অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী শ্যামলী মাহাতো মাত্র ২৯ সেকেন্ডে ৯ জন শিশুর মধ্যে নিজের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির চামেলিকে স্পর্শ করে চিনে নিয়ে প্রথম হন। প্রতীকী ছবি।
ছোঁয়ার মধ্যেই লুকিয়ে থাকে ভালবাসার ওম! সন্তান মাকে ছুঁয়ে চিনতে পারার মধ্যেই তো রয়েছে নাড়ির টান। শুক্রবার শিরষি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলল এমনই ছুঁয়ে চিনে নেওয়ার পালা।
সার সার পাতা চেয়ারে চোখ বুজে বসে রয়েছে জনা দশেক খুদে পড়ুয়া। পিছনে চোখ বাঁধা মায়েরা এসে ছুঁয়ে দেখছেন সন্তানদের। সামনেই বসে বিচারকেরা। মায়েদের ইশারায় বুঝিয়ে দিতে হচ্ছে কোন সন্তান তাঁর। একই সঙ্গে পিছন দিক থেকে পাওয়া স্পর্শ বুঝে মাকে চিনে নিতে হচ্ছে সন্তানদেরও। শীতের প্রাক-সন্ধ্যায় এমন মজাদার ‘স্পর্শ প্রতিযোগিতা’ দেখতে ভিড় করেছিলেন গ্রামের ছেলেবুড়োরা।
ঝাড়গ্রাম ব্লকের গড়শালবনি অঞ্চলের জঙ্গলেঘেরা প্রত্যন্ত গ্রামের নাম শিরষি। অধিকাংশ বাসিন্দা চাষাবাস নয়তো দিনমজুরি করে সংসার চালান। সংসারের প্রয়োজনে শ্যামলী মাহাতোর মতো অভিভাবক ভিন গাঁয়ের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রে কাজ করেন। আবার তরুলতা মাহাতো, ছবি মাহাতোর মতো মায়েরা সংসারের প্রয়োজনে ছাগল চরানো, ধান লাগানো, ধান কাটার কাজেও হাত লাগান।
এ দিন থেকে শিরষি স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্যোগে শুরু হয়েছে তিনদিনের শিশু উৎসব। সেখানেই আয়োজন করা হয়েছিল এই স্পর্শ উৎসবের। কিন্তু হঠাৎ এমন প্রতিযোগিতা কেন? স্কুলের সহশিক্ষক আশিস সরকার জানালেন, গ্রামাঞ্চলেও এখন রুজিরুটির তাগিদে মায়েরাও সংসারের হাল ধরছেন। তার মধ্যেও নিজের সন্তানকে পরিচর্যা করছেন তাঁরা। মা ও শিশুর পারস্পরিক নিবিড় সম্পর্ককে আরও নিবিড় করে তোলার উদ্দেশ্যেই এই প্রতিযোগিতার আয়োজন। স্কুলের টিচার-ইনচার্জ হিমাংশুশেখর মাহাতো, সহশিক্ষিকা দীপালি হাঁসদা জানাচ্ছেন, ৯ জোড়া মা-শিশুর মধ্যে সাত জোড়া মা ও শিশু স্পর্শ করে নিজেদের চিনতে পেরেছেন। অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী শ্যামলী মাহাতো মাত্র ২৯ সেকেন্ডে ৯ জন শিশুর মধ্যে নিজের মেয়ে তৃতীয় শ্রেণির চামেলিকে স্পর্শ করে চিনে নিয়ে প্রথম হন।
এই অভিনব প্রতিযোগিতা সম্পর্কে মনোবিদ দীপঙ্কর পাল বলেন, ‘‘মা ও সন্তানের সম্পর্কটা চিরকালীন। মায়েরা চোখ বন্ধ করেও স্পর্শ ও ঘ্রাণের মাধ্যমে সন্তানকে চিনে নিতে পারেন। সন্তানও ঠিক তেমনই মাকে চিনে নিতে পারে। এই কর্মসূচির বৈজ্ঞানিক ভিত্তি রয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy