খেলায় যোগদানকারী বয়স্ক মহিলারা। পার্থপ্রতিম দাসের তোলা ছবি।
হেঁসেল ছেড়ে খেলার মাঠে হাজির শাশুড়ি আর বৌমা।
৩৮ জন গৃহবধূর সঙ্গে দীর্ঘলম্ফন প্রতিযোগিতায় নেমে লাফ দিচ্ছেন চল্লিশোর্ধ্ব বৌমা। আর পাশেই দর্শকের আসনে তাঁর শাশুড়ি। আবার অন্য বয়স্কাদের সঙ্গে লড়াইয়ে নামা সত্তোরর্ধ্ব শাশুড়ির ৫০ মিটার দূরত্বের হাঁটা প্রতিযোগিতার দর্শক তাঁর বৌমা। রবিবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এমনই নানা ঘটনার সাক্ষী রইল তমলুক কলেজ ময়দান।
তাম্রলিপ্ত ভেটারেন্স স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের উদ্যোগে আয়োজিত বয়স্কদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতা ঘিরে রবিবার সকাল থেকে ছিল বিপুল উৎসাহ। আর সবচেয়ে নজর কেড়েছে বয়স্ক গৃহবধূদের যোগদান। পুরুষ প্রতিযোগীদের চেয়ে তাঁদের সংখ্যা ছিল প্রায় দেড়গুণ। পায়ে হাঁটা, গুলি চামচ দৌড়, দীর্ঘ লম্ফন থেকে লৌহবল নিক্ষেপ সবেতেই প্রবীণাদের বিপুল যোগদান বুঝিয়ে দিয়েছে তাঁরা এগিয়ে ছিলেন আগে থেকেই।
রবিবার সকাল সাড়ে ১০ টা নাগাদ প্রতিযোগিতায় উদ্বোধন করেন তমলুকের পুরপ্রধান রবীন্দ্রনাথ সেন। ছিলেন উপ-পুরপ্রধান দীপেন্দ্রনারায়ণ রায়-সহ অন্য কাউন্সিলররা। চল্লিশোর্ধ্ব মহিলাদের দীর্ঘ লম্ফন প্রতিযোগিতায় যোগ দিয়েছিলেন তমলুক শহরের আবাসবাড়ির বাসিন্দা গৃহবধূ সীমা চক্রবর্তী, সরস্বতী সাসমল-সহ ৩৮ জন মহিলা। সেসময় দর্শকের ভিড়ের মধ্যে ছিলেন প্রতিযোগীর ব্যাজ বেঁধে থাকা তাঁদের শাশুড়ি গীতা চক্রবর্তী ও মালতী শাসমল। কিছু পরেই ষাটোর্ধ্ব প্রবীণাদের ৫০ মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় দেখা গেল গীতা দেবী, মালতী দেবীরা অন্য প্রবীণাদের সঙ্গে লড়াইয়ে সামিল।
এ দিন প্রতিযোগিতায় নেমে তাঁদের পদক জেতা না হলেও শাশুড়ি-বৌমার ক্রীড়া প্রেমের পরিচয় মিলেছে। ৭০ বছরের গীতাদেবী জানান, ‘‘বৌমা কয়েক বছর ধরেই মাঠে খেলতে আসছে। বাড়ির কাছে বয়স্কদের খেলা হচ্ছে দেখে আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল। তবে আসা হয়নি। এ বার বৌমা আমায় উৎসাহ দিয়ে খেলার মাঠে নিয়ে এসেছে।’’ আর বৌমা সীমাদেবী বলেন, ‘‘আমি আগে খেলাধূলা করতাম। কিন্তু শাশুড়ির মত অনেক বয়স্ক মহিলা এখানে খেলতে আসছে দেখে উৎসাহ দিয়েছিলাম।’’
প্রবীণদের ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় মহিলাদের একটি বিভাগে দীর্ঘলম্ফনে প্রথম স্থান পেয়েছেন সুপর্ণা অধিকারী। সুপর্ণাদেবীর স্বামী সুজিত অধিকারী লৌহবল নিক্ষেপে দ্বিতীয় স্থান দখল করেছেন। সুপর্ণাদেবী জানান, ‘‘স্কুল পড়ার সময় দৌড় প্রতিযোগিতায় রাজ্যস্তরে যোগ দিতাম। খেলার সেই টানেই ফের খেলতে এখানে এসেছি।’’
শাশুড়ি-বৌমা, স্বামী-স্ত্রীর মত এ দিন খেলার জন্য মাঠে এসেছিলেন তমলুকের রাধাবল্লভপুরের বাসিন্দা ৭২ বছরের কাকা রণজিৎ কর ও তাঁর ৫৭ বছরের ভাইপো অচিন্ত্য কর। কৃষি বিপণন দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী রণজিৎবাবু এ দিন ২০০ মিটার হাঁটা প্রতিযোগিতায় দ্বিতীয় হয়েছেন। আর ভাইপো অচিন্ত্য ৭৫ মিটার দৌড় প্রতিযোগিতায় তৃতীয় হয়েছেন। প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন নন্দীগ্রামের ঘোলপুকিরিয়ার ৮২ বছরের মনীন্দ্রনাথ মণ্ডল, তমলুক শহরের আবাসবাড়ির বাসিন্দা ৮০ বছর বয়সী ভূমি সংস্কার দফতরের অবসরপ্রাপ্ত কর্মী অমলবিকাশ সাহু, ৭৮ বছরের প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মী পারশ সিংহ-এমনই অনেকে।
রবিবার সকাল থেকে ক্রীড়া প্রতিযোগিতার পর বিকেলে প্রবীনদের প্রদর্শনীমূলক ফুটবল খেলায় যোগ দেয় তাম্রলিপ্ত ভেটারেন্স স্পোর্টস এ্যাসোসিয়েশন সভাপতি একাদশ বনাম সম্পাদক একাদশ। খেলায় সভাপতি একাদশ ১-০ গোলে জয়ী হয়। তাম্রলিপ্ত স্পোর্টস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ৮০ বছরের প্রবীণ দিলীপ মল্লিক তমলুক হাইস্কুলের প্রাক্তন ইংরাজির শিক্ষক। এ দিন দিলীপবাবু বলেন, ‘‘এবার প্রতিযোগিতা ছ’বছরে পা দিয়েছে। খেলায় যোগ দেওয়ার জন্য কিছুদিন আগে নাম জমা নেওয়া হয়েছিল।’’
অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক সমর পাল বলেন, ‘‘ জয়ীরা তো বটেই, যাঁরা যোগ দিয়েছিলেন তাঁদেরও পুরস্কৃত করা হয়েছে। এটুকু বলতে পারি, মোট ৩৫৮ টি পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। এটা আমাদের তরফেও আনন্দের।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy