অদম্য: দিঘার রাস্তায় স্বপা দাস। নিজস্ব চিত্র
রোগে শয্যাশায়ী স্বামী। নিজেও আক্রান্ত ব্রেন টিউমারে। কিন্তু প্রতিদিন নিয়ম করে ‘জীবন সংগ্রামের প্যাডেল’ ঘোরাচ্ছেন স্বপ্না।
বছর আটচল্লিশের দিঘার ওই মহিলা স্বপ্না দাস সৈকত শহরের হোটেল মালিকদের কাছে পরিচিত মুখ। প্রতিদিন সকালে তিন চাকার ভ্যান রিকশা নিয়ে বিভিন্ন হোটেল থেকে লোহার ভাঙা টুকরো, প্লাস্টিক, ভাঙা কাঁচ, বোতল সংগ্রহ করেন স্বপ্না। তা বিক্রি করেই দিন গুজরান হয় ওই মহিলার। অথচ এই স্বপ্নাই আটটি আঞ্চলিক ভাষায় সমান তালে কথা বলতে পারদর্শী। তাঁর নিত্যদিনের লড়াই দেখা এলাকার অনেকের মন্তব্য, ‘‘স্বপ্নার মতো মহিলাদের জন্য বছরের সব দিনই নারী দিবস।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, দিঘা এলাকায় প্রতিদিন অবাঞ্ছিত জিনিস সংগ্রহ করেন অসুস্থ স্বপ্না। রিকশায় সেগুলি নিয়ে যান দিঘা রেলস্টেশন সংলগ্ন একটি গুদামে। জমা দেন গুদামের মালিক রতন দেবনাথের কাছে। এই তার রোজ নামচা। স্বপ্না জানাচ্ছেন, কাঁথির পিছাবনীর কাছে নিমদাসবাড় গ্রামে বাড়ি ছিল তাঁর। ছোট বয়সে বাবা ও মায়ের মৃত্যু হয়। ২১ বছর বয়সে মুম্বইয়ে গিয়ে জরির কাজ শুরু করেন। সেই সূত্রে আরবী, পঞ্জাবি, মরাঠি, গুজরাতী, বিহারীর মতো ভাষা বলতে শেখেন। ১০ বছর পরে ২০০২ সালে বাড়ি ফেরেন তিনি। অভিযোগ, সে সময় পরিজনেরা তাঁর স্বল্প সঞ্চয় কেড়ে নেন। এর পরে দিঘায় এসে ভোগী ব্রহ্মপুর গ্রামের বাসিন্দা পঞ্চানন জানার সঙ্গে তাঁর পরিচয় হয়। বিয়ে হয় তাঁদের। এক কন্যা সন্তানও হয়। তবে সে তিন বছর বয়সে মারা যায়।
দিল্লি দখলের লড়াই, লোকসভা নির্বাচন ২০১৯
বন দফতরের অস্থায়ী কর্মী ছিলেন পঞ্চানন। এক বার গাছ কাটার সময় গাছের অংশ তাঁর পিঠে পড়ে। সেই থেকে শয্যাশায়ী পঞ্চানন। পরিবারের হাল ধরতে ব্রেন টিউমারে আক্রান্ত স্বপ্না ভ্যান রিকশা চালাতে শুরু করেন। সেই থেকে লড়াই শুরু। অসুস্থ শরীরে এ ভাবে কতদিন? জবাবে স্বপ্না বলেন, ‘‘কষ্ট হলেও কিছু করার নেই। পেট চালাতে কাজ তো করতেই হবে।’’
স্বপ্নার লড়াই নিয়ে গুদাম মালিক রতন বলেন, “বছরে একটা দিন ঘটা করে নারী দিবস পালিত হয়। কিন্তু স্বপ্নার মতো মহিলাদের কাছে বছরের সব দিনই নারী দিবস। ওঁর লড়াইকে কুর্নিশ।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy