Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

বিয়ে রুখলেও স্কুল যাওয়া বন্ধ কন্যার 

পড়াশোনা করবে বলেই নিজের বিয়ে ভেঙেছিল এক ষোড়শী। বিয়ে রুখেছে। আর বিয়ে রোখার ‘শাস্তি’ও পেতে হচ্ছে গড়বেতার সুনীতা রুইদাসকে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুনীতার স্কুলে যাওয়াটাই অনিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিকেয় উঠেছে পড়াশোনা।

রূপশঙ্কর ভট্টাচার্য
গড়বেতা শেষ আপডেট: ১৬ নভেম্বর ২০১৮ ০৩:০২
Share: Save:

পড়াশোনা করবে বলেই নিজের বিয়ে ভেঙেছিল এক ষোড়শী। বিয়ে রুখেছে। আর বিয়ে রোখার ‘শাস্তি’ও পেতে হচ্ছে গড়বেতার সুনীতা রুইদাসকে। সপ্তম শ্রেণির ছাত্রী সুনীতার স্কুলে যাওয়াটাই অনিয়মিত হয়ে দাঁড়িয়েছে। শিকেয় উঠেছে পড়াশোনা।

গত ৩ জুন বিয়ে ভাঙার পর থেকে হাতে গোনা কয়েকটা দিন স্কুলে যেতে পেরেছে গড়বেতার উমাদেবী বালিকা বিদ্যালয়ের বিদ্যালয়ের এই ছাত্রী। কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, যাবতীয় আয়োজনের পরেও বিয়েটা বন্ধ হয়ে যাওয়ায় পড়শিদের নানা কুকথা শুনতে হয়েছে সুনীতাকে। অনেকে বলেছে, ‘ওই মেয়ের নিশ্চয়ই কারও সঙ্গে সম্পর্ক আছে। তাই নিজেই বিয়ে ভেঙেছে।’ সুনীতার মা তপতী রুইদাস বলছিলেন, ‘‘বিয়ে বন্ধ হওয়ার পরে টানা এক মাস মেয়েটা স্কুলেই যেতে পারেনি। কখনও আত্মীয়রা, কখনও পড়শিরা নানা কথা বলেছে। লজ্জায় মেয়ে ঘর থেকে বেরোতে পারত না।’’ অবস্থা এমন দাঁড়ায় যে সুনীতাকে তিন কিলোমিটার দূরে এক আত্মীয়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেন মা। কিন্তু সেখান থেকে স্কুল অনেকটা দূরে। ফলে, সমস্যা থেকেই গিয়েছে।

পশ্চিম মেদিনীপুরের গড়বেতার গনগনিতে বাড়ি সুনীতার। বাবা সুজিত রুইদাস ছিলেন দিনমজুর। স্ত্রী, এক ছেলে, দুই মেয়েকে নিয়ে কোনওরকমে সংসার চালাতেন তিনি। বড় মেয়ের বিয়ে দিয়েছিলেন প্রাপ্তবয়স্ক হওয়ার পরেই। কিন্তু কিছু দিন আগে পারিবারিক অশান্তিতে বিষ খেয়ে আত্মহত্যা করেন সুজিত। সংসারের ভার এসে পড়ে তপতীর কাঁধে। তিনি মানছেন, ‘‘অভাবের সংসার। তাই ভাল ছেলে দেখে মেয়ের বিয়ের ব্যবস্থা করেছিলাম।’’ রুখে দাঁড়ায় সুনিতাই। শেষে প্রশাসনিক হস্তক্ষেপে বিয়ে বন্ধ হয়।

কিন্তু শুধু বিয়ে রোখাই তো প্রশাসনের কাজ নয়! যে কারণে বিয়ে রোখা, সেই পড়াশোনা ঠিকঠাক হচ্ছে কিনা, নাবালিকা স্কুলে যাচ্ছে কিনা, সেটা দেখাও জরুরি! ব্লক প্রশাসনের দাবি, খোঁজ নিতে গিয়ে সুনিতার অনিয়মিত স্কুলে যাওয়ার কথা জানা যায়। তারই মধ্যে স্কুলে পুজোর ছুটি পড়ে যায়। ফলে, জট কাটেনি।

আরও পড়ুন: নাবালিকার বিয়ে আটকাচ্ছে মাদ্রাসার ছাত্রীদের মীনা মঞ্চ

সুনীতা বলছিল, ‘‘বিয়ে বন্ধ হওয়ায় অনেকে বাজে কথা বলে। ঘর থেকে বেরোতাম না। ৩ কিলোমিটার দূরে আমলাগোড়ায় আত্মীয়ের বাড়িতে
চলে যাই। সেখান থেকে রোজ স্কুলে যাওয়া যায় না।’’ পুজোর ছুটির পরে নিয়মিত স্কুলে না গেলে পরীক্ষা দেওয়া কঠিন বলেও জানায় সে। সপ্তম শ্রেণির ওই ছাত্রীর একটাই চাওয়া— নিয়মিত স্কুলে যাওয়া আর পড়াশোনাটা করা।পঞ্চায়েত-প্রশাসন অবশ্য আশ্বাস দিচ্ছে। গড়বেতা ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি তথা তৃণমূলের ব্লক সভাপতি সেবাব্রত ঘোষ বলেন, ‘‘নানা কারণে মেয়েটির পড়াশোনায় সমস্যা হয়েছে। ওকে নিয়মিত স্কুলে পাঠানোর ব্যবস্থা করছি।’’ সুনীতা যাতে বাড়িতে থেকে স্কুলে যেতে পারে সেই ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান ব্লক সমাজকল্যাণ আধিকারিক রঞ্জন বাস্কে। আর সুনীতার স্কুলের প্রধান শিক্ষিকা রাঙাজবা চৌধুরীর বলেন, ‘‘ওই ছাত্রীর পড়াশোনার জন্য সমস্ত সাহায্য করতে আমরা প্রস্তুত।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Student Education Minor Child marriage Garbeta
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE