Advertisement
২০ এপ্রিল ২০২৪

বাড়ি হয়নি, নেতা চাইছেন পাঁচ হাজার, দুয়ারে গিয়ে শুনল প্রশাসন

মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগড় ব্লক থেকে শুরু হল ‘আপনার দুয়ারে প্রশাসন’। মঙ্গলবার ব্লকের নারমা গ্রাম পঞ্চায়েতের মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউট স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওই বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের হাতের কাছে পেয়ে কেউ জানালেন আবেদন।

অভাব-অভিযোগ শুনতে হাজির জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

অভাব-অভিযোগ শুনতে হাজির জেলাশাসক, পুলিশ সুপার। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র

বিশ্বসিন্ধু দে 
নারায়ণগড় শেষ আপডেট: ১২ ডিসেম্বর ২০১৮ ০০:৩২
Share: Save:

কেউ বললেন, ফার্মাসিস্ট আর নার্সদের নিয়ে চলছে স্বাস্থ্যকেন্দ্র। কারও অভিযোগ, আবাস যোজনার বাড়ি অসমাপ্ত। ছবি তুলতে আসেনি কেউ। নেতারা টাকা চাইছেন। এক মহিলা তো আবার মাইক হাতে নিয়ে শৌচাগারের আবেদন জানালেন।

মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন ও জেলা পরিষদের যৌথ উদ্যোগে নারায়ণগড় ব্লক থেকে শুরু হল ‘আপনার দুয়ারে প্রশাসন’। মঙ্গলবার ব্লকের নারমা গ্রাম পঞ্চায়েতের মদনমোহনচক চৌধুরী ইনস্টিটিউট স্কুল প্রাঙ্গণে আয়োজিত ওই বৈঠকে প্রশাসনিক কর্তাব্যক্তিদের হাতের কাছে পেয়ে কেউ জানালেন আবেদন। কেউ প্রকাশ করলেন ক্ষোভ। প্রশাসনকে হাতের কাছে পেয়ে খুশি স্থানীয় বাসিন্দারা। মুক্তাবালা সেন, মমতা বেরা বলেন, ‘‘প্রশাসনকে কাছে পেয়ে আমাদের কথা বলতে পারব ভাবতে পারিনি।’’ তবে পাশাপাশি রয়েছে ক্ষোভও। কারণ, অভিযোগ, ব্লকের একেবারে এক প্রান্তে এই বৈঠক হওয়ায় ব্লকের ১৬টি গ্রাম পঞ্চায়েতের মানুষ অংশ নিতে পারেননি। সরকার লাগাতার প্রচার করছে খোলা জায়গায় মলত্যাগ করবেন না। কিন্তু গ্রামগুলিতে প্রাপকদের অনেকেই তো শৌচাগার পানননি। মহিলাদের মুখে এমনই অভিযোগ শুনতে হয়েছে জেলাশাসক পি মোহন গাঁধী, পুলিশ সুপার অলোক রাজোরিয়া, অতিরিক্ত জেলা শাসক সাধারণ প্রণব বিশ্বাস, মহকুমা শাসক সুদীপ সরকার, বিধায়ক প্রদ্যোৎ ঘোষকে।

শুধু শৌচাগার নয়, বৈঠক থেকে অভিযোগ ওঠে বিধবা ভাতা, স্বাস্থ্যসাথী, জবকার্ড, কাস্ট সার্টিফিকেট, বৈতরণীর মতো পরিষেবা অনেকেই পাচ্ছেন না। কিছু ক্ষেত্রে জেলাশাসক উন্নত পরিষেবার আশ্বাস দিয়েছেন। কিছু ক্ষেত্রে আবার সংশ্লিষ্ট দফতরের আধিকারিকদের ধমক দিয়েছেন তিনি।

প্রত্যন্ত গ্রামে বড়কলংকাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসকের আবেদন জানান আশাকর্মীরা। তাঁদের অভিযোগ, শুধু ফার্মাসিস্ট ও নার্সদের দিয়েই চলছে কেন্দ্রটি। মতিলাল মাইতি অ্যাম্বুল্যান্সের আবেদন জানান।

মদনমোহনচকের বাসিন্দা সন্ধ্যা মল্লিকের স্বামী মারা গিয়েছেন মদের নেশায়। আজ থেকে দু’বছর আগে। সন্ধ্যার আর্জি, ‘‘স্বামীকে হারিয়েছি। অনেকেই নেশাগ্রস্ত হচ্ছে। মদের ঠেক ভাঙতে হবে।’’

এ দিন অবশ্য বৈঠক চলাকালীন আবগারি দফতরের পক্ষ থেকে মদের ঠেকটি ভেঙে দেওয়া হয়। জেলাশাসক বলেন, ‘‘ প্রশাসন শুধু ঘরে বসে থাকবে না। আপনাদের পাশে এসে আপনাদের কথা শুনে পরিষেবা পৌঁছে দেওয়ার চেষ্টা করবে। তার জন্যই এই কর্মসূচি।’’

কিছু কিছু প্রশ্নে অস্বস্তিতে পড়তে হয়েছে প্রশাসনকে। বড় কলংকাই গ্রামের অনু কোটাল বলেন, ‘‘আবাস যোজনার বাড়ি জানলা পর্যন্ত হয়ে পড়ে আছে। কেউ ছবি তুলতে আসেনি। নেতারা বলে পাঁচ হাজার লাগবে। গরিব মানুষ কোথায় পাব? একটু দেখবেন, স্যার।’’ কথা শুনে জেলা শাসক বিডিও মানিকসিংহ মহাপাত্রকে নির্দেশ দেন সাতদিনের মধ্যে কাজ করে দিতে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Narayangarh Administration
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE