Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
চাইলেই মিলছে অ্যাসিড

কোথায় নজরদারি! কাঠগড়ায় পুলিশ

খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতার পরিচয়ের নথি রাখা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে সু্প্রিম কোর্ট। কিন্তু সরকারি স্তরে নির্দেশিকা জারি ছাড়া কার্যত কিছুই হয়নি।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব প্রতিবেদন
তমলুক ও কাঁথি শেষ আপডেট: ১২ জুলাই ২০১৮ ০১:৪৪
Share: Save:

রাজ্যে কোথাও অ্যাসিড হামলার ঘটনা ঘটলে নড়েচড়ে বসে প্রশাসন। তৎপর হয় পুলিশ। অ্যাসিড আক্রান্তকে নিয়ে সচেতনতার প্রচারেও নামতে দেখা গিয়েছে বহু সংগঠনকে। তবু হামলার ঘটনা ক্রমশ বাড়তে থাকায় সেই সচেতনতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।

ইতিমধ্যেই খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতার পরিচয়ের নথি রাখা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে সু্প্রিম কোর্ট। সাম্প্রতিক কালে বেশ কয়েকটি অ্যাসিড হামলার ঘটনায় উদ্বিগ্ন রাজ্য সরকারও অ্যাসিড নিয়ে কড়া পদক্ষেপ নিয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দোকানে অবাধে অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে পুলিশকে নজরদারি রাখার বিষয়ে নির্দেশ দিয়েছেন। যদিও সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ এবং মুখ্যমন্ত্রীর পদক্ষেপের পরেও শহরাঞ্চলে অ্যাসিড বিক্রিতে পুলিশের নজরদারিতে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। জেলাগুলিতেও ছবিটা যে প্রায় একই সেটাই তা জানা গেল পূর্ব মেদিনীপুরে বিভিন্ন মহকুমাশহরে ঘুরে।

দেশ জুড়ে অবাধে অ্যাসিড বিক্রির বিপদের দিকে সুপ্রিম কোর্টের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে জনস্বার্থ মামলা দায়ের করেছিলেন দিল্লির অ্যাসিড আক্রান্ত তরুণী লক্ষ্মী অগ্রবাল। অথচ শহরে তো বটেই জেলাতেও বিভিন্ন দোকানে অ্যাসিড বিক্রিতে কোনও বিধি নিযেধের বালাই নেই। যা নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছে পুলিশেরও একাংশ।

খোলা বাজারে অ্যাসিড বিক্রির ক্ষেত্রে ক্রেতা বা বিক্রেতার পরিচয়ের নথি রাখা বাধ্যতামূলক বলে ঘোষণা করেছে সু্প্রিম কোর্ট। কিন্তু সরকারি স্তরে নির্দেশিকা জারি ছাড়া কার্যত কিছুই হয়নি। রাজ্যের নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রী শশী পাঁজা বলেন, ‘‘অ্যাসিড হানার বিভিন্ন ঘটনায় সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছে জানতে চেয়েছি, হামলাকারীরা কী করে অ্যাসিড পেল! অ্যাসিড বিক্রি রুখতে পারলেই সুরাহা সম্ভব।’’

সমস্যা এইখানেই। মন্ত্রী অ্যাসিড বিক্রি রোখার কথা বললেও তা নিয়ে যাদের তৎপর হওয়া দরকার সেই পুলিশই বিষয়টি নিয়ে তৎপর নয় বলে অভিযোগ উঠেছে। পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুক, কাঁথি মহকুমার বিভিন্ন দোকানে ঘুরে দেখা গিয়েছে সেখানে চাইলেই মিলছে অ্যাসিড। অনেক দোকানদারের যুক্তি ওই সব অ্যাসিড শৌচালয় পরিষ্কারে ব্যবহার হয়। তাই খুব ক্ষতিকারক নয়। যদিও প্রায় সব ধরনের অ্যাসিড বিক্রি নিয়েই নির্দেশিকা রয়েছে সরকারের। অভিযোগ উঠেছে অনেক দোকানে আড়ালে বিক্রি হয় সোনার গয়না তৈরির কাজে ব্যবহৃত নাইট্রিক ও সালফিউরিক অ্যাসিড। কিন্তু তা নিয়ে পুলিশের হেলদোল নেই। এভাবেই সহজে অ্যাসিড মেলায় হামলার ঘটনাও বাড়ছে।

বঙ্গীয় স্বর্ণশিল্পী সমিতির তমলুক মহকুমা শাখার সম্পাদক নারায়ণ মাইতি বলেন, ‘‘তমলুকে সোনার গয়না তৈরির কারখানায় প্রয়োজনীয় অ্যাসিড সরবরাহ করে কয়েকজন ব্যবসায়ী। এঁদের অ্যাসিড বিক্রির লাইসেন্স রয়েছে কিনা খোঁজ নেওয়া হয়নি। তবে আমরা সমিতির তরফে সব গয়না কারিগরদেরই সতর্ক করে দিয়েছি, যেন অপরিচিত কাউকে কোনও অজুহাতেই অ্যাসিড না দেওয়া হয়। তবে প্রশাসনের তরফেও সেভাবে খোঁজ নেওয়া হয় না।’’

জেলা পুলিশের এক কর্তাও তা স্বীকার করে বলেন, ‘‘অ্যাসিড বিক্রির বিরুদ্ধে অভিযান সে ভাবে হয় না। তবে এ নিয়ে আমাদের কাছে অভিযোগ আসেনি।’’ তমলুকের মহকুমা শাসক শুভ্রজ্যোতি ঘোষ বলেন, ‘‘অ্যাসিড বিক্রির জন্য সরকারি নিয়ম মেনে দোকানদারদের লাইসেন্স নিতে হয়। বেআইনিভাবে অ্যাসিড বিক্রি হচ্ছে কিনা এ বিষয়ে আমরা খোঁজ নিচ্ছি।’’

কাঁথি সুপার মার্কেটের এক কীটনাশক বিক্রেতা বলেন, ‘‘আমরা ছোট দোকানদার। খুচরো বিক্রি করি। ফলে সব ক্রেতাদের নাম ধাম লিখে রাখা সম্ভব হয় না।’’ নজরদারি নিয়ে কাঁথি ক্রেতা সুরক্ষা সমিতির সম্পাদক কৃষ্ণপদ পঞ্চাধ্যায়ীর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত এই নিয়ে কেউ কোনও অভিযোগ জানাননি। অভিযোগ এলে বিষয়টি দেখা হবে।’’

জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার ইন্দ্রজিৎ বসু বলেন, ‘‘কয়েকমাস আগে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে সচেতনতায় আমরা প্রচার করেছিলাম। অ্যাসিড বিক্রেতাদের রেজিস্টার রাখতে বলা হয়েছিল। তবে অনেকে দোকানেই তা রাখা হচ্ছে না। শীঘ্রই ফের অভিযান চালানো হবে।’’

এই অবস্থায় জেলায় অবাধে অ্যাসিড বিক্রি নিয়ে কার্যত অন্ধকারেই পুলিশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Acid Tamluk Laxmi Agarwal Vigilance
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE