Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

দুই পাড়ার বচসা থেকে মারামারি, আক্রান্ত পুলিশও

মাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল। আর তার জেরেই দফায় দফায় মারামারিতে উত্তেজনা ছড়াল হলদিয়া টাউনশিপে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশ। আবার পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠল মারধরের অভিযোগ। ঘটনায় জড়িয়ে গেল যুযুধান রাজনৈতিক দলও। ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। হলদিয়া টাউনশিপের মাখনবাবুর বাজার এলাকায় মাছ বিক্রি করছিলেন দু’জন।

ভাঙচুরের পর তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। হলদিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

ভাঙচুরের পর তৃণমূলের দলীয় কার্যালয়। হলদিয়ায়। —নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
হলদিয়া শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০১৫ ০০:৫৬
Share: Save:

মাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল। আর তার জেরেই দফায় দফায় মারামারিতে উত্তেজনা ছড়াল হলদিয়া টাউনশিপে। পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে আক্রান্ত হল পুলিশ। আবার পুলিশের বিরুদ্ধেও উঠল মারধরের অভিযোগ। ঘটনায় জড়িয়ে গেল যুযুধান রাজনৈতিক দলও।

ঘটনার সূত্রপাত রবিবার সন্ধ্যায়। হলদিয়া টাউনশিপের মাখনবাবুর বাজার এলাকায় মাছ বিক্রি করছিলেন দু’জন। তাঁরা বিষ্ণুরামচকের বাসিন্দা। রাত ৯টা নাগাদ আপনি মার্কেটের রাস্তার মুখে বসে মাছ বিক্রি করতে দেখে তাদের সেখান থেকে উঠে যেতে বলেন চকতাড়োয়ান বাজারপাড়া এলাকার দু’একজন। সেই সময় দু’পক্ষের বচসা হয়। চুরি করা মাছ বাজারের বাইরে বসে কম দামে বিক্রি করা হচ্ছে অভিযোগ তুলে ওই দুই ব্যবসায়ীকে মারধর করা হয়। অভিযোগ ফেলে দেওয়া হয় মাছও।

সে সময় ওই দুই ব্যবসায়ী ফোন করে তাঁদের পাড়া থেকে লোকজন ডেকে নিয়ে আসেন। শুরু হয় মারামারি। হলদিয়া টাউনশিপ ইনভেস্টিগেশন সেন্টারের পুলিশ এসে তাদের নিরস্ত করে। কিন্তু রাত ১১টা নাগাদ আবার গণ্ডগোল
শুরু হয়।

জানা গিয়েছে ওই দিন গণেশ পুজোর বিসর্জনের পর ফেরার পথে চকতাড়োয়ান বাজারপাড়ার বাসিন্দারা ফের মাখনবাবুর বাজারে এসে খুঁজতে শুরু করেন বিষ্ণুরামচকের লোকজনদের। অভিযোগ কাউকে না পেয়ে তারা পাশের তৃণমূল কার্যালয়ে হামলা চালায়। চেয়ার, টেবিল, টিভি-সহ অন্যান্য জিনিসপত্র ভাঙচুর করা হয়। সে সময় হলদিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকেশ সিংহ, এসডিপিও চন্দন ঘোষের নেতৃত্ব র‍্যাফ ও বিরাট পুলিশ বাহিনী এলে তাদেরও তাড়া করা হয়। চকতাড়োয়ানের ভেতরে ঢুকে অভিযুক্তদের ধরতে গেলে পুলিশকে লক্ষ করে বাসিন্দারা ইটপাটকেল ছুড়তে শুরু করেন। ইটের আঘাতে জখম হন দুই এএসআই-সহ মোট পাঁচজন পুলিশ কর্মী জখম হয়েছেন। তাদের হলদিয়া মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসা করানো হয়েছে।

পুলিশের উপর হামলা, সরকারি কাজে বাধা দেওয়া ও তৃণমূলের পার্টি অফিস ভাঙচুরের ঘটনায় চকতাড়োয়ান থেকে সাত জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। সোমবার তাঁদের হলদিয়া মহকুমা আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।

এ দিকে স্থানীয় বাসিন্দারা পুলিশের বিরুদ্ধেই অত্যাচারের অভিযোগ তুলেছেন। বাজারপাড়ার বাসিন্দা সঙ্গীতা ভুয়ে অভিযোগ করেন, ‘‘রবিবার গভীর রাতে পুলিশ পাড়ায় এসে আমাদের উপর অত্যাচার চালিয়েছে। বাড়ির দরজা ভেঙে ভিতরে ঢুকে আমার বাবাকে তিনতলার ছাদ থেকে দোতলার ছাদে ফেলে দিয়েছে। বাবা বন্দরের হাসপাতালে ভর্তি।’’ যদিও জানা গিয়েছে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালাতে গিয়েই পড়ে গিয়েছেন ধর্মধ্বজ ভুঁইয়া নামে ওই ব্যক্তি। পুলিশের অবশ্য দাবি গোটা ঘটনায় মূল অভিযুক্তদের মধ্যে অন্যতম ওই ধর্মধ্বজ ভুঁইয়া।

ওই পাড়ারই বাসিন্দা নিতাই জানা বলেন, ‘‘বাজারের ভিতরে কী হয়েছে তা আমরা জানিনা। আমরা কোথাও গণ্ডগোল করতে যায়নি। অথচ অন্যায়ভাবে পুলিশ আমাদের বাড়ি বাড়ি ঢুকে মারধর করেছে, মহিলারাও রেহাই পাননি।’’

যদিও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রাকেশ সিংহ জানান, ‘‘মাছ বিক্রিকে কেন্দ্র করে দু’পাড়ার গণ্ডগোল আটকাতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছে পুলিশ। পুলিশ কোনও অত্যাচার করেনি। ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার অভিযোগও ঠিক নয়। সাত জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।’’

অন্য দিকে তৃণমূলের কার্যালয় ভাঙচুরের ঘটনায় লেগেছে রাজনীতির রং। সিপিএমের ইন্ধনেই দুষ্কৃতীরা এ কাজ করেছে বলে তৃণমূলের অভিযোগ। হলদিয়া পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূলের দেবপ্রসাদ মণ্ডল সোমবার সকালে জানান, ‘‘দু’টি পাড়ার মধ্যে গণ্ডগোল হয়েছে। সেই ঘটনায় সিপিএমের লোকজন বাজারপাড়ার কিছু লোককে আমাদের অফিস ভাঙচুরে জন্য উসকানি দিয়েছে। পুলি‌শের কাছে অভিযোগ জানিয়েছি।’’

যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে সিপিএমের জেলা কমিটির সদস্য অচিন্ত্য শাসমল জানান, ‘‘ভিত্তিহীন অভিযোগ। এই ঘটনায় আমাদের কোনও হাত নেই। বরং আমরা বাজারপাড়ায় গিয়ে দেখছি পুলিশই খুব অত্যাচার করেছে।’’

রাত ভর গণ্ডগোলের জেরে সোমবার আপনি মার্কেট এলাকা ও মাখনবাবুর বাজার চত্বর থমথমে, দোকানপাট বন্ধ। মার্কেট কমিটির সম্পাদক শুভেন্দু সর্দার জানান, ‘‘যে দু’জন মাছ ব্যবসায়ীকে কেন্দ্র করে গণ্ডগোল, তাঁরা আমাদের বাজারের ব্যবসায়ী নন। তবে তাঁদের বিষয়ে বাজার কমিটি হস্তক্ষেপ করেনি। এই গণ্ডগোলের সঙ্গে বাজার কমিটির কোনও সম্পর্ক নেই।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE