এভাবেই মাছে রং করা হচ্ছে বলে অভিযোগ। —নিজস্ব চিত্র।
বিভিন্ন আনাজকে টাটকা দেখাতে কৃত্রিম রঙে ধোয়া হচ্ছে, সোশ্যাল মিডিয়ায় এমন ভিডিও হামেশাই দেখা যায়। এবার প্রকাশ্যে মাছে রং দিতে দেখা গেল হলদিয়ায়।
অভিযোগ, হলদিয়া শহরের মাখনবাবুর বাজারে গত বুধবার সকালে এক ব্যবসায়ীকে ভোলা মাছে রং দিতে দেখা গিয়েছে। স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই ব্যবসায়ী একটি গামলায় লাল রং করে, তাতে ভোলা মাছ ডুবিয়ে তুলে রাখছিলেন। আম জনতার প্রশ্নের জবাবে ওই ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, দোকান থেকে তিনি ওই রং কিনে এনেছেন। এবং ভোলা মাছ-সহ আরও কয়েকটি মাছে ওই রং দেওয়া হয়।
মাছে রং দেওয়া আইননত অপরাধ, তা জানা সত্ত্বেও এমন কাজ কেন করা হয়? জাবাবে নাম প্রকাশ্যে অনিচ্ছুক অন্য এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘‘ভোলা মাছে রং দিলে তা আকর্ষণীয় আর তাজা দেখায় এবং এর সাথে সাথে পচনও রোধ হয়।’’ স্থানীয় বাসিন্দা চঞ্চল নায়েকের কথায়, ‘‘শুধু মাছে নয় সবজিতেও রং দেওয়া হয়। নজরদারি না থাকার কারণ এই ব্যবসায়ীদের এতো সাহস।’’
ওই বাজারে নিয়মিত বাজার করেন শিক্ষিকা মনা মিশ্র। তিনি বলেন, ‘‘শুধু রং মেশানো নয়। এখানে মাছ বাজারে খারাপ ব্যবহার করা হয় এবং ক্রেতাদের ঠকানো হয়।’’ সুকোমল আদক নামে আ এক ক্রেতার কথায়, ‘‘মাছে রং মেশাতে বহুবার দেখেছি। পচা মাছকে তাজা রাখতেই ওই কাজ করা হয়। তবে মাছের বাজারে কোনও দিন পুরসভা বা খাদ্য দফতরের লোকজনকে অভিযান করতে দেখিনি। বাধ্য হয়েই আমাদের এই বিষ মেশানো খাবার খেতে হয়।’’
যদিও ব্যবসায়ীদের দাবি, কয়েকজন অসাধু ব্যবসায়ী ওই কাজ করেন। আর দুর্নামের ভাগিদার হতে হয় সবাইকে। আপণি মার্কেটের বাজার কমিটির সম্পাদক শুভেন্দু সর্দার বলনে, ‘‘আমাদের বাজারে ওই ধরনের কাজ করতে দেওয়া হয় না। তবে বিষয়টি নজরে আসলে আমরা শাস্তিমুলক ব্যবস্থা নেব।’’
এ ভাবে মাছে রং মেশানো খুব ক্ষতিকর, তা জানিয়েছেন হলদিয়ার মৎস্য সম্প্রসারণ আধিকারিক সুমন সাহু। তিনি বলেন, ‘‘এই ধরনের রং মাছে মেশানো একেবারেই অনুচিত। নানা ধরনের শারীরিক অসুবিধা সৃষ্টি হবে। এ রোধে পুরসভাকে নজরদারি চালাতে হবে।’’ কেন্দ্রীয় সরকারের ‘সেন্ট্রাল ইনস্টিটিউট অফ ফিশারিজে’র মুখ্য মৎস্য বিজ্ঞানী বি কে মহাপাত্রের কথায়, ‘‘মূলত ফুলকা ও পায়ুছিদ্র লাল বা টাটকা দেখানোর জন্য এই ধরনের কৃত্রিম রং মেশানো হয়। এ রোধে আইনত ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।’’
রঙের ক্ষতিকারকদিক প্রসঙ্গে স্থানীয় রসায়নের শিক্ষক সুজয় মাইতির বক্তব্য, ‘‘ফর্মালিন পেটের রোগের অন্যতম কারণ। এই রাসায়নিক যকৃত, পাকস্থলী এমনকী ফ্যালোপিয়ান টিউব নষ্ট করে দেয়। ফর্মালিন বা সোডিয়াম বেনজোয়েট কোষে অক্সিজেনের পরিমান কমিয়ে দেয়।’’ সুজয়ের দাবি অবিলম্বে ওই ধরনের রং দেওয়ার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধ জারি করা উচিত।
গোটা ব্যাপারে হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান ইন কাউন্সিল (স্বাস্থ্য) আজিজুল রহমান বলেন, ‘‘পুর এলাকার সমস্ত মাছের বাজারেই আমরা নোটিস দিয়ে জানিয়ে দেব, যাতে মাছে রং দেওয়া না হয়। তার পরেও এই ধরনের অভিযোগ পেলে পদক্ষেপ করব।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy