এই চিঠিই পৌঁছে যাচ্ছে সকলের বাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
রাত পর্যন্ত দিব্যি ছিল বাড়ির পাঁচিল। সকালে উঠেই সেখানে বিচিত্র রঙের বাহার। লাল, সবুজ, গেরুয়া— রাজনীতির নানা রঙে নিজের বাড়ি চেনাই দায়। এমনটাই যে দস্তুর। রাত জেগে দেওয়াল লেখা আর সস্তা কাগজের পোস্টার সাঁটিয়ে দেওয়ার মধ্যে কেমন একটা উত্তেজনা রয়েছে। সে উত্তেজনার আঁচ ছড়ায় বহু দূর। মারামারি, হাতাহাতি থেকে বোমাবাজি, খুন—সবই ঘটে যায় দেওয়ালের দখল ঘিরে।
কিন্তু নেতারা এখন প্রচার করছেন নতুন ভাবে। সেখানে দেওয়ালে লিখে বা পোস্টার সাঁটিয়ে ‘নোংরা’ করার বিরুদ্ধেই কথা বলছেন তাঁরা। বরং হাতে হাতে গুঁজে দেওয়া যায় লিফলেট।
আর এ বিষয়ে একেবারে নতুন রকমের ভাবনা নিয়ে প্রচার করছেন ঘাটাল পুরসভার ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের নির্দল প্রার্থী তপন কুমার গুঁই। নির্দল হলেও তিনি মূলত কংগ্রেস সমর্থিত। তাই জনসংযোগ একেবারে কম নয়। তার উপর তাঁর অভিনব প্রচার-উদ্যোগ সাড়া ফেলে দিয়েছে এলাকায়। পাড়ার চায়ের দোকানে এই নিয়েই চলছে আড্ডা। রীতিমতো ডাক বিভাগের স্ট্যাম্প লাগিয়ে চিঠি পোস্ট করছেন তিনি ভোটারদের ঠিকানায়।
তপনবাবু একদিকে যেমন বলছেন তিনি দেওয়াল লিখন বা পোস্টার লাগিয়ে শহরের দৃশ্য দূষণ করতে চান না। তেমনই তাঁর প্রচার পত্রেও রয়েছে অভিনবত্ব। এলাকার বাসিন্দারাই বলছেন ভোট মানেই যেখানে প্রতিশ্রুতির বন্যা, সেখানে তপনবাবু লিখেছেন প্রতিশ্রুতিতে তিনি বিশ্বাস করেন না। বরং বিশ্বাস রাখছেন নিজের উপর আর ভোটারের শুভ বুদ্ধির উপর। ফলে আলাদা একটা আকর্ষণ তো তৈরি হচ্ছেই।
সাদা ইনল্যান্ডে তপনবাবু লিখেছেন, ‘‘শহরের সুষ্ঠু ও পরিচ্ছন্ন নাগরিক পরিষেবা প্রদানের দায়িত্ব কার হাতে দেওয়া উচিৎ সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার এটাই উপযুক্ত সময়। আপনি একজন সচেতন নাগরিক। আমার স্থির বিশ্বাস, সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে আপনার কোনও ভুল হবে না।’’ সূত্রের খবর, ভোটের ময়দানে লড়াই করার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই ভোটারদের ‘সুজনেষু’ সম্বোধন করে বাড়ি বাড়ি চিঠি পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেন তপনবাবু। ইনল্যান্ডে রামকৃষ্ণ ও সারদা মায়ের ছবি দিয়ে চিঠির বয়ান লিখেছেন তিনি।
এই ওয়ার্ডে মোট ৩৫০ টি পরিবারের বাস। মোট ভোটার ১১৪৫। তপনবাবু সব বাড়িতেই চিঠি পাঠিয়েছেন। পরে অবশ্য সমর্থকদের নিয়ে বাড়ি বাড়িতেও যাবেন। তপন বাবু বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে প্রচারটা একটু অন্য রকম হলে ভালই হয়। আমরা যেখানে শহর পরিচ্ছন্ন রাখার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, সেখানে নিজেরাই নাগরিকদের বাড়ির দেওয়াল নোংরা করছি। তাহলে প্রতিশ্রুতির দাম কী? তাই কোনও প্রতিশ্রুতিও দিইনি।’’
চিঠি পেয়ে খুশি ওয়ার্ডের বাসিন্দা কল্যাণ নন্দীগ্রামী, প্রতাপ ভট্টচার্যরা। তাঁদের কথায়, “ভোট কাকে দেব, সেটা ব্যক্তিগত ব্যাপার। তবে এই অভিনব প্রচার শহরের বাসিন্দা হিসাবে ভাল লাগছে।”
তপনবাবু যখন চিঠি পাঠাচ্ছেন তখন ওয়ার্ডের সব দেওয়ালেই প্রায় লেগে গিয়েছে ভোটের রঙ। শহর মুখ ঢেকেছে পোস্টারে। তবে অন্য দলের প্রার্থীরাও স্বাগত জানিয়েছেন তপনবাবুর উদ্যোগকে। আর এক নির্দল প্রার্থী সোমনাথ ঘোষ বলেন, ‘‘এটা তো একটা অন্যরকম প্রচার। মানুষ ভাল ভাবেই নেবে।’’
যদিও লড়াইয়ের ময়দানে জমি ছাড়তে চান না, তবু অভিনবত্বকে প্রশংসা করতে পিছপা নন তৃণমূল প্রার্থীও। ঘাটাল পুরসভার চেয়ারম্যান তথা তৃণমূল প্রার্থী বিভাস চন্দ্র ঘোষ বলেন, “যে যার মতো করে প্রচার করেন, তা করতেই পারেন। তবে সেখানে কোনও নতুন চমক থাকলে প্রশংসা করতে দোষ কোথায়?”
এ বারের ভোটে ঘাটাল পুরসভায় ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে মোট পাঁচ জন প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। তার মধ্যে মূলত তৃণমূল প্রার্থী বিভাস চন্দ্র ঘোষের সঙ্গে তপন কুমার গুঁইয়ের লড়াইটাই জমে উঠেছে। তার বেশির ভাগটাই যে এই চিঠির কারণে তা বলাই বাহুল্য।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy