Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

পেঁচার প্রাণ বাঁচাতে নদীতে ঝাঁপ টোটোচালকের

কী হল দেখতে টোটো ফেলেই নদীর পাড়ে ছুট লাগালেন রাজু, ভুলু, চন্দন ও গণেশ। নদীতে পড়ে পেঁচাটা তখন হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে বেশিক্ষণ থাকলে পেঁচাটা যে মরে যাবে!

নিশ্চিন্ত-আশ্রয়: উদ্ধারের পর সেই পেঁচা। —নিজস্ব চিত্র।

নিশ্চিন্ত-আশ্রয়: উদ্ধারের পর সেই পেঁচা। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংস্থা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০১:৪৯
Share: Save:

শীতের সকালে হলদি নদীর ধারে মেরিন ড্রাইভে টোটোস্ট্যান্ডে সবে টোটো রেখেছেন রাজু বেরা। হঠাৎই নজরে পড়ল একটি বড় পেঁচাকে তাড়া করছে কাকের দল। প্রাণভয়ে কিছুক্ষণ এদিক ওদিক ওড়ার পর আর না পেরে পেঁচাটি মাঝনদীতে পড়ে গেল। কী হল দেখতে টোটো ফেলেই নদীর পাড়ে ছুট লাগালেন রাজু, ভুলু, চন্দন ও গণেশ। নদীতে পড়ে পেঁচাটা তখন হাবুডুবু খাচ্ছে। কিন্তু এ ভাবে বেশিক্ষণ থাকলে পেঁচাটা যে মরে যাবে!

ইতি উতি না ভেবেই পাড়ে থাকা নৌকায় চেপে বসেন রাজু ও তাঁর সঙ্গীরা। যে ভাবেই হোক পেঁচাটাকে বাঁচাতে হবে। মাঝনদীতে পেঁচাটা তখন একেবারেই কাহিল। নৌকা কাছাকাছি পৌঁছতেই ঠান্ডা উপেক্ষা করেই নদীতে ঝাঁপালেন রাজু। কোনওরকমে পেঁচাটাকে উদ্ধার করলেও দেখা দিল অন্য বিপদ। ভাটার টানে তলিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। বন্ধুকে বাঁচাতে নৌকা থেকে নদীতে কাছি ফেলে দেন সঙ্গীরা। কাছি ধরে নিজেকে রক্ষার পাশাপাশি পেঁচাটাকেও বাঁচিয়েছেন রাজু।

নৌকা পাড়ে আনার পরে একই সঙ্গে পেঁচা ও বন্ধু রক্ষা পাওয়ায় তখন ‘যুদ্ধ’ জয়ের উল্লাস সঙ্গীদের চোখেমুখে। সকালে মেরিন ড্রাইভে হাঁটতে বের হওয়া মানুষজনের ভিড় তখন নদীর পাড়ে। একটা পেঁচাকে বাঁচাতে এ ভাবে জীবন বিপন্ন করায় সকলেই তখন প্রশংসায় ব্যস্ত।

তবে এ সবে কান দেওয়ার সময় ছিল না রাজু ও তাঁর দলবলের। তাঁরা তখন ব্যস্ত পেঁচার শুশ্রূ়ষায়। আগুনে কাপড় গরম করে তা দিয়ে পেঁচার গায়ে সেঁক দিয়ে চলছে তাকে সুস্থ করার চেষ্টা। তাতে হাত লাগিয়েছেন নৌকার মাঝিও। পেঁচাকে বাঁচানোর এমন মানবিক চেষ্টায় মুগ্ধ মাঝি তখন ভাড়া নিতে অপারগ।

তবে এই প্রথম নয়, পাখি বাঁচাতে এর আগেও একাধিকবার এগিয়ে এসেছেন রাজুরা। অনেকেরই পড়াশোনা খুব বেশি দূর এগোয়নি। কিন্তু পরিবেশ রক্ষায় পাখি বাঁচানোর সচেতনতায় তা বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। গোটা হলদিয়া মহকুমায় পাখি বাঁচাতে এঁদের প্রয়াস কারও অজানা নয়। নিজেরাই কাঁপা কাঁপা হরফে নদীর তীরে কাগজে লিখে টাঙিয়েছেন—‘পাখি মারবেন না, পাখি ধরবেন না’। শুধু কাগজেই নয়, পাখি শিকারিদের হাত থেকে পাখি বাঁচাতে টোটো চালানোর ফাঁকে কড়া নজরদারিও রাখেন রাজু, গণেশ, চন্দনরা।

এদিন পেঁচাটা একটু গা ঝাড়া দিতেই স্বস্তির হাসি দেখা গেল রাজু, চন্দন, গণেশ, ভুলুর মুখে। চারজনই বলেন, ‘‘পেঁচাটাকে আক্রান্ত হতে দেখেই ঠিক করি ওকে বাঁচাতে হবে। নদীতে পড়ে যাওয়ার পর নৌকা করে ওর কাছে পৌঁছে যাই।’’ রাজুর কথায়, ‘‘নৌকা থেকে লাফ দিয়ে জলে নেমে ওকে তুলে আনতে গিয়েই বুঝতে পারি ভাটার টানে ভেসে যাচ্ছি। বন্ধুরাই নৌকা থেকে কাছি ফেলে আমাদের বাঁচায়।’’

রাজুদের এমন কর্মকাণ্ড নিয়ে কী বলছে প্রশাসন? পুরসভার নিরাপত্তারক্ষীরা জানান, এ ভাবে বিপদ মাথায় নিয়ে মাঝনদীতে ঝাঁপ দেওয়ায় তাঁরা ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন। স্থানীয় পরিবেশবিদ শিশির আলির মতো স্থানীয়দের অনেকেরই মত, এমন কাজের জন্য রাজুদের পুরস্কৃত করা উচিত।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Haldia Owl হলদিয়া
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE