Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪

টাকা নেই! তাই বিশ বাঁও জলে খড়্গপুরের প্রেক্ষাগৃহ

রেলশহরে প্রেক্ষাগৃহ তৈরি নিয়ে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছে খড়্গপুর পুরসভা। মাঝে অভিযোগ উঠেছিল, টাউন হল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাঁকে দেওয়া হয়েছে তিনি টাকা দিচ্ছিলেন না।

উপরে ছাউনি থাকলেও চারিপাশ ফাঁকা। ঠান্ডার মধ্যেই দুর্গামন্দির মুক্তমঞ্চে রবিবার  চলছে অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র

উপরে ছাউনি থাকলেও চারিপাশ ফাঁকা। ঠান্ডার মধ্যেই দুর্গামন্দির মুক্তমঞ্চে রবিবার চলছে অনুষ্ঠান। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
খড়্গপুর শেষ আপডেট: ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ ০২:২৬
Share: Save:

আগে ছিল জমির ‘অভাব’। জমির সংস্থান হতে এ বার নাকি টাকার অভাব! তাই খড়্গপুরের শহরে প্রেক্ষাগৃহ তৈরি আবার বিশ বাঁও জলে!

রেলশহরে প্রেক্ষাগৃহ তৈরি নিয়ে একাধিকবার আশ্বাস দিয়েছে খড়্গপুর পুরসভা। মাঝে অভিযোগ উঠেছিল, টাউন হল রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব যাঁকে দেওয়া হয়েছে তিনি টাকা দিচ্ছিলেন না। বছর খানেক আগে সেই জমি হাতে নিয়েছে পুরসভা। তারপরে কেন প্রেক্ষাগৃহ তৈরি হচ্ছে না, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শহরের বাসিন্দারা। উঠছে। এ বার অবশ্য পুরসভার যুক্তি, অর্থের অভাবে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে। সমস্যার কথা স্বীকার করেই পুরপ্রধান প্রদীপ সরকারের দাবি, “প্রেক্ষাগৃহের জন্য জমির সমস্যা মিটেছে। টাউন হল যাঁকে দেখভালের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তিনি লক্ষ-লক্ষ টাকা নয়ছয় করায় আমরা সেটি ফের পুরসভার দখলে নিয়েছি। সেই জমিতে প্রেক্ষাগৃহ গড়া যেতে পারে।’’ একইসঙ্গে তাঁর সংযোজন, ‘‘রাজ্য চাইছে পুরসভাগুলি নিজেদের পায়ে দাঁড়াক। কিন্তু আমাদের কাছে এখন প্রেক্ষাগৃহ তৈরির টাকা নেই।”

প্রেক্ষাগৃহ না থাকায় শহরে যে কোনও অনুষ্ঠান আয়োজন করতে গিয়ে সমস্যায় পড়েন উদ্যোক্তারা। পৃথকভাবে মাইক, আলো, মঞ্চসজ্জার কাজ করতে গিয়ে হিমশিম খেতে হয় আয়োজক সংস্থাকে। এর জেরে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের ইচ্ছে থাকলে পিছিয়ে যেতে হচ্ছে সাংস্কৃতিক সংস্থাগুলিকে। শীতকালে সমস্যা
আরও বাড়ে।

বার্ষিক অনুষ্ঠানের জন্য ‘শঙ্খমালা খড়্গপুর’ শহরের রেল এলাকার গোলবাজার দুর্গামন্দির মুক্তমঞ্চে ভাড়া করেছিল। গত রবিবার বিকেলে আয়োজিত অনুষ্ঠানে এসেছিলেন সঙ্গীতশিল্পী লোপামুদ্রা মিত্র। অভিযোগ, অনুষ্ঠানস্থলের বাইরে বিয়েবাড়িতে চলা ডিজের আওয়াজে পণ্ড হতে বসেছিল অনুষ্ঠান। গানের মাঝে লোপামুদ্রা কিছুটা বিরক্ত হয়েই বলেন, “এখন এই ডিজে সংস্কৃতি চলছে। বঙ্গ সংস্কৃতি এ ভাবে নষ্ট হতে দেখলে খারাপ লাগে। আমরা এটা হতে দেব না। চলুন আমি এ বার ওদের থেকেও উঁচু স্বরে গান গাইবো। দেখি ওরা কী করে।” তার পরে লোপামুদ্রা বেশ উঁচু স্বরে গেয়ে ওঠেন, ‘আয় আয় কে যাবি...এক মুঠো রোদ ধরতে...’। এমন ঘটনা দেখে অনুষ্ঠানের দর্শকাসনে বসে থাকা সুব্রত চট্টোপাধ্যায় বলছিলেন, “সত্যি এটা আমাদের দুর্ভাগ্য যে একটা প্রেক্ষাগৃহ হল না। তাহলে তো এমনটা হতো না।”

‘খড়্গপুর শঙ্খমালা’-র সদস্য বাচিক শিল্পী লীনা গোপ বলছিলেন, “পুরসভা তো বহু বছর থেকেই বলছে, প্রেক্ষাগৃহ হচ্ছে-হবে। কিন্তু কবে হবে জানি না। আসলে এখন মনে হচ্ছে তাতে পুর কর্তৃপক্ষের সচেতনতার অভাব রয়েছে। একতার অভাব রয়েছে আমাদের মতো সাংস্কৃতিক কর্মীদেরও।”

পুরপ্রধান প্রদীপবাবু অবশ্য বলছেন, “আসলে শুধু প্রেক্ষাগৃহ তৈরি করে লাভ নেই। আমরা চাইছি, পিপিপি মডেলে একটি সিটি সেন্টার তৈরি করে সেখানে প্রেক্ষাগৃহ রাখতে। এ জন্য বছর খানেক আগেই রাজ্যের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু সেই প্রস্তাব এখনও অনুমোদন হয়নি।”

শেষ পর্যন্ত কবে প্রেক্ষাগৃহ পায় রেলশহর, সেটাই দেখার।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Auditorium Kharagpur MOney
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE