Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪

মেঝেয় শুয়ে শিশু, আঁচড়ে দিল বিড়াল

কবিতার স্বামী কমল গুড়িয়া বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল আমার কন্যা। সকাল ৮টা নাগাদ আচমকা  রোগীর শয্যার উপর থেকে একটি বিড়াল লাফিয়ে আমার মেয়ের উপর পড়ে। বিড়ালের আঁচড়ে ওর ডান পা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।’’

আঁচড়ের দাগ। —নিজস্ব চিত্র

আঁচড়ের দাগ। —নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
তমলুক শেষ আপডেট: ০৯ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ ০১:৩৬
Share: Save:

শয্যা না মেলায় সদ্যোজাত কন্যাকে নিয়ে ঠাঁই হয়েছিল হাসপাতালের মেঝেতে। সেখানেই ওই সদ্যোজাতকে বিড়াল আঁচড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ করলেন তার পরিজন।

জেলা হাসপাতাল ও স্থানীয় সূত্রের খবর, তমলুক শহরের সংলগ্ন বাড়খন্ড গ্রামের বাসিন্দা কবিতা গুড়িয়াকে অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় গত ৪ ফেব্রুয়ারি তমলুক জেলা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ওই দিনই এক শিশু কন্যার জন্ম দেন কবিতাদেবী। শিশু- সহ কবিতাকে প্রসূতি বিভাগে রাখা হয়েছিল। রোগীর ভিড় থাকায় শয্যা পাননি তিনি। তাই ওই বিভাগেই মেঝেতে বিছানা করে তাঁদের রাখা হয়েছিল।

কবিতার স্বামী কমল গুড়িয়া বলেন, ‘‘বৃহস্পতিবার মায়ের পাশেই ঘুমিয়ে ছিল আমার কন্যা। সকাল ৮টা নাগাদ আচমকা রোগীর শয্যার উপর থেকে একটি বিড়াল লাফিয়ে আমার মেয়ের উপর পড়ে। বিড়ালের আঁচড়ে ওর ডান পা দিয়ে রক্ত বের হতে থাকে।’’ কবিতা বলেন, ‘‘শিশু নিয়ে মেঝেতে অনেকে রয়েছেন। আশে পাশে বিনা বাধায় বিড়াল ঘুরে বেড়াচ্ছিল। এ নিয়ে হাসপাতালের কারও কোনও ভ্রূক্ষেপ নেই। এভাবে বিড়াল ঝাঁপ মেরে আমার মেয়ের উপরেই পড়বে ভাবিনি। হাসপাতালের ভিতরে বিড়াল ঢোকা বন্ধের জন্য ব্যবস্থা নেওয়া দরকার।’’

কবিতার পরিজন হাসপাতাল সুপারের কাছে গিয়ে ঘটনার বিষয়ে জানাতে যান। অভিযোগ, এ নিয়ে প্রথমে গুরুত্ব দেননি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। স্থানীয় বাসিন্দা প্রবীর প্রধানের অভিযোগ, ‘‘হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকে জানানোর পর শিশুর চিকিৎসা এবং প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যাপারে জানাতে গিয়েছিলাম। কিন্তু প্রথমে আমাদের কথায় কেউ গুরুত্বই দেওয়া হয়নি।’’ পরে কিছুক্ষণ ধরে বিক্ষোভ দেখানোর পরে ওই শিশুটির চিকিৎসা এবং প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয় বলে দাবি।

সম্প্রতি, কলকাতার এন আর এস হাসপাতালে কুকুর ছানাকে পিটিয়ে মারার অভিযোগে দুই নার্সিং পড়ুয়াকে গ্রেফতার করা হয়েছিল। সে সময় পড়ুয়ারা দাবি করেছিলেন, সরকারি হাসপাতালের যত্রতত্র কুকুর, বিড়াল ঘুরে বেড়ায়। ওই ঘটনার পরে হাসপাতালে কুকুর, বিড়াল ঢোকা আটকানো নিয়ে সরব হয়েছিলেন সকলেই। কিন্তু বাস্তবে যে পরিস্থিতির কিছুই পরিবর্তন হয়নি, তার প্রমাণ মিলল পূর্ব মেদিনীপুরের ঘটনায়।

বৃহস্পতিবারের ঘটনায় হাসপাতালের নার্স ও কর্মীদের একাংশ জানিয়েছেন, প্রতিটি ওয়ার্ডেই রোগীদের শয্যার নীচ বিড়াল অবাধে ঘুড়ে বেড়ায়। রোগীদের খাবার দেওয়ার পরে বিড়ালদের উপদ্রব আরও বাড়ে। তাঁরা নিজেরাও যে ভয়ে ভয়ে থাকেন, সে কথা স্বীকার করেছেন নার্সেরাও।

শিশুকে বিড়ালে আঁচড়ে দেওয়ার ঘটনার কথা মেনে নিয়েছেন হাসপাতালের সুপার গোপাল দাস। তিনি বলেন, ‘‘শিশুটিকে প্রতিষেধক দেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ কিন্তু কুকুর-বিড়াল আটকাতে কী করা হচ্ছে হাসপাতালের তরফে? জবাবে সুপার বলেন, ‘‘হাসপাতালের ভিতর থেকে বিড়াল বের করতেও পদক্ষেপ করা হচ্ছে। এ রমক কাজ করে, এমন একটি বেসরকারি সংস্থাকে নিয়োগ করার জন্য কথা হয়েছে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Cat Tamluk Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE