Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুরভোটে জমি ছাড়তে নারাজ বিক্ষুব্ধ প্রার্থীরা

পুরভোটে প্রার্থী হতে না পেরে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলেরই বিক্ষুব্ধদের একাংশ নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আগেই। বিক্ষুব্ধদের নিরস্ত করতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য তাঁদের বোঝাতে মাঠে নেমেছিলেন খোদ জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের সেই চেষ্টা মাঠেই মারা গিয়েছে।

আনন্দ মণ্ডল
তমলুক শেষ আপডেট: ৩০ মার্চ ২০১৫ ০১:২০
Share: Save:

পুরভোটে প্রার্থী হতে না পেরে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলেরই বিক্ষুব্ধদের একাংশ নির্দল প্রার্থী হিসেবে লড়াইয়ের জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন আগেই। বিক্ষুব্ধদের নিরস্ত করতে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য তাঁদের বোঝাতে মাঠে নেমেছিলেন খোদ জেলা নেতৃত্ব। কিন্তু তাঁদের সেই চেষ্টা মাঠেই মারা গিয়েছে। পাঁচজন বিক্ষুব্ধ প্রার্থীর কাউকে দিয়েই মনোনয়ন প্রত্যাহার করতে পারলেন না জেলা তৃণমূল নেত্ৃত্ব। ফলে তমলুক পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে পাঁচটি ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ময়দানে থাকছেন দলেরই বিক্ষুব্ধ নির্দল প্রার্থীরা।

জেলা নির্বাচন দফতর ও দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০ আসনের তমলুক পুরসভায় এ বার তৃণমূল এককভাবে প্রতিটি আসনে লড়ছে। অন্য দিকে বিরোধী বামফ্রন্টের মধ্যে সিপিএম ১১ টি আসনে, সিপিআই ৪ টি আসনে, আরএসপি একটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। বাকি চারটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে বামফ্রন্ট। অন্য দিকে বিজেপি ১৬ টি আসনে দলীয় প্রার্থী দিয়ে লড়াই করছে। বাকি চারটি আসনে নির্দল প্রার্থীকে সমর্থন করছে বিজেপি। এছাড়াও কংগ্রেস ১০ টি আসনে প্রার্থী, ভারত নির্মাণ পার্টি সাতটি আসনে ও এসইউসি তিনটি আসনে প্রার্থী দিয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন ওয়ার্ডে বেশ কয়েকজন নির্দল প্রার্থী রয়েছেন। সব মিলিয়ে পুরসভার ২০ টি ওয়ার্ডে মোট প্রার্থী সংখ্যা ৮৫ জন।

এ বার পুরসভার নজর কেড়েছে ২০ টি ওয়ার্ডের মধ্যে অন্তত পাঁচটি আসনে তৃণমূল প্রার্থীর বিরুদ্ধে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধ প্রার্থীদের লড়াই। আর পুরসভার ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে লড়াই হচ্ছে সেখানে খোদ বিদায়ী পুরপ্রধানের বিরুদ্ধে নির্দল প্রার্থীর। যাঁকে সমর্থন করেছে বামফ্রন্ট ও বিজেপি দু’পক্ষই। তমলুকের পুরভোটে আরেকটি উল্লেখযোগ্য বিষয় হল পুরসভার এক তৃতীয়াংশ আসন মহিলাদের জন্য সংরক্ষিত হলেও ২০ টি ওয়ার্ডে মোট ৮৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ৩৭ জন মহিলা প্রার্থী পুরভোটে লড়াই করছেন। অর্থাৎ মোট প্রার্থীর এক তৃতীয়াংশের চেয়ে বেশি মহিলা প্রার্থী রয়েছেন।

দলীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, শনিবার তৃণমূল প্রার্থীদের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো দলের বিক্ষুব্ধদের বুঝিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহার করানোর জন্য জরুরি ভিত্তিতে দলের দুই বিধায়ক-সহ জেলা ও পুরসভার বেশ কয়েকজন তৃণমূল নেতাদের নিয়ে আট সদস্যের একটি দল তৈরি করা হয়েছিল। কিন্তু অধিকাংশ বিক্ষুদ্ধ প্রার্থী তৃণমূলের ওই সদস্যদের কাছে দলীয় প্রার্থী নির্বাচন করা নিয়ে তাঁদের ক্ষোভ জানানোর পাশাপাশি নানা শর্ত আরোপ করেন বলে খবর। ফলে দলের ওই বিক্ষুব্ধদের বাগে আনা আরও মুশকিল হয়ে ওঠে। এমনকি পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী তথা বিদায়ী উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়ের বিরুদ্ধে দাঁড়ানো নির্দল প্রার্থী অনিমেষ মিশ্র এক তৃণমূল নেতার সঙ্গে গাড়িতে চেপে শনিবার জেলাশাসকের অফিসে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের জন্য এলেও তাঁর অনুগামীদের চাপে ফের ফিরে যান। ফলে শেষ পর্যন্ত পুরসভার পাঁচটি ওয়ার্ডে নির্দল প্রার্থী হিসেবে দাঁড়ানো তৃণমূলের বিক্ষব্ধদের বুঝিয়ে মনোনয়ন প্রত্যাহারের চেষ্টায় সফল হয়নি জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। অনিমেশবাবুর কথায়, “এলাকার বাসিন্দাদের দাবি মেনেই আমি প্রার্থী হয়েছি। তৃণমূল সমর্থকরাই আমাকে দাঁড় করানোর জন্য উদ্যোগী হয়েছিলেন।”

পুরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূল প্রার্থী তথা ১২ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী কাউন্সিলর সুব্রত রায়ের সঙ্গে লড়াই হচ্ছে খোদ ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের বিদায়ী তৃণমূল কাউন্সিলর তথা এবারের নির্দল প্রার্থী জয়া দাস নায়কের। এছাড়াও পুরসভার ৩, ৬, ১৫ ও ১৮ নম্বর ওয়ার্ডে তৃণমূলের বিক্ষুব্ধরা নির্দল প্রার্থী হয়ে লড়াইয়ে রয়েছেন।

আর এই ঘটনায় স্বভাবতই বিব্রত জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব। বিক্ষুব্ধদের বোঝানোর দায়িত্বে থাকা দলের সদস্য তথা তমলুকের প্রাক্তন পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেনের কথায়, “আমরা ওদের প্রত্যেকের কাছে গিয়ে বোঝানোর জন্য চেষ্টা করেছি। কিন্তু ওঁদের কেউ মনোনয়ন প্রত্যহার করেননি। এরপরও যাতে আমাদের দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধ লড়াই থেকে সরে এসে তাঁরা দলীয় প্রার্থীদের সমর্থনে প্রচারে নামেন, তার জন্য আমরা ফের বোঝাবো।” তবে তৃণমূলের তমলুক শহর সভাপতি দিব্যেন্দু রায় বলেন, “দলের প্রার্থীদের বিরুদ্ধে যাঁরা নির্দল হয়ে দাঁড়িয়েছেন তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য দলের জেলা শ্ৃঙ্খলা কমিটির কাছে অভিযোগ জানিয়েছি। ওই কমিটিই ব্যবস্থা করবে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE