Advertisement
১৮ এপ্রিল ২০২৪

পুরপ্রধান ‘গরিব’, ঘরে দামি মার্বেল

রামজীবনপুরের পুরপ্রধান নির্মল চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, প্রকৃত উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন তিনি।

সরকারি প্রকল্পে পেল্লায় বাড়ি।

সরকারি প্রকল্পে পেল্লায় বাড়ি।

অভিজিৎ চক্রবর্তী
রামজীবনপুর শেষ আপডেট: ২১ জুন ২০১৮ ০২:০৬
Share: Save:

পুরপ্রধান থাকেন মাটির ঘরে। তাই সরকারি প্রকল্প ‘সবার জন্য ঘরে’ বাড়ি তৈরি হচ্ছে তাঁর। পুরপ্রধান বলছেন, ‘‘আমি গরিব।’’ আর বিরোধীদের কটাক্ষ, পুরপ্রধান গরিবই বটে। তা না হলে আনুমানিক দেড় হাজার বর্গফুটের বাড়িতে দামি মার্বেল বসাতে পারেন!

রামজীবনপুরের পুরপ্রধান নির্মল চৌধুরীর বিরুদ্ধে বিরোধীদের অভিযোগ, প্রকৃত উপভোক্তাদের বঞ্চিত করে সরকারি প্রকল্পের সুবিধা নিচ্ছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে ক্ষমতা অপব্যবহারেরও। নিজের দুই ভাইকেও ‘সবার জন্য ঘর’ প্রকল্পের সুবিধা পাইয়ে দিয়েছেন। বিজেপির কাউন্সিলর গোবিন্দ মুখোপাধ্যায় বলেন, “প্রকৃত উপভোক্তারা ঘর পাচ্ছেন না। অথচ পুর-প্রধান নিজেই ঘর নিয়ে নিয়েছেন। শুধু নিজে নন। আপন দুই ভাইকেও ঘর পাইয়ে দিয়েছেন। একে দুর্নীতি ছাড়া আর কী বলব।” নির্মলবাবুর অবশ্য সাফাই, ‘‘আমি গরিব। আমার মাটির বাড়ি। পাকা বাড়ি না থাকলে এর সুবিধা নেওয়া যেতে পারে। আমিও নিয়েছি।” দুই ভাইয়ের প্রসঙ্গে তাঁর ব্যাখ্যা, “এটুকুই বলব ওরা (দুই ভাই) যোগ্য হিসাবেই পেয়েছে।” স্থানীয় সূত্রে খবর, মাটির বা়ড়িতেই থাকেন নির্মলবাবু। জমিও আছে। একই সঙ্গে পুজোও করেন। পরিবারে চার জন। দুই ছেলে রোজগার করেন। বিজেপির ঘাটাল সাংগঠনিক জেলা সভাপতি রতন দত্ত বললেন, “তিনি যদি গরিব হন তাহলে তাঁর ছেলের গাড়ি থাকে কী করে? আবার শুনেছি সেই গাড়ি ওই পুরসভায় ভাড়ায় খাটানো হয়। এটাও তো আর এক ধরনের দুর্নীতি।” গাড়ি প্রসঙ্গে চেয়ারম্যানের জবাব, “পুরসভার গাড়ি আছে। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ ছেলের গাড়ি ভাড়ায় নিতে পারে।” সে ক্ষেত্রেও উঠছে প্রশ্ন, রামজীবনপুরের মত ছোট পুরসভায় পুরপ্রধানের প্রশ্রয় না থাকলে সেটাই বা কী ভাবে সম্ভব।

সূত্রের খবর, ‘সবার জন্য ঘর’ কেন্দ্র-রাজ্য যৌথ প্রকল্প। এই প্রকল্পে ৩২৫-৪০০ বর্গফুটের মধ্যে ঘর তৈরি হয়। উপভোক্তা পিছু বরাদ্দ করা হয় ৩ লক্ষ ৬৮ হাজার টাকা। কেন্দ্র দেয় দেড় লক্ষ টাকা। ১ লক্ষ ৯৩ হাজার টাকা দেয় রাজ্য। উপভোক্তাকে দিতে হয় ২৫ হাজার টাকা। অন্য শর্তাবলি ঠিক থাকলে পুরপ্রধানও এই প্রকল্পে ঘর পেতে পারেন। তবে বিরোধীদের অভিযোগ, পুরপ্রধানের বা়ড়ির ক্ষেত্রে ভাঙা হচ্ছে নিয়ম। অভিযোগ, ৩২৫ নয়, পুরপ্রধানের জন্য প্রায় দেড় হাজার বর্গফুটের বাড়ি তৈরি হচ্ছে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে নজরদারি করবে কে? প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে,পুর এলাকায় এই ঘর তৈরির দেখভালের দায়িত্বে স্টেট আরবান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি (সুডা)। রামজীবনপুরে পুরপ্রধানের ঘর-বিতর্ক প্রসঙ্গে সুডার অধিকর্তা সুতনু প্রসাদ কর বলেন, “আমি জানি না। খোঁজ নেব।”

ক্ষোভ তৈরি হয়েছে তৃণমূলের অন্দরেও। এক তৃণমূল নেতা বলেন, “পুরপ্রধান নিজেই সুবিধা নিলে তো আমজনতার কাছে ভুল বার্তা পৌঁছবে। বিরোধীদেরই কী জবাব দেব আমরা।” তৃণমূলের বিধায়ক ছায়া দোলইয়ের অবশ্য মন্তব্য, “আমার বিষয়টি জানা নেই। এ ক্ষেত্রে সমস্ত নিয়ম মেনে করা হয়েছে কি না, সে বিষয়ে কথা বলব।” নিজস্ব চিত্র

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

House Chairman
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE