তখন খুঁটিতে কালীপদবাবুকে বেঁধে চলছে মারধর। — নিজস্ব চিত্র।
সঞ্চয়ের অর্থ ফেরতের দাবিতে বিভিন্ন অর্থলগ্নি সংস্থার এজেন্টের বাড়ির সামনে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন আমানতকারীরা। এজেন্টকে ঘেরাও করে রাখার ঘটনাও ঘটেছে। এ বার বাড়ি থেকে জোর করে ধরে এনে এক বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্টকে একটি খুঁটিতে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধরের অভিযোগ উঠল তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য সহ দলীয় সমর্থকদের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার সকালে হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে তমলুক থানার পাইকপাড়ী গ্রামে এই ঘটনায় ব্যাপক উত্তেজনা ছড়ায়। স্থানীয় বাসিন্দাদের থেকে খবর পেয়ে তমলুক থানার পুলিশ গিয়ে কালীপদ বেরা নামে ওই এজেন্টকে উদ্ধার করে। কালীপদবাবু পাইকপাড়ী গ্রামের তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব সামন্ত, তাঁর ভাই সহদেব সামন্ত-সহ ছ’জনের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনার অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, তমলুক থানার কাঁকটিয়া বাজারের কাছে পাইকপাড়ী গ্রামের বাসিন্দা কালীপদবাবু একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট হিসেবে কাজ করতেন। ২০১৩ সালের সারদা কাণ্ডের পরেই ওই লগ্নি সংস্থার অফিস বন্ধ হয়ে যায়। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮ টা নাগাদ স্থানীয় তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব সামন্ত ওই সংস্থার আমানতকারীদের একাংশ ও কয়েকজন গ্রামবাসীকে নিয়ে কালীপদবাবুর বাড়িতে যান বলে অভিযোগ। কালীপদবাবুর কাছে গ্রামবাসীরা আমানতের টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে তাঁদের মধ্যএ বচসা শুরু হয়। অভিযোগ, তারপরই কালীপদবাবুকে জোর করে বাড়ি থেকে বের করে কিছুটা দুরেই হলদিয়া-মেচেদা রাজ্য সড়কের ধারে নিয়ে আসা হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, সড়কের ধারে থাকা একটি খুঁটির সঙ্গে কালীপদবাবুকে দড়ি দিয়ে বেঁধে মারধর করা হয়। কালীপদবাবুর বাড়ির লোকেরা ছাড়াতে গেলে তাঁদের তাড়িয়ে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। পরে পুলিশ গিয়ে কালীপদবাবুকে উদ্ধার করে। কালীপদবাবুর অভিযোগ, ‘‘আমি একটি বেসরকারি লগ্নি সংস্থার (ইনফিনিটি রিয়েলকন লিমিটেড) এজেন্ট হিসেবে কিছুদিন কাজ করেছিলাম। তবে ওই সংস্থার আমানতকারীদের মধ্যে জয়দেববাবু ছিলেন না। টাকা ফেরত দেওয়ার অজুহাতে এ দিন সকালে জয়দেববাবু ও তাঁর ভাই সহদেব-সহ কয়েকজন বাড়িতে গিয়ে টাকা ফেরতের দাবি তুলে জোর করে ধরে নিয়ে আসে।’’ তাঁর আরও অভিযোগ, ‘‘বিদ্যুতের খুটিতে দড়ি দিয়ে বেঁধে জয়দেববাবুর সামনেই তাঁর ভাই সহদেব গ্রামবাসীদের একাংশকে নিয়ে আমাকে মারধর করে।’’
কালীপদবাবুর অভিযোগ, ‘‘গ্রাম কমিটির সদস্য হিসেবে আমি জয়দেববাবুদের বিভিন্ন অনৈতিক কাজের প্রতিবাদ করি। তার জেরেই আক্রোশবশত এ দিন পরিকল্পিতভাবে টাকা ফেরতের অজুহাতে জয়দেববাবু দলের লোকেদের নিয়ে আমার উপর আক্রমণ করে।’’ এ বিষয়ে তৃণমূল পঞ্চায়েত সদস্য জয়দেব সামন্ত বলেন, ‘‘বেসরকারি লগ্নি সংস্থার এজেন্ট কালীপদবাবুর মাধ্যমে গ্রামের অনেক বাসিন্দা জমিজমা বিক্রি করে অনেক টাকা জমা রেখেছিলেন। ওই গ্রামবাসীরা বারবার টাকা ফেরত চেয়েও না পাওয়ায় দিন কালীপদবাবুর বাড়িতে গিয়েছিলেন।’’
জয়দেববাবুর দাবি, ‘‘গ্রামবাসীরাই কালীপদবাবুকে বাড়ি থেকে ধরে নিয়ে এসে একটি খুটিতে বেঁধে আটকে রেখে আমাকে ডেকেছিলেন। সেই সময় গ্রামবাসীরা উত্তেজিত হয়ে কালীপদবাবুকে মারধরও করেন। আমি সেখানে গিয়ে কালীপদবাবুকে উদ্ধারের জন্য পুলিশকে খবর দিয়েছিলাম।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘কালীপদবাবুর বাড়িতে আমার যাওয়ার ও মারধরে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ ভিত্তিহীন। আমানতকারীদের জমা দেওয়া টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে না পেরে উনি এখন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছেন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy