উজ্জ্বল: বাবা-মায়ের মাঝে আশিস। নিজস্ব চিত্র
বাড়িতে নুন আনতে পান্তা ফুরনোর দশা। কোনও দিন আধপেটা খেয়ে, কোনওদিন ফেনাভাত খেয়েই প্রাথমিক স্কুলে যেতে হত ছেলেটিকে। জঙ্গলমহলের গোয়ালতোড়ের সেই ছেলেই এ বার পড়াশোনার জন্য লন্ডনে যাচ্ছে। লন্ডনের একটি সংস্থা তার পড়াশোনা, থাকা-খাওয়ার যাবতীয় খরচ বহন করবে। আশিস দাস নামে ওই কৃতী ছাত্রটি বলছিল, “লন্ডনে পড়তে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে ভাল লাগছে। আমি গবেষণা করতে চাই।’’
আশিস মেদিনীপুরের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র। লন্ডনে গিয়ে ‘এ-লেভেল’ কোর্সে ভর্তি হবে সে। দু’বছরের এই কোর্সে সফল হলে সেখানকার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোর সুযোগ মিলবে। এই কোর্সে পড়ার খরচ বছরে ৪০ লক্ষ টাকা। সবটাই দেবে লন্ডনের ওই সংস্থা। প্রতি বছর ভারতের পিছিয়ে পড়া এলাকার মেধাবী ছেলেমেয়ের পাশে দাঁড়ায় সংস্থা। এ জন্য পরীক্ষা নেয় তারা। এ বার দেশের ৪টি অঞ্চল থেকে ৪জন করে মোট ১৬ জন সেই পরীক্ষা দিয়েছিল। তার মধ্যে দু’জনকে বাছা হয়েছে। একজন আশিস, অন্যজন উত্তরাখণ্ডের এক ছাত্র।
গোয়ালতোড়ের পাথরপাড়ার বাসিন্দা আশিসের বাবা রঞ্জিত দাস চাষের কাজ করেন। নিজের জমি বলতে বিঘা দেড়েক। তা চষে বহু কষ্টে সংসার চলে। রঞ্জিতবাবু ও তাঁর স্ত্রী মা দিতালীদেবীর দুই ছেলের মধ্যে আশিস ছোট। বড় ছেলে দেবাশিস কলেজে পড়ে। রঞ্জিতবাবু বলছিলেন, ‘‘আশিস ছোট থেকেই পড়াশোনায় ভাল। কিন্তু একেবারে বিদেশ যেতে পারবে ভাবিনি। দারুণ লাগছে।’’
ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মেদিনীপুরের জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ে পড়ছে আশিস। শুরু থেকেই প্রতিটি পরীক্ষায় সে ভাল নম্বর পেয়ে এসেছে। স্কুলে প্রথম হয়েছে। সেই আশিস লন্ডনে গিয়ে পড়াশোনার সুযোগ পাওয়ায় স্কুলের মুকুটেও একটি পালক যুক্ত হল। মেদিনীপুরের এই স্কুলের অধ্যক্ষা শোভনা ঘোষ বলছিলেন, “এই প্রথম আমাদের স্কুলের কেউ উচ্চশিক্ষার জন্য লন্ডনে যাচ্ছে। আমরা সকলেই খুব খুশি।’’
চলতি মাসের ২১ তারিখ লন্ডনে পাড়ি দেবে আশিস। এই সাফল্যের জন্য স্কুলের কাছে কৃতজ্ঞ এই কৃতী ছাত্র। সে বলছে, “স্কুল সব রকম সাহায্য করেছে। না হলে এটা সম্ভব হত না। দিল্লিতে গিয়ে হয়তো পরীক্ষাই দিতে পারতাম না।’’ তাঁর আশা, এই কোর্স শেষে লন্ডনের কোনও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পড়াশোনা করার সুযোগ মিলবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy