Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Panchayat Poll 2018

রাইনে ভোটে ব্রাত্য বৃদ্ধাবাসের আবাসিকেরা

রাইন গ্রামের এক বৃদ্ধাশ্রমের ৩২ জন আবাসিক আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ১৯৯৪ সালে  পথচলা শুরু হয়েছিল রাইন বৃদ্ধাবাসের।

ভোটে-নেই: বৃদ্ধাবাসের আবাসিকরা। নিজস্ব চিত্র

ভোটে-নেই: বৃদ্ধাবাসের আবাসিকরা। নিজস্ব চিত্র

প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায়
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১৭ মে ২০১৮ ১৬:৩৫
Share: Save:

বিরোধীশূন্য হওয়ায় পূর্ব মেদিনীপুরের বহু এলাকাতেই এবার নির্বাচন প্রক্রিয়ার অংশ হতে পারছেন না সেখানকার বাসিন্দারা। তবে কোলাঘাটে দেখা গিয়েছে উল্টো চিত্র। ওই ব্লকের রাইন গ্রামে নির্বাচন হলেও ভোট দিতে পারবেন না ৩২ জন বাসিন্দা।

রাইন গ্রামের এক বৃদ্ধাশ্রমের ৩২ জন আবাসিক আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে ভোট দিতে পারবেন না বলে স্থানীয় সূত্রের খবর। ১৯৯৪ সালে পথচলা শুরু হয়েছিল রাইন বৃদ্ধাবাসের। শুধু কোলাঘাটের স্থানীয় বৃদ্ধবৃদ্ধারা নন, রাজ্যের বিভিন্ন এলাকার বাসিন্দারা নিজেদের শেষ আশ্রয় হিসাবে ওই বৃদ্ধাবাসকে বেছে নিয়েছেন। আর ভোট-সমস্যায় পড়েছে অন্য এলাকার ওই সব আবাসিকেরা।

বৃদ্ধাবাস কর্তৃপক্ষের তরফে জানা গিয়েছে, অনেক আবাসিকেরই ভোটার কার্ড তাঁদের পুরনো ঠিকানার। বৃদ্ধাশ্রমে আসার পরে নতুন করে সেই কার্ডের ঠিকানার পরিবর্তন করা হয়নি। ফলে বেশ কয়েকজন আবাসিক এবার ওই এলাকায় ভোট দিতে পারছেন না। উল্লেখ্য, ওই আবাসিকদের প্রত্যেকেই আধার কার্ড তৈরি হয়েছে। সেখানে স্থায়ী ঠিকানা হিসাবে রাইনের উল্লেখ রয়েছে।

ভোট দেওয়ার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়ার আক্ষেপ রয়েছে আবাসিকদের মধ্যে। প্রায় তিন বছর আগে হাওড়ার শিবপুর এলাকা থেকে ওই বৃদ্ধাবাসে এসেছেন গুরুদাস মুখোপাধ্যায় এবং তাঁর স্ত্রী। গুরুদাসবাবু বলেন, ‘‘ছেলেমেয়ে কেউ খোঁজ রাখে না। তাই এই বয়সে শিবপুরে গিয়ে ভোট দেওয়া সম্ভব নয়। রাইন গ্রামের নতুন ভোটার হিসাবে থাকতে চাই আমরা।’’ গুরুদাসবাবুর কথায়, ‘‘এখানের ঠিকানায় আধার কার্ড হয়ে গিয়েছে কিন্তু ভোটার লিস্টে এখনও নাম ওঠেনি।’’

শুধু গুরুপদবাবু নন, ওই বৃদ্ধাশ্রমে সাত-আট বছর রয়েছেন এমন বহু আবাসিকেরই এখনও ভোটার কার্ড পরিবর্তন হয়নি। তাঁদের দাবি, এ ব্যাপারে স্থানীয় প্রশাসন হস্তক্ষেপ করুক। আর এক আবাসিকের কথায়, ‘‘আশা করি পরের নির্বাচনে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব উদ্যোগী হবেন। শেষ জীবনে আমরা ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারব।’’

রাইন বৃদ্ধাবাসের সাংস্কৃতিক সম্পাদক আশুতোষ পাড়ুই বলেন, ‘‘বৃদ্ধাবাসের ৩২ জন আবাসিকের এখানকার ঠিকানায় আধার কার্ড নতুন করে তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। তবে কিছু ত্রুটি এবং সঠিক উদ্যোগের অভাবে এখানের ভোটার লিস্টে নাম তোলা যায়নি। আশা করি আগামী দিনে সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।’’

এই বিষয়ে কোলাঘাট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি তথা রাইন গ্রামের এবারের তৃণমূলের প্রার্থী মানব সামন্ত বলেন, ‘‘ঠিকানা বদলের ক্ষেত্রে পুরাতন ঠিকানায় নাম কাটিয়ে নতুন ঠিকানায় নাম নথিভুক্তের জন্য আবেদন করতে হয়। আসন্ন নির্বাচনে কয়েকজনের নাম নথিভুক্ত হয়নি। তবে আগামী নির্বাচনের আগে অবশ্যই ওই আবাসিকদের ভোটার লিস্টে নাম তোলার চেষ্টা করব।’’ কোলাঘাটের বিধায়ক সিপিএম নেতা শেখ ইব্রাহিম আলি বলেন, ‘‘এই বিষয়ে আগেই গোপালনগর গ্রাম পঞ্চায়েতের উদ্যোগী হওয়ার প্রয়োজন ছিল।’’

আপাতত আবাসিকদের প্রশ্ন, ‘‘পরিজনেরা তো দূরে সরিয়েছেই, এবার গণতান্ত্রিক অধিকার থেকেও কি দূরে থাকতে হবে?’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE