Advertisement
১৬ এপ্রিল ২০২৪

জ্বরে মৃত্যু, অভিযোগ গাফিলতির 

রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। যার জেরে প্রায় সারা রাত উত্তপ্ত রইল কাঁথির মাজনা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি নামাতে হল কমব্যাট ফোর্সও। 

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কাঁথি শেষ আপডেট: ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৮ ০০:৫৬
Share: Save:

রোগীর মৃত্যুতে চিকিৎসায় গাফিলতির অভিযোগ। যার জেরে প্রায় সারা রাত উত্তপ্ত রইল কাঁথির মাজনা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশের পাশাপাশি নামাতে হল কমব্যাট ফোর্সও।

পুলিশ এবং স্থানীয় সূত্রে প্রকাশ, মাজনা মুকুন্দপুরের বাসিন্দা সাবিত্রী দাস অধিকারী (৪৫) নামে এক মহিলাকে শুক্রবার সকাল ১১টা নাগাদ জ্বর শরীরে মাজনা ব্লক প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়। কিন্তু সেখানে ক্রমশ তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হয় সাবিত্রীদেবীর পরিবারের অভিযোগ। তাঁর ছেলে জয়দেব দাস অধিকারীর বলেন, “আমরা বারবার কর্তব্যরত চিকিৎসক ও নার্সকে এ বিষয়ে জানাই। কিন্তু তাঁরা গুরুত্ব দেননি।’’

সাবিত্রীদেবীর মেয়ে শিউলি পণ্ডার দাবি, “মায়ের শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। আমরা চিকিৎসককে বলি। তিনি জানান, ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু রাত আটটা নাগাদ ওই চিকিৎসকের ডিউটি শেষের পরে যে নতুন চিকিৎসক আসেন, তিনি মাকে কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে রেফার করে দেন।’’ পরিবারের দাবি, নতুন চিকিৎসক রোগীর অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছিলেন। কিন্তু কাঁথি মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার আগেই রাত ৯টা নাগাদ সাবিত্রীদেবী মারা যান।

এর পরেই মৃতার পরিবার এবং পরিজন চিকিৎসার গাফিলতির অভিযোগ তুলে বিক্ষোভ দেখান। রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁরা গ্রামের বাসিন্দাদের নিয়ে স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ভিড় জমান। দাবি ওঠে, ওই চিকিৎসককে প্রকাশ্যে ক্ষমা চাইতে হবে। সাবিত্রীদেবীর স্বামী গৌতম দাস অধিকারী বলেন, “পুরনো চিকিৎসক রোগীর অবস্থা বুঝতেই পারেনি। আগে রেফার করলে হয়তো আমার স্ত্রীকে বাঁচানো যেত।’’ গ্রামবাসীরা দাবি করেন, এমন ঘটনা যাতে আর না ঘটে, তার জন্য ওই চিকিৎসককে উপযুক্ত শাস্তি দিতে হবে।

স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভাঙচুর হতে পারে, এই আশঙ্কায় সওয়া ১০টার দিকে কাঁথি থানার আই সুনয়ন বসুর নেতৃত্বে বিরাট পুলিশ বাহিনী ঘটনাস্থলে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে কাঁথি-১ পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি প্রদীপ গায়েনও ঘটনাস্থলে গিয়ে উত্তেজিত জনতাকে বোঝানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু তাতেও বিক্ষোভ না কমায় রাত সাড়ে ১১টা নাগাদ স্বাস্থ্য কেন্দ্রে যায় কমব্যাট ফোর্স। প্রায় ২টো আড়াইটে নাগাদ পরিস্থিত স্বাভাবিক হয়।

পুলিশ জানিয়েছে, মৃতের পরিবার কাঁথি থানায় বা স্বাস্থ্য কেন্দ্র কর্তৃপক্ষের কাছে কোনও লিখিত অভিযোগ জানানো হয়নি। দেহ ময়নাতদন্তেও পরিবার রাজি হয়নি।

তবে তাঁদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন স্বাস্থ্যকেন্দ্র কর্তৃপক্ষ। ওই কেন্দ্রের ব্লক মেডিক্যাল স্বাস্থ্য আধিকারিক অরূপরতন করণ বলেন, “জ্বর এবং ডায়েরিয়া নিয়ে ওই মহিলাকে ভর্তি করানো হয়েছিলেন। তিনি সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত ঠিক ছিলেন। কিন্তু তারপর রক্তচাপ কমতে শুরু করে।’’ অরূপবাবুর কথায়, ‘‘ওই সময় স্বাস্থ্য কেন্দ্রের তরফে রোগীর পরিজনকে কিছু পরীক্ষার কথা বলা হয়েছিল। কিন্তু তাঁরা সেই সব পরীক্ষার রিপোর্ট দিতে দেরি করেন। তবে তার চেয়েও বড় কথা, আমরা মৃত্যুর পর রোগীর কিছু পরিজনের কাছ থেকে জেনেছি, সাবিত্রীদেবীর হৃদযন্ত্রের অসুখ ছিল। প্রাথমিকভাবে অনুমান, হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Medical negligence Contai
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE