Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

বিজ্ঞান পড়ার হিড়িক, ভর্তি-সঙ্কট একাদশে

মাধ্যমিকের ফল ভাল হয়েছে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের পালা। ভাল ফল করা পড়ুয়ারা সকলেই চায় একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে। আর সেটাই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এ বছরও সারা রাজ্যে পাশের হারে সকলকে টেক্কা দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। আর সে হিসাবে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বেশি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ২৪ মে ২০১৫ ০১:০৭
Share: Save:

মাধ্যমিকের ফল ভাল হয়েছে। এ বার উচ্চ মাধ্যমিকের পালা।

ভাল ফল করা পড়ুয়ারা সকলেই চায় একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনা করতে। আর সেটাই সমস্যার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

এ বছরও সারা রাজ্যে পাশের হারে সকলকে টেক্কা দিয়েছে পূর্ব মেদিনীপুর। আর সে হিসাবে প্রথম বিভাগে উত্তীর্ণ ছাত্রছাত্রীর সংখ্যাও বেশি। ফলে ভর্তি নিতে গিয়ে হিমসিম স্কুল কর্তৃপক্ষ। এই প্রবণতা সব থেকে বেশি জেলা সদর তমলুক, কাঁথি, হলদিয়ার শহরাঞ্চলে। নামী স্কুলের বিজ্ঞান বিভাগে ছাত্র ভর্তি নিয়ে উদ্বেগের শেষ নেই শিক্ষক থেকে অভিভাবক— সকলেরই।

বিজ্ঞান বিভাগে আসন সংখ্যা তুলনায় কম থাকায় বেশিরভাগ স্কুল ভর্তির আবেদনের ক্ষেত্রেই বেঁধে দিয়েছে ন্যূনতম নম্বরের সীমা। কিন্তু তারপরেও জেলার স্কুলগুলিতে মাধ্যমিক উত্তীর্ণদের সবাইকে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি নেওয়া যাবে কি না, সে বিষয়ে সংশয় রয়েছে।

জেলা শিক্ষা দফতরের হিসেব অনুযায়ী, পূর্ব মেদিনীপুরে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক মিলিয়ে মোট স্কুলের সংখ্যা ৬৩৯। এর মধ্যে ৩৯৮টি উচ্চ মাধ্যমিক, ২৬টি জুনিয়ার হাইস্কুল ও ২২৮টি আপার প্রাইমারি স্কুল রয়েছে। মাধ্যমিক, উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের মধ্যে ২২টি শুধুমাত্র ছেলেদের ও ১৪০টি মেয়েদের স্কুল রয়েছে। ফলে মাধ্যমিক উত্তীর্ণ পড়ুয়াদের তুলনায় একাদশে পড়ানোর স্কুলের সংখ্যা অনেকটাই কম। তার উপর রয়েছে পছন্দের বিষয় পড়তে চাওয়ায় মৌলিক অধিকার।

যদিও জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ মামুদ হোসেন বলেন, ‘‘পরিস্থতির কথা বিবেচনা করে এ বছরই ১২ টি মাধ্যমিক স্কুলকে উচ্চ মাধ্যমিকে উন্নীত করা হয়েছে। ফলে জেলায় উচ্চ মাধ্যমিক স্কুলের সংখ্যা বেড়ে ৪১০ হয়েছে। তাই জেলায় একাদশ শ্রেণিতে ভর্তির ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না বলেই আশা।’’ তবে তিনি স্বীকার করেছেন জেলার বেশ কিছু নামী স্কুলে পছন্দের বিষয়ে ভর্তির জন্য ছাত্রছাত্রীদের বাড়তি আগ্রহ থাকায় সেখানে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। উদ্বেগ যে শুধু পড়ুয়াদের তাই নয়। ভর্তি নিয়ে চিন্তায় বিভিন্ন স্কুল কর্তৃপক্ষ।

সেখানে নিজের স্কুলের ভাল ছাত্রদের ভর্তি নেওয়া হবে, নাকি অন্য মেধাবীদের ঠাঁই দেওয়া হবে, তাই নিয়েই চিন্তিত শিক্ষকরা। আবার নিজেদের স্কুলের সব ছাত্রকে তাদের পছন্দ মতো বিষয়ে ভর্তি নেওয়া যাচ্ছে না অনেক ক্ষেত্রেই। তাই স্কুলের ভাল ফলে খুশি যত হয়েছেন তারচেয়ে বেশি চিন্তায় পড়েছেন প্রধান শিক্ষকেরা।

ধরা যাক তমলুক শহরের হ্যামিল্টন হাইস্কুলের কথা। ১৯৫ জন উত্তীর্ণ ছাত্রের মধ্যে প্রথম বিভাগে পাশ করেছে ১৪৪ জন। স্টার পেয়েছে ৯৫ জন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সোমনাথ মিশ্র জানালেন, একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৯০টি আসন রয়েছে। কলা আসন রয়েছে বিভাগে ৬০ টি ও বৃত্তিমূলক বিভাগে ৫০টি।

এখন ৯৫ জন স্টার পাওয়া ছাত্ররা সকলেই বিজ্ঞান পড়তে চাইলে তাদের ঠাঁই হবে না নিজের স্কুলে। সোমনাথবাবু বলেন, ‘‘বাইরের স্কুল থেকে মেধার ভিত্তিতে ১০-১৫ জনের বেশি ছাত্রকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু আবেদন জমা পড়ছে অনেক বেশি। তাই ন্যূনতম ৬২৫ নম্বর ও বিজ্ঞান বিভাগে ৮৫ শতাংশ পেলে সরাসরি ভর্তির ব্যবস্থা করেছি।’’

তমলুক শহরের পাশাপাশি জেলার ব্লক সদর ও প্রত্যন্ত এলাকার উচ্চ মাধ্যমিক স্তরের নামী স্কুল গুলোরও একই ছবি। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তির সমস্যা নিয়ে পাঁশকুড়া শহরের ব্রাডলি বারট হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক বনমালী সামন্ত বলেন, ‘‘আমাদের স্কুলে বিজ্ঞান বিভাগে ১০০ টি আসন রয়েছে। আমাদের স্কুলেরই এবার ৭৬ জন ছাত্রছাত্রী প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। ফলে ব্লকের অন্যান্য স্কুলের অনেক ছাত্র-ছাত্রী এখানে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হতে চাইলেও সুযোগ দিতে পারছি না।’’ জেলার আরেক নামী স্কুল কোলাঘাটের প্রত্যন্ত এলাকায় থাকা বৈষ্ণবচক মহেশচন্দ্র উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুবর্ণ হাজরা বলেন, ‘‘একাদশ শ্রেণিতে বিজ্ঞান বিভাগে ৪৫টি আসন রয়েছে। হস্টেলের সুবিধা থাকায় আমাদের স্কুলে হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনার ছাত্ররাও আসে। এ বার মাধ্যমিকে আমাদের স্কুলের ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে ৪৭ জন প্রথম বিভাগে পাশ করেছে। ফলে সবাইকে বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি নেওয়া সম্ভব নয়।’’

ময়নার চংরাচক জগদীশ স্মৃতি বিদ্যাপীঠের পরিচালন সমিতির সম্পাদক মৃণাল সামন্ত বলেন ‘‘পরিকাঠামোগত সমস্যার সমাধান করে পড়ার সুযোগ বৃদ্ধি করতে হবে।’’ অন্যদিকে অনেক স্কুলেই উচ্চ মাধ্যমিকের অনুমোদন থাকলেও শিক্ষকের অভাবে পড়াশোনা ঠিকমত হয় না। ফলে মাধ্যমিকের পরে পড়ুয়ারা অন্য স্কুলে চলে যেতে চায়। সেক্ষেত্রেও ভর্তির সমস্যা হচ্ছে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE