মনের মানুষের ডাকে ঘর বাঁধার স্বপ্নে কাউকে না জানিয়ে ঘর ছেড়েছিলেন তিনি। কয়েক হাজার মাইল পাড়ি দিয়ে পৌঁছে গিয়ছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের তমলুকে। দেখাও হয় মনের মানুষটির সঙ্গে। গত ২ অগস্ট তমলুকের রাধামনি এলাকায় ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের এক ধারে তাঁকে দাঁড় করিয়ে উল্টোদিকে কয়েকজন লোকের সঙ্গে প্রেমিককে কথা বলতে দেখেন ওই তরুণী। লোকগুলি কয়েকবার তাঁর দিকেও তাকায়। এর কিছুক্ষণ পরে লোকগুলিকে নিয়ে একটু আসছি বলে উধাও হয়ে যায় ওই ‘প্রেমিক’ যুবক।
অচেনা, অজানা জায়গায় অনেকক্ষণ অপেক্ষার পরেও ‘প্রেমিক’ যুবক আর না ফেরায় সেদিন কাঁদতে শুরু করেছিলেন ওই তরুণী। স্থানীয় লোকজন ওই অবস্থায় তাঁকে দেখে পুলিশে খবর দেন। তমলুক থানার পুলিশ গিয়ে আন্দামানের বাসিন্দা ওই তরুণীকে উদ্ধার করার পরে ভাঙা ভাঙা হিন্দিতে সমস্ত ঘটনা জানান তিনি। যদিও ‘প্রেমিক’ ওই যুবক কোথায় থাকে তা বলতে পারেননি তিনি। শুধু জানান, ওই যুবকের নাম রাকেশ। পরে আদালতের নির্দেশে তরুণীকে নিমতৌড়ি হোমে রাখা হয়। সোমবার সেখান থেকেই মায়ের হাত ধরে আন্দামানে ফিরে গেলেন ওই তরুণী।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, আন্দামানের বাসিন্দা ওই তরুণী তামিল। উদ্ধার হওয়ার পরে তরুণীটি জানান, তাঁর বাবা নেই। আন্দামানে তাঁর মা, দুই বোন ও এক ভাই রয়েছে। বাড়ির কাছে এক শপিং মলে তিনি কাজ করতেন। মাস পাঁচেক আগে, তাঁদের এলাকায় কাজ করতে গিয়েছিলেন পূর্ব মেদিনীপুরের কয়েকজন যুবক। তখনই আলাপ হয়েছিল রাকেশের সঙ্গে। আলাপ থেকে বাড়ে ঘনিষ্ঠতা। দু’জনে বিয়ে করবেন বলে ঠিক করেন। তরুণীর কথায়, রাকেশ তাঁকে জানায়, সে আগে গিয়ে বিয়ের সমস্ত জোগাড় করে রাখবে। তারপর তার কথামতো যেন নির্দিষ্ট দিনে সেখানে পৌঁছে যায়। ওই তামিল তরুণীর অভিযোগ, তাঁর বাড়িতে বিষয়টি না জানাতে পই পই করে নিষেধ করে রাকেশ।
সেইমতো গত ২ অগস্ট দুপুরে বিমানে কলকাতা পৌঁছন ওই তামিল তরুণী। এয়ারপোর্টের বাইরে গাড়ি নিয়ে অপেক্ষা করছিল রাকেশ। তার সঙ্গে ছিল আরও একজন। তরুণীটি পুলিশকে জানান, গাড়িতে তাঁকে দেখিয়ে দু’জনের মধ্যে বাংলায় কথা কাটাকাটি হচ্ছিল। যদিও তার কিছু তিনি বুঝতে পারেননি। শুধু অন্য লোকটি বারবার মাথা নাড়ছিল। সে যে কিছুতে না বলছে শুধু সেটুকুই তিনি বুঝতে পারেন।
গত ২ অগস্ট উদ্ধারের পর আন্দামানে ওই তরুণীর পরিবারের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন হোম কর্তৃপক্ষ। এ দিন হোমের পরিচালন সমিতির সম্পাদক যোগেশ সামন্ত বলেন, ‘‘সম্ভবত কোনও নারী পাচারকারীর হাতে ওই তরুণীকে বিক্রি করতে চেয়েছিল রাকেশ। কিন্তু পাচারকারীদের তাঁকে পছন্দ না হওয়ায় শেষ পর্যন্ত সফল হয়নি রাকেশ। হোমে আসার পর আমরা আন্দামানে যোগাযোগ করে ওর মা ও দাদাকে সব জানাই। খবর পেয়ে মেয়েকে বাড়িতে ফিরিয়ে নিতে এসেছেন ওঁর মা।’’
প্রসঙ্গত, গত ২ অগস্ট আন্দামানের বাসিন্দা এক মহিলাকে সেখানে ফেরত পাঠায় হলদিয়ার সুতাহাটা থানার পুলিশ। অভিযোগ, তাঁকেও একইভাবে উদ্ধার করা হয়। পর পর এমন ঘটনায় নড়ে চড়ে বসেছে জেলা পুলিশ। জেলা পুলিশের এক কর্তা জানান, মনে হচ্ছে এই এলাকায় নারী পাচার চক্রের কয়েকজন সক্রিয়। দু’টি ক্ষেত্রেই নাম-ধাম না পাওয়া গেলেও পুলিশ খোঁজখবর করছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy