যেত। বুধবার সন্ধ্যায় গ্রামেরই বাসিন্দা অমূল্য সামন্তের বাড়ির লাগোয়া পোল্ট্রির কাছে একটি বাঘরোল দেখা যায়। তারপরই বৃহস্পতিবার সকালে ওই বাড়ির পিছনে ধানক্ষেতে বাঘরোলের মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখেন গ্রামবাসীরা।
এদিন কামারদা উত্তরপল্লিতে গিয়ে দেখা গেল এলাকায় বসতবাড়ি লাগোয়া অনেক পান বরজ ও খড়িবন রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা অমূল্য সামন্তের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায় বাড়ির সামনে ও পিছনে মুরগির পোল্ট্রি রয়েছে।
বাঘরোলের মৃত্যু নিয়ে অমূল্য বলেন, ‘‘মাস দেড়েক আগে থেকেই বাঘের মতো দেখতে ওই প্রাণী গ্রামের বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়াচ্ছিল। সন্ধ্যার পর রাস্তাঘাটেও দেখা যেত। আমার পোল্ট্রির আশপাশেও কয়েকবার দেখা গিয়েছে।’’ তিনি জানান, গতকাল সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ তাঁর বাড়ির সামনে বাঘরোল এসেছিল। সকালে ধানখেতে একটি বাঘরোলকে মৃত অবস্থায় পড়ে থাকতে দেখেন। তবে কী তার মৃত্যু হয়েছে জানেন না।
স্থানীয় বাসিন্দা ভরত বল্লভ বলেন, ‘‘সকালে বাড়ির পিছনে ধানখেতে দাদা বাঘরোল মরে পড়ে আছে দেখতে পান। আমরা বাঘরোলের দেহ তুলে সড়কের ধারে নিয়ে যাই।’’ তিনি জানান, মাস দেড়েক ধরে গ্রামের খড়িবন, পান বরজ থেকে কিছু বাঘরোল মাঝেমধ্যে বেরিয়ে আসত। এনিয়ে লোকজনের মধ্যে আতঙ্ক ছিল। তবে বাঘরোল কাউকে আক্রমণ করছে এমনটা শোনা যায়নি।
গ্রামবাসীর একাংশের অভিযোগ, পঞ্চায়েত থেকে আগেই বন দফতরকে জানালে এমন ঘটনা ঘটত না। পঞ্চায়েত সদস্য শিবনাথ জানার অবশ্য দাবি, ‘‘গ্রামে বাঘজাতীয় কোনও কিছু রয়েছে বলে বাসিন্দারা আগে আমাকে জানায়নি। জানালে বন দফতরকে বলতাম। আজ সকালে বাঘরোল মারা যাওয়ার ঘটনার পর বিষয়টি নজরে আসে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy