জাহাজ থেকে মাল খালাস করা নিয়ে ফের সমস্যা হলদিয়া বন্দরে। এ বারও অভিযোগের আঙুল শাসকদলের শ্রমিক সংগঠন আইএনটিটিইউসি-র দিকে। অভিযোগ, ‘স্টিল অথরিটি অব ইন্ডিয়া লিমিটেড’-এর (সেল) জাহাজ থেকে বার্থে পণ্য নামানোর জন্য পে-লোডার নিয়ে আসার পথে বাধা দেওয়া হয়েছে। এই ঘটনার জেরে মঙ্গলবার রাত থেকে হলদিয়া বন্দরের ৮ ও ১৩ নম্বর বার্থে আটকে রয়েছে ‘কোকিং কোল’ বোঝাই সেল-এর দু’টি জাহাজ। এবং উস্কে দিয়েছে ২০১২-র অক্টোবরে এবিজি সংস্থার সঙ্গে তৃণমূলের সংঘাতে স্মৃতি। যার পরিণতিতে হলদিয়া ছেড়েই চলে যায় সংস্থাটি।
‘হলদিয়া ডেভেলপমেন্ট অথরিটির চেয়ারম্যান’ তথা তমলুকের তৃণমূল সাংসদ শুভেন্দু অধিকারীর অবশ্য দাবি, ‘‘বন্দর কর্তৃপক্ষের অপদার্থতার জন্যই এই ঘটনা ঘটেছে। এর সঙ্গে তৃণমূলের কোনও সম্পর্ক নেই।’’
বন্দর সূত্রের খবর, মঙ্গলবার দুপুর থেকে ক্রেন দিয়ে জাহাজ দু’টি থেকে পণ্য নামানোর কাজ শুরু করেন বন্দর কর্তৃপক্ষ। একটা সময় মাল খালাসের জন্য পে-লোডারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু বন্দরের কাছে পে-লোডার না থাকায় বার্থ থেকে বন্দরের বাইরে পণ্য খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত বেসরকারি সংস্থা ‘রিপ্লে অ্যান্ড কোম্পানি’র কাছে এই যন্ত্রটি চান সেল কর্তৃপক্ষ। কিন্তু তারা পে-লোডার দিতে চায়নি।
‘রিপ্লে’-এর জেনারেল ম্যানেজার প্রসিত সিংহ বলেন, ‘‘আমরা বার্থ থেকে মাল খালাসের টেন্ডার পেয়েছি। কিন্তু জাহাজ থেকে বার্থে মাল খালাসের জন্য সেলকে পে-লোডার দেওয়ার দায়িত্ব আমাদের নয়। টাকার বিনিময়ে পে-লোডার দিতে আমরা রাজি। তবে তার খরচ কে দেবে, তা আগে ঠিক হোক।’’
এই অবস্থায় পণ্য খালাসের দায়িত্বপ্রাপ্ত অন্য সংস্থাগুলির সঙ্গে আলোচনা শুরু করে ‘সেল’। ‘ফাইভ স্টার’ নামে একটি সংস্থা পে-লোডার দিতে রাজি হয়। বুধবার সন্ধ্যায় পে-লোডার নিয়ে যাওয়ার পথে কয়েক জন বাধা দেয় বলে বন্দর কর্তৃপক্ষের অভিযোগ।
কারা বাধা দিল? বন্দর কর্তৃপক্ষের মুখে কুলুপ। কোনও মন্তব্য করতে চাননি সেলের রিজিওনাল ম্যানেজার মানস বসুও। তবে ‘ফাইভ স্টার’-এর মালিক শেখ মোজাফ্ফর বলেন, ‘‘জাহাজ থেকে পণ্য নামানোর জন্য আমরা পে-লোডার দিতে রাজি হয়েছি। কিন্তু ইউনিয়ন থেকে আমাদের বলা হয়, ওই বার্থে অন্য সংস্থা পণ্য খালাসের কাজ করে। আমরা কেন সেখানে পে-লোডার নিয়ে যাচ্ছি?’’ ‘ইউনিয়ন’ বলতে তিনি কাদের বোঝাতে চাইছেন? জবাব দেননি মোজাফ্ফর।
তবে বন্দর সূত্রের খবর, তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনই এই ঘটনার পিছনে। তাই পে-লোডার নিয়ে যাওয়ার সময় বাধা দেওয়া হয়েছে, এই খবর শোনা মাত্র বন্দর কর্তৃপক্ষ এলাকার আইএনটিটিইউসি নেতা শ্যামল আদকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেন। আনন্দবাজারের পক্ষ থেকে অবশ্য বহু চেষ্টাতেও এ দিন শ্যামলবাবুর সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
গোটা ঘটনার পিছনে বন্দর কর্তৃপক্ষের গফিলতি রয়েছে, শুভেন্দুর তোলা এই অভিযোগ মানতে চাননি হলদিয়া বন্দরের জেনারেল ম্যানেজার (প্রশাসন) অমলকুমার দত্ত। তাঁর বক্তব্য, ‘‘রিপ্লে-কে শো-কজ করা হয়েছে। সমস্যার সমাধানে অন্য একটি সংস্থার সঙ্গে কথা বলেছি। তারা নতুন দর অনুযায়ী পে-লোডার দিতে রাজি হয়েছে। বিষয়টি সেল কর্তৃপক্ষকেও জানানো হয়েছে। তারা রাজি হলেই পণ্য খালাসের কাজ শুরু হবে।’’
তবে সমস্যা দ্রুত মিটবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে হলদিয়া বন্দরের গতিপ্রকৃতি সম্পর্কে ওয়াকিবহালদের। তাঁরা মনে করিয়ে দিচ্ছেন যে, আইএনটিটিইউসি-র সঙ্গে সংঘাতের জেরে এবিজি-কে বন্দর ছেড়ে বিদায় নিতে হয়েছিল। তৃণমূল নেতৃত্বের চাপে বাড়তি শ্রমিক নিয়োগ করে লোকসান হওয়ায় বেঁকে বসেছিল এবিজি। তার জেরে তৃণমূল কর্মীরা সংস্থার কর্তাদের অপহরণ করেছিল বলে অভিযোগ ওঠে। তার পর আর হলদিয়ায় থাকা নিরাপদ বলে মনে করেননি এবিজি কর্তৃপক্ষ। ফলে চলতি সংঘাতের জল কত দূর গড়াতে তাই ভেবেই আশঙ্কিত বন্দরের লোকজন।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy