Advertisement
১৭ এপ্রিল ২০২৪

বাসে ব্যাগ, পরীক্ষার্থীকে বাইকে বসিয়ে ছুটলেন সিভিক ভলান্টিয়ার

ঋত্বিকের মুখে সমস্যার কথা শোনামাত্রই এগিয়ে আসেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। ঋত্বিককে বাইকে বসিয়ে বাসটি যে পথ ধরে গিয়েছে সে দিকে রওনা হয়ে যান গুরুপ্রসাদ। এরপর ‘ঝড়ের গতিতে’ প্রায় সাত কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছন বাসের কাছে। বাসটি তখন পিঁড়াকাটার কাছাকাছি।

ঋত্বিককে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে গুরুপ্রসাদ ভাণ্ডারি। নিজস্ব চিত্র

ঋত্বিককে নিয়ে পরীক্ষাকেন্দ্রের পথে গুরুপ্রসাদ ভাণ্ডারি। নিজস্ব চিত্র

বরুণ দে
শালবনি শেষ আপডেট: ১৭ মার্চ ২০১৮ ০১:২৮
Share: Save:

মাধ্যমিক পরীক্ষা শুরু হতে তখনও বেশ কিছুক্ষণ বাকি। পরীক্ষাকেন্দ্রের কাছে বাসস্ট্যান্ডে নামার পরে পরীক্ষার্থী ঋত্বিক মহাদণ্ডর মুখ কাঁচুমাচু! সঙ্গে যে ব্যাগ ছিল সেই ব্যাগই যে বাসে থেকে গিয়েছে। শুধু তো আর পিচবোর্ড নয়, ব্যাগে অ্যাডমিট কার্ডও রয়েছে। অ্যাডমিট কার্ড না দেখালে পরীক্ষাকেন্দ্রে ঢুকতেই পারবে না সে। শুক্রবার শালবনির মৌপালের ঘটনায় এক সিভিক ভলান্টিয়ারের সাহায্যে অ্যাডমিট ফিরে পায় ঋত্বিক। পরীক্ষাও দিয়েছে নির্বিঘ্নেই।

পরীক্ষা শেষে ঋত্বিক বলছিল, “ওই দাদাকে অনেক ধন্যবাদ। ওই দাদা না থাকলে হয়তো পরীক্ষা দেওয়াই হত না।” মৌপাল হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক প্রসূনকুমার পড়িয়া বলছিলেন, “ওই সিভিক ভলান্টিয়ার খুব ভাল কাজ করেছেন।’’ভাদুতলা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক অমিতেশ চৌধুরীও বলছেন, “সিভিক ভলান্টিয়ার যে ভাবে ওই পরীক্ষার্থীর পাশে দাঁড়িয়েছেন তা সত্যিই প্রশংসনীয়।”

ভাদুতলা হাইস্কুলের ছাত্র ঋত্বিকের মাধ্যমিকের পরীক্ষাকেন্দ্র পড়েছিল মৌপাল হাইস্কুল। অন্য দিনের মতো শুক্রবারও ভাদুতলা থেকে বাসে করে মৌপাল আসে ঋত্বিক। সঙ্গে ব্যাগ ছিল। ব্যাগে পিচবোর্ড, অ্যাডমিট কার্ড, পেন, পেনসিল, জলের বোতল প্রভৃতি ছিল। ভাদুতলায় বাসে ওঠার সময় ব্যাগটি কাঁধেই ছিল। পরে বাসে ওঠার পরে ব্যাগটি বাসে রেখে দেয় সে। বাসে ভিড় ছিল। মৌপালে পৌঁছনোর পরে ব্যাগ ছাড়াই বাস থেকে নেমে পড়ে সে। বুঝতেই পারেনি ব্যাগটি বাসে ছাড়া হয়ে গিয়েছে। বাসস্ট্যান্ডে নামার কিছুক্ষণ পরে সে বুঝতে পারে ব্যাগটি আর সঙ্গে নেই। বাসের পিছনে দৌড়নো দূর অস্ত, অ্যাডমিট কার্ড ছাড়া সে পরীক্ষা দেবে কী করে এই ভেবেই কাঁদো কাঁদো অবস্থা। সে স্থানীয়দের সব কিছু জানায়।

পুলিশ সূত্রে খবর, মৌপাল হাইস্কুলে পরীক্ষাকেন্দ্রের আশেপাশে পুলিশের নজরদারি দল ছিল। সেই দলেই ছিলেন শালবনির গড়মালে বাসিন্দা গুরুপ্রসাদ ভাণ্ডারি নামে এক সিভিক ভলান্টিয়ার। ঋত্বিকের মুখে সমস্যার কথা শোনামাত্রই এগিয়ে আসেন ওই সিভিক ভলান্টিয়ার। ঋত্বিককে বাইকে বসিয়ে বাসটি যে পথ ধরে গিয়েছে সে দিকে রওনা হয়ে যান গুরুপ্রসাদ। এরপর ‘ঝড়ের গতিতে’ প্রায় সাত কিলোমিটার পথ পেরিয়ে পৌঁছন বাসের কাছে। বাসটি তখন পিঁড়াকাটার কাছাকাছি। বাস থেকে ব্যাগ নিয়ে ফের পরীক্ষাকেন্দ্রে আসে ওই পরীক্ষার্থী। সুষ্ঠু ভাবেই পরীক্ষা দেয়। ঋত্বিক বলছিল, “এ দিনের কথা কোনও দিনও ভুলব না। বড় হয়ে আমিও এ ভাবে মানুষের পাশে দাঁড়াতে চাই।” আর সকলে যাঁকে ধন্যবাদ দিচ্ছেন সেই গুরুপ্রসাদ অবশ্য বলেন, “আমি আমার দায়িত্বই পালন করেছি। ও ভাল ভাবে পরীক্ষা দিয়েছে। এটা শুনেই ভাল লাগছে।”

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE