Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪
Kolaghat Thermal Power Plant

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দুর্ঘটনা, মৃত্যু কর্মীর

 কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তপনের স্ত্রী-মেয়ে। নিজস্ব চিত্র

কান্নায় ভেঙে পড়েছেন তপনের স্ত্রী-মেয়ে। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ০৩ মার্চ ২০২০ ০০:৪৮
Share: Save:

দুর্ঘটনা ঘটে গেল কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে। কর্মরত অবস্থায় ক্রেন থেকে পড়ে গিয়ে মৃত্যু হল এক কর্মীর। মৃতের নাম তপন অধিকারী (৫৮)। তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের দাবি, সম্ভবত ক্রেন থেকে নামার সময় তপন মাথা ঘুরে নীচে পড়ে যান।

তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, তপনের বাড়ি উত্তর ২৪ পরগনার বেলঘরিয়ার কামারহাটির জাগ্রত পল্লিতে। তিনি দীর্ঘদিন ধরে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে একটি সংস্থার টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজার পদে কর্মরত ছিলেন। সোমবার সকাল পৌনে ১০টা নাগাদ সিডব্লিউ পাম্প হাউসে একটি ক্রেনের উপর থেকে কাজের তদারকি করছিলেন তপন। ক্রেন থেকে নেমে আসার সময় প্রায় ১৫ ফুট উচ্চতা থেকে তিনি নীচে পড়ে যান। অন্য শ্রমিকেরা ছুটে আসেন। তপনকে ভর্তি করানো হয় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র উপনগরী হাসপাতালে। পরে মেচেদার একটি নার্সিংহোমে স্থানান্তরিত করা হয় তাঁকে। কিন্তু রক্ত দেওয়ার প্রয়োজন পড়ায় চিকিৎসক তাঁকে তমলুক জেলা হাসপাতালে ‘রেফার’ করেন। বেলা ১২টা নাগাদ সেখানেই মৃত্যু হয় তপনের।

সন্ধ্যায় তমলুক হাসপাতালে আসেন মৃতের স্ত্রী কবিতা অধিকারী ও মেয়ে প্রীতি সাহা। তাঁরা মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার সময় কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের গেটের সামনে তপনকে শেষ শ্রদ্ধা জানান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের শ্রমিকেরা। ছিলেন শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন, শ্রমিক নেতা আব্দুল মান্নান, পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের মেন্টর অসিত মুখোপাধ্যায়।

তপনের মৃত্যুর খবর পেয়ে হাসপাতালেও গিয়েছিলেন যান আব্দুল। তিনি বলেন, ‘‘সওয়া ১০টা নাগাদ দুর্ঘটনাটি ঘটে। কাজ সেরে উনি ক্রেনের মই দিয়ে নামছিলেন। হঠাৎ পড়ে যান। সেফটি ইক্যুপমেন্টস পরে থাকায় ওঁর মাথায় চোট লাগেনি। তবে পা ও পাঁজর ভেঙে গিয়েছিল।’’ কোলাঘাট তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জেনারেল ম্যানেজার কৃষ্ণেন্দু চক্রবর্তীর কথায়, ‘‘খুবই দুর্ভাগ্যজনক ঘটনা। উনি আমাদের প্ল্যান্টে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছিলেন। সম্ভবত মাথা ঘুরে নীচে পড়ে যান। সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ওঁর পরিবারকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।’’

সপ্তাহ খানেক আগে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের এক আধিকারিককে মারধরের অভিযোগ অভিযোগ উঠেছিল শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির তৎকালীন সভাপতি দিবাকর জানা। ওই ঘটনায় তিনি গ্রেফতার হন। তৃণমূল জেলা নেতৃত্ব তাঁকে দল এবং তাপবিদ্যু‌ৎ কেন্দ্রের শ্রমিক সংগঠন থেকে সাসপেন্ডও করেন। কিন্তু এ দিন সাসপেন্ডেড শ্রমিক নেতা দিবাকরকে এ দিন দেখা গিয়েছে জেলা হাসপাতালে। তিনি তপনকে দেখতে গিয়েছিলেন। তাঁর এক অনুগামী সেই ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন এবং দিবাকরকে শ্রমিক নেতা উল্লেখ করে লেখেন, দেহটি যাতে মৃতের পরবারের হাতে দ্রুত তুলে যায়, তার বন্দোবস্ত করেছেন দিবাকর।

এই নিয়ে শুরু হয়েছে বিতর্ক। এ ব্যাপারে শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির খাদ্য কর্মাধ্যক্ষ জয়দেব বর্মন বলেন, ‘‘কেউ কেউ প্রচারের জন্য মৃতদেহের পাশে দাঁড়িয়ে ছবি তুলে ফেসবুকে পোস্ট করছেন। এটাকে পাশে থাকা বলে না। আমরা শহিদ মাতঙ্গিনী পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে সবাই তপন অধিকারীর পরিবারের পাশে রয়েছি। দল যাঁকে সাসপেন্ড করেছে, তাঁর বিষয়ে কিছু বলতে চাই না।’’ একটি ভিডিয়ো বার্তায় দিবাকর অবশ্য এ নিয়ে বলেন, ‘‘তপনের সঙ্গে দীর্ঘদিন কাজ করেছি। উনি একজন ভাল শ্রমিক ছিলেন। আমি সাসপেন্ড হলেও আমার সঙ্গে তাঁর পরিচিতি ছিল। তাই দেখা করাটা অবশ্যই জরুরি ছিল।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Kolaghat Thermal Power Plant Accident Death
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE