ধস: বুধবার সকালে আচমকাই ধসে পড়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেঝে। স্বাস্থ্য দফতরের আধিকারিকরা তা দেখছেন। ছবি: কৌশিক সাঁতরা
ঘড়িতে তখন বেলা ১১টা। আচমকাই ধসে পড়ল ঘাটালের রত্নেশ্বরবাটী উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রের একতলার মেঝে। বুধবার ওই দুর্ঘটনায় ৬ জন শিশু সহ ২০ জন জখম হয়েছেন। তাদের মধ্যে ১৩ জনকে প্রাথমিক চিকিৎসার পর ছেড়ে দেওয়া হয়। একটি শিশু-সহ সাতজন ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘আহতেরা সকলেই সুস্থ। কী ভাবে এমনটা ঘটল তার তদন্ত শুরু হয়েছে। গত জুলাই মাসে বন্যার সময় স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি জলে ডুবে ছিল। কী কারণে এমনটা ঘটল হল, জানতে বিশেষজ্ঞ কমিটি তৈরি হচ্ছে। প্রয়োজনে ঠিকাদারকে শো-কজও করা হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, বছর খানেক আগে মনোহরপুর পঞ্চায়েতের ওই গ্রামে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি তৈরি হয়। প্রাথমিক চিকিৎসা ছাড়াও শিশু এবং গর্ভবতী মহিলাদের টিকাকরণও হয় এখানে। প্রতি বুধবার টিকাকরণের জন্য ভিড় করেন প্রসূতি, শিশুরা। এদিনও টিকা নেওয়ার জন্য রত্নেশ্বরবাটী, হরিশপুর, শ্যামসুন্দরপুর গ্রামের ২০-২৫ জন এসেছিলেন। ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মীরাও। একতলার ঘরে বেশ ভিড়ও ছিল। আচমকাই স্বাস্থ্যকেন্দ্রের মেঝেতে বড় ফাটল দেখা যায়। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে পুরো মেঝেই ফুট চারেক ধসে পড়ে। তখন পুরোদমে প্রসূতি এবং শিশুদের টিকা দেওয়ার কাজ চলছিল। কেউ দাঁড়িয়ে, কেউ বসে ছিলেন। আচমকাই মেঝে ধসে যাওয়ায় টাল সামলাতে না পেরে অনেকেই পড়ে যান। তার মধ্যে শিশুরাও ছিল। ভয়ে কান্নাকাটি শুরু করে দেন অনেকে। গর্তে পড়ে ও ছোটাছুটি করতে গিয়ে বেশ কয়েকজন জখম হন। কারও মাথায় লাগে, কারও হাত-পা ছড়ে যায়।
খবর পেয়ে স্থানীয় লোকজন ছুটে এসে সকলকে উদ্ধার করেন। পৌঁছে যান বীরসিংহ গ্রামীণ হাসপাতালের সুপার মনোজিৎ বিশ্বাস। স্বাস্থ্যকর্মীদের নিয়ে স্বাস্থ্যকেন্দ্রের বাইরেই শুরু হয় চিকিৎসা। আসেন জেলার উপ মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক, ঘাটালের বিডিও, ঘাটাল থানার ওসি-সহ প্রশাসনিক আধিকারিকরা। আহত তিন মাসের একটি শিশু-সহ সাতজনকে তাড়াতাড়ি গাড়িতে ঘাটাল সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। এ দিন হাসপাতালে আহতদের দেখতে যান ঘাটালের মহকুমা শাসক পিনাকীরঞ্জন প্রধান।
এ দিন ছেলেকে টিকা দিতে উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রে এসেছিলেন রিতা দাস। তাঁর কথায়, ‘‘ছেলেকে টিকা দিতে এসেছিলাম। আচমকাই দেখি হাসপাতালের মেঝে নীচে নেমে যাচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গে ছেলেকে কোলে আঁকড়ে ধরে বসে পড়ি। আমার মাথায় আঘাত লেগেছে। ছেলেও অল্প আহত হয়েছে।” কাকলি চক্রবর্তী নামে এক স্বাস্থ্যকর্মী বলেন, ‘‘আমি টিকা দিচ্ছিলাম। স্বাস্থ্যকর্মী ও রোগী নিয়ে ঘরে ২০-২৫ জন ছিল। হঠাৎ মেঝে ধসে সকলেই কমবেশি আহত হয়েছেন। তবে বড় দুঘর্টনা ঘটতে পারতো। কারণ, সবে রোগী আসতে শুরু করেছিল।”
পঞ্চায়েত সূত্রে খবর, স্বাস্থ্য দফতরের আর্থিক সহযোগিতায় ঘাটাল পঞ্চায়েত সমিতির নজরদারিতে তৈরি হয়েছিল উপ-স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, মাত্র এগারো মাস আগে এটি চালু হয়েছিল। এরই মধ্যে এমন দুর্ঘটনায় স্বাভাবিক ভাবেই ভবনের নির্মাণে ত্রুটির অভিযোগ তুলেছেন এলাকার মানুষ। তাঁদের দাবি, নিম্নমানের সরঞ্জাম দিয়ে তৈরি হয়েছিল স্বাস্থ্যকেন্দ্রটি। তাই বছর ঘুরতে না ঘুরতেই ভেঙে পড়ল মেঝে।
মহকুমা শাসক বলেন, “পুরো বিষয়টি খোঁজ নেওয়া হচ্ছে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy