Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

ভাই-বোনের ‘বিসর্জনে’ শোকস্তব্ধ গ্রাম

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত সুতপা মাইতি (২১) ও তার ভাই উজ্জ্বল মাইতি (১৬) দুজনেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী।

মঙ্গলবার এই ভেড়িতেই ডুবে মৃত্যু হয় সুতপা ও উজ্জ্বলের। নিজস্ব চিত্র

মঙ্গলবার এই ভেড়িতেই ডুবে মৃত্যু হয় সুতপা ও উজ্জ্বলের। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা,
তমলুক শেষ আপডেট: ১০ অক্টোবর ২০১৯ ০৩:১১
Share: Save:

পড়াশোনার জন্য বিদ্যালয়ের ছাত্রাবাসে থাকত ছেলে উজ্জ্বল। সামনে মাধ্যমিক পরীক্ষা। তার আগে পুজোর ছুটিতে বাড়িতে এসে দিদি ও ভাইদের সঙ্গে একসঙ্গে থাকা, ঠাকুর দেখতে যাওয়ায় বেশ আনন্দে কাটছিল তমলুকের হরশঙ্কর গ্রামের মাইতি পরিবারের ছেলে-মেয়েদের। খুশিতে ছিলেন তাদের বাবা-মায়েরাও। কিন্তু বিজয়া দশমীর দুপুরে এক লহমায় বদলে গেল মাইতি পরিবার সহ গোটা গ্রামের আনন্দের ছবিটা। বাড়ির পাশে মাছের ভেড়িতে নৌকা ভ্রমণে বেরিয়ে জলে ডুবে মৃত্যু হল উজ্জ্বল ও তার কলেজ পড়ুয়া দিদির।

পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মৃত সুতপা মাইতি (২১) ও তার ভাই উজ্জ্বল মাইতি (১৬) দুজনেই মেধাবী ছাত্র-ছাত্রী। সুতপা মহিষাদল কলেজে রসায়নে অনার্সের তৃতীয় বর্ষে ও উজ্জ্বল মহিষাদলের কাপাসএড়ায় জওহর নবোদয় বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির ছাত্র ছিল। হরশঙ্কর গ্রামের বাসিন্দা বনমালী মাইতির এক মেয়ে সুতপা ও দুই ছেলে উজ্জ্বল ও আকাশ। বাড়ির কাছে হরশঙ্কর বাজারে ছোট্ট কাপড়ের দোকান রয়েছে বনমালীর। নবমীর দিন থেকে গ্রামেই কাকা ধনঞ্জয় মাইতির বাড়িতে ছিল সুতপা, উজ্জ্বল ও আকাশ। ধনঞ্জয়ের দুই ছেলে সুনির্মল ও সুপ্রভাত। নবমীর দিন সন্ধ্যায় সব ভাই-বোনেরা মেচেদা শহরে ঠাকুর দেখতে গিয়েছিল। দশমীর দিনও কাকার বাড়িতে ছিল সুতপা ও তার দুই ভাই। দুপুরে খাওয়াদাওয়ার তোড়জোড় চলছিল। তারই ফাঁকে সব ভাইবোনেরা মিলে ঘরের কাছেই মাছের ভেড়িতে নৌকা চেপে ঘুরতে বের হয়। কিন্তু ভেড়ির মাঝখানে নৌকা উল্টে ডুবে যায় সকলেই। তিনজনকে উদ্ধার করা গেলেও মারা যায় সুতপা ও উজ্জ্বল।

পুজোর আনন্দের মাঝে দুই ছেলে-মেয়েকে হারিয়ে শোকস্তব্ধ মাইতি পরিবার। শোকের ছায়া গোটা গ্রামেও। বুধবার বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল মা রমা মাইতি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছেন। বলেন, ‘‘বড় ছেলে পুজোর ছুটিতে কয়েকদিন আগেই বাড়ি এসেছিল। দিদি ও ভাইদের সঙ্গে মিলে একসঙ্গে ঘুরে বেড়াত। বর্ষায় আমাদের বাড়ি ডুবে যাওয়ায় ছেলে-মেয়েদের কাকার বাড়িতে পাঠিয়ে দিয়েছিলাম। নবমীর দিন সবাই একসঙ্গে ঠাকুরও দেখেছি। কিন্তু দশমীতে মায়ের বিসর্জনের দিনেই দুই ছেলেমেয়েকে হারাতে হবে বাবতে পারিনি।’’

স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশের অভিযোগ, এলাকায় চাষের জমিতে মাছের ভেড়ি তৈরির ফলে চারদিকে শুধু জল। তার উপর ভেড়িতে নজরদারির ব্যবস্থা না থাকায় অনেক ছোট ছেলেমেয়েরা নৌকা নিয়ে ঘোরে। যার জেরেই এমন দুর্ঘটনা ঘটল। স্থানীয় নীলকুণ্ঠা গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান অশোক পাইক বলেন, ‘‘ভেড়িতে এরকম দুর্ঘটনা আগে ঘটেনি। এ ধরনের দুর্ঘটনা রুখতে ভেড়িতে নজরদারির জন্য এলাকার ভেড়ি মালিকদের বলা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Death Drowning
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE