অভিনব: সুসজ্জিত প্রাথমিক বিদ্যালয়।
শিল্প শহর থেকে প্রায় ১০ কিলোমিটার দূরে প্রত্যন্ত গ্রামের একটি ছোট্ট প্রাথমিক স্কুল। বর্তমানে বেসরকারি এবং ইংরেজি মিডিয়াম স্কুলগুলির দাপটের যুগে এই স্কুলটি যে কতটা ‘ছাত্রবন্ধু’, চোখে না দেখলে তা সহজে বিশ্বাস করা যায় না। যার জন্য এর আগেও একাধিক পুরস্কার জমা পড়েছে স্কুলের ঝুলিতে। আর তার মধ্যে অন্যতম হল চলতি মাসে পাওয়া রাজ্যের ‘শিশু মিত্র পুরস্কার’।
সুতাহাটা দক্ষিণচক্র কিসমত শিবরাম নগর-২ নম্বর প্রাথমিক বিদ্যালয় বর্তমানে স্থানীয় পড়ুয়াদের কাছে আকর্ষণের বিষয়। স্থানীয় সূত্রের খবর, স্কুলটিকে কার্যত একটি গবেষণাগার হিসাবে তৈরি করেছেন প্রধান শিক্ষক শোভন দাস এবং সহ- শিক্ষকরা। কলকাতা সরকারি আর্ট কলেজের এই প্রাক্তনী নিজের উদ্যোগে কার্যত স্কুলের ভোলই বদলে দিয়েছেন। গতানুগতিক শিক্ষাদানের বদলে এই স্কুলের পডুয়াদের মেলে হাতে কলমে প্রশিক্ষণ। সম্প্রতি স্কুলে শুরু হতে চলেছে ডিজিটাল ক্লাসরুম। প্রধান শিক্ষক শোভন দাস বলেন, ‘‘আগামী ১৪ ডিসেম্বর স্কুলে ডিজিটাল ক্লাসরুম হতে চলেছে। সর্বশিক্ষা মিশনের অর্থে তৈরি হচ্ছে সেটি। উদ্বোধনে উপস্থিত থাকবেন জেলাশাসক রশ্মি কমল।’’
সম্প্রতি স্কুলে গিয়ে দেখা গেল, একটি ক্লাস ঘরে রয়েছে রকেটের দু’টি ছোট সংস্করণ। যার একটি রাশিয়ার রকেট ‘ভস্তক’ এবং অন্যটি আমেরিকার ‘অ্যাপেলো’ রকেটের অনুকরণে বানানো। রকেট দু’টি ক্লাসের জানালার সঙ্গে এমন ভাবে রাখা হয়েছে যে, তা খুললেই চাঁদের পদার্পণকারী প্রথম মানুষ নীল আমস্ট্রং এবং প্রথম মহাকাশচারী ইউরি গাগারিন সম্পর্কে তথ্য জানতে পারবে পড়ুয়ারা। স্কুলে রয়েছে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি তথা বিজ্ঞানী এ পি জে আবদুল কালামের মূর্তি-বাণী। প্রতিটি ক্লাসরুমের দেওয়াল, টেবিল, চেয়ার এমনকী, ছাদেও নানা ধরনের শিক্ষার বিষয়ে বর্ণনা রয়েছে। শুধু তাই নয়, খুদে পড়ুয়াদের জন্য শিক্ষকেরা তৈরি করছেন একটি বায়োস্কোপ। সেই বায়োস্কপে দেখতে পাওয়া যাবে মনীষীদের জীবনী। স্কুলের দেওয়ালে রয়েছে চাকার বিবর্তন সম্পর্কে তথ্য এবং প্রতিলিপি। সেই চাকায় হাত দিলেই তা চলতে শুরু করে।
স্কুল সূত্রের খবর, ১৯৪২ সালে স্থানীয় বাসিন্দা এবং শিক্ষানুরাগী সুধীরচন্দ্র মাইতির উদ্যোগে স্কুলটি তৈরি হয়। বর্তমান প্রধান শিক্ষক বলেন, ‘‘১৯৯৭ সালে স্কুলে যোগ দিই। তখন টালির বাড়ি আর মাটির দেওয়াল ছিল। পরে হলদিয়া রিফাইনারি দু’টি শ্রেণি কক্ষ তৈরি করে দেয়।’’ স্কুলের শিক্ষিকা দীপান্বিতা ভৌমিক বলেন, ‘‘স্কুলে নানারকম গাছ রয়েছে। এবার শিশু মিত্র পুরস্কারের টাকায় স্কুলের ছাদে বাগান করব।’’
বর্তমানে স্কুলে ১২০ জনের মতো পড়ুয়া এবং চার জন শিক্ষক রয়েছেন বলে স্কুল সূত্রের খবর। ছাত্রছাত্রীদের ‘পাপেট শো’ সম্পর্কে জেলায় সুনাম রয়েছে। ২০১৭য় পূর্ব মেদিনীপুরে ‘নির্মল বিদ্যালয়’ এবং ‘বেস্ট পারফরমিং স্কুল সম্মান’ পেয়েছে এই স্কুল। এক শিক্ষক যদুপতি প্রামাণিক বলেন, ‘‘আমাদের জিমন্যাস্টিক দল জেলার অন্যতম সেরা। ছোটদের অডিও ভিসুয়্যাল ক্লাস হতো ঘুরিয়ে ফিরিয়ে। এবার ডিজিটাল ক্লাসরুম হলে পড়াশোনার মান বাড়বে।’’
শিক্ষকেরা যখন পড়ুয়াদের নিয়ে আশাবাদী, তখন অভিভাবকেরা জানাচ্ছেন, ছুটি হলেও তাঁদের সন্তানেরা স্কুল থেকে অনেক সময় ঘরে যেতে চায় না। স্কুলকেই মনপ্রাণ দিয়ে ভালবাসছে ওই খুদে পড়ুয়ারা।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy