Advertisement
২৬ এপ্রিল ২০২৪
Digha

সৈকতে রুজিহীন, পসরা সাজানোই সার

করোনা-কালে পর্যটক নেই। বিপাকে দিঘার হস্তশিল্পীরা। খোঁজ নিল আনন্দবাজার করোনা-কালে পর্যটক নেই। বিপাকে দিঘার হস্তশিল্পীরা। খোঁজ নিল আনন্দবাজার

বিপাকে দিঘার হস্তশিল্পীরা।

বিপাকে দিঘার হস্তশিল্পীরা।

কেশব মান্না
দিঘা শেষ আপডেট: ২৩ জুলাই ২০২০ ০৪:৪৪
Share: Save:

সন্ধ্যা ৭টা। এক রবিবার ছুটির দিন ওল্ড দিঘার সি হক স্নানঘাটের সামনে হরেক রকমের শাঁখ এবং ঝিনুকের কারুকাজ করা জিনিসের পসরা সাজানো রয়েছে। দোকানের ভিতরে বা বাইরে কাউকে দেখা গেল না। কয়েক হাত দূরে জনা তিনেক লোক বসে রয়েছেন। দোকানদার কোথায় জানতে তাঁদের দিকে এগোতেই কানে এসে লাগল কথাগুলো। ওই তিনজন নিজেদের মধ্যে বলাবলি করছেন, ‘‘এরকম দিঘা আগে কখনও দেখিনি। দিনভর বিক্রি-বাটা নেই।’’ বোঝা গেল ওই তিনজনের মধ্যেই একজনের এই দোকান।

আনলক ওয়ানে খুলে গিয়েছে দিঘা, মন্দারমণি, তাজপুর। বুকিং শুরু করেছে হোটেলগুলি। কিন্তু যাঁদের জন্য আয়োজন, দেখা নেই তাঁদেরই। দিঘায় বেড়াতে এসে ঝিনুকের তৈরি ঘর সাজানোর জিনিস কেনেননি এমন পর্যটক মেলা ভার। শুধু ওল্ড দিঘা নয়, নিউ দিঘাতেও পর্যটকদের কাছে শাঁখ, ঝিনুকের তৈরি হাতের কাজের আকর্ষণ কম নয়। শুধু ঝিনুকের নয়, রয়েছে কাপড় ও দড়ি দিয়ে স্বনির্ভর গোষ্ঠীর মহিলাদের তৈরি শৌখিন গৃহস্থালির জিনিসপত্র। নিউদিঘাতেও স্নানঘাটের পাশ বরাবর পুনর্বাসন স্টলগুলিতে সারি সারি দোকান। কিন্তু মাছিটুকু দেখা গেল না। পদিমা গ্রামের এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘পয়লা জুলাই থেকে দোকান খুলছি। কিন্তু সারাদিনে দোকানে এক- দুজনের বেশি ক্রেতা আসে না। বিক্রিবাটা না হলে দোকান খুলে লাভ কী?’’

স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওল্ড ও নিউ দিঘায় সৈকতের ধার বরাবর শাঁখ, ঝিনুক, কাপড় এবং চটের তৈরি জিনিস বিক্রির কয়েকশো দোকান রয়েছে। আগে অস্থায়ীভাবেই দোতানহগুলিতে ব্যবসা হত। বছর দুয়েক আগে সৈকতের ধারে পুনর্বাসন স্টল দেওয়া হয়েছে ওই ব্যবসায়ীদের। গত ২৩ মার্চ থেকে দেশজুড়ে লকডাউন শুরু হয়। তখন থেকে দিঘায় পর্যটক আসা বন্ধ করে প্রশাসন। চার মাস পর ফের দিঘায় বাস চলাচল শুরু হয়েছে। প্রায় সব হোটেলই খুলে গিয়েছে। খোলার পর কয়েকদিন ছিটেফোঁটা পর্যটকের আগমন ঘটায় ক্রমশ পর্যটক বাড়বে বলে আশায় ছিলেন এই সব দোকানদার। সাধারণত, অধিকাংশ দোকান শনি ও রবিবার খোলে। কারণ ওই দু’দিন পর্যটকদের আনাগোনা বেশি থাকে। তবে বেশ কিছু দোকান সারা সপ্তাহ ধরেই খোলা থাকে। কিন্তু পর্যটকের দেখা সে ভাবে না মেলায় কার্যত মাছি তাড়িয়েই দিন কাটছে দোকানদারদের।

দিঘায় ওইসব হস্তশিল্পজাত সামগ্রী বিক্রেতাদের অভিযোগ, তাঁদের জন্য রাজ্য সরকার কোনও প্রকল্প চালু করেনি। এ প্রসঙ্গে স্থানীয় সাংসদ ও দিঘা-শঙ্করপুর উন্নয়ন পর্ষদের চেয়ারম্যান শিশির অধিকারী বলেন, ‘‘করোনার জন্য পর্যটক নেই। তাই ওই সব দোকানে বিক্রিবাট্টা তেমন হচ্ছে না। ওই সব ব্যবসায়ীর পাশে থাকার জন্য রাজ্য সরকারের নির্দিষ্ট কর্মসূচি নেই। তবে তাঁরা সরকারি সহায়তার জন্য আবেদন করলে তা রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হবে।’’

মধুমিতা পাত্র নামে এক ব্যবসায়ীর দাবি, ‘‘শাঁখের তৈরি জিনিস বিক্রি করে সংসার চালাতাম। চার মাস হতে চলল সব বন্ধ হয়ে গিয়েছে।’’ এই পরিস্থিতিতি চরম অনিশ্চয়তায় দিন কাটছে কয়েকশো ব্যবসায়ীর।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Digha Business
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE