Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
Jhargram Super Speciality Hospital

আত্মহত্যার অনুমতি চান হাসপাতালের ঠিকাকর্মীরা

আবেদনপত্রে ঠিকাকর্মীরা লিখেছেন, ‘এই দুর্বিষহ জীবন রাখা শুধু অর্থহীন নয়, বিড়ম্বনার কারণও বটে। আমরা আত্মহত্যাই করতে চাই। আপনি অনুমতিটুকু দিন। যাতে আমরা এটা ভেবে মরতে পারি যে একটি অক্ষম অপারগ প্রশাসনের অধীনে আমাদের জীবন ছিল যা সত্যিই বাঁচার যোগ্য নয়’।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঝাড়গ্রাম শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২০ ০৫:৩০
Share: Save:

জেলাশাসকের কাছে চিঠি দিয়ে আত্মহত্যার অনুমতি চাইলেন ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের ঠিকাকর্মীরা। বুধবার জেলাশাসকের দফতরে আত্মহত্যার অনুমতি প্রার্থনা করে জেলাশাসকের দফতরে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন তাঁরা।

ঝাড়গ্রাম জেলা সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালে ১৪৬ জন ঠিকাকর্মী কাজ করেন। বেসরকারি সংস্থার অধীনে নিয়োগ হওয়া ওই কর্মীরা হাসপাতালের ওয়ার্ড বয়, ওয়ার্ড গার্ল, সিকিয়োরিটি ও সুপার ভাইজারের কাজ করেন। তিন শিফটে ওই ১৪৬ জন ঠিকা কর্মী উদয়াস্ত পরিশ্রম করলেও তাঁরা নিয়মিত বেতন পান না বলে অভিযোগ। তাঁদের কোনও ছুটি নেই। অভিযোগ, চার বছর কাজ করলেও তাঁদের কারও বেতন বাড়েনি। পুজোর বোনাসও ঠিকমতো পান না তাঁরা। নাগাড়ে কাজ করে গেলেও তাঁদের ‘ওভার টাইম’ বলে কিছু নেই। তার উপরে চাকরির স্থায়িত্বের কোনও নিশ্চয়তাও নেই। স্বাস্থ্যকর্মীর সমতুল কাজ বা তারও বেশি পরিশ্রম করলেও তাঁরা ঠিকাকর্মী। তাঁরা কাজ না করলে হাসপাতাল অচল হয়ে যায়। ঠিকাকর্মীরা জানাচ্ছেন, মুখ্যমন্ত্রীর শুভাকাঙ্ক্ষী ও সমর্থক হিসেবে তাঁরা আন্দোলনেও যেতে পারছেন না।

২০১৬ সালে একটি বেসরকারি সংস্থার অধীনে চুক্তিভিত্তিক ঠিকাকর্মীদের নিয়োগ করা হয়েছিল। এই কর্মীদের বেতন বেসরকারি সংস্থা দেয়। ২০১৮ সালে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের সঙ্গে বেসরকারি সংস্থাটির চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ায় অন্য একটি বেসরকারি সংস্থাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তখন ওই ঠিকাকর্মীরাই নতুন সংস্থার অধীনে কাজ করতে থাকেন। কিন্তু বেতন না বাড়ায়, নিয়মিত বেতন না পাওয়ায়, ঠিকমতো বোনাস না পাওয়ায় এবং পিএফের আওতায় না আসায় ওই কর্মীরা সরাসরি স্বাস্থ্য দফতরের অধীনে কাজ করতে চান।

ঠিকাকর্মীরা তাঁদের সমস্যার বিষয়ে বহুবার স্বাস্থ্য দফতরের দ্বারস্থ হয়েছেন। কিন্তু স্বাস্থ্য দফতর জানিয়ে দেয়, বেসরকারি সংস্থার সঙ্গে তাদের চুক্তি। সংস্থার ঠিকাকর্মীদের বিষয়ে স্বাস্থ্য দফতরের হস্তক্ষেপ করার কোনও এক্তিয়ার নেই। সূত্রের খবর এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনের উপরে চাপ বাড়াতে আত্মহত্যার অনুমতি চেয়ে জেলাশাসকের দ্বারস্থ হয়েছেন ঠিকাকর্মীরা।

আবেদনপত্রে ঠিকাকর্মীরা লিখেছেন, ‘এই দুর্বিষহ জীবন রাখা শুধু অর্থহীন নয়, বিড়ম্বনার কারণও বটে। আমরা আত্মহত্যাই করতে চাই। আপনি অনুমতিটুকু দিন। যাতে আমরা এটা ভেবে মরতে পারি যে একটি অক্ষম অপারগ প্রশাসনের অধীনে আমাদের জীবন ছিল যা সত্যিই বাঁচার যোগ্য নয়’।

বেসরকারি সংস্থাটির হাসপাতালের ফেসিলিটি ম্যানেজার দীপু সিংহ বলেন, ‘‘সংস্থা থেকে কর্মীদের এখন প্রতি মাসে নিয়মিত বেতন দেওয়া হচ্ছে। কর্মীরা আত্মহত্যার আবেদন করে জেলাশাসকের দফতরে আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন বলে জানিয়েছেন।’’

জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, ‘‘বিষয়টি রাজ্য প্রশাসনের শীর্ষস্তরে জানানোর বিষয়ে জেলাশাসক সিদ্ধান্ত নেবেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Jhargram Super Speciality Hospital Contractual workers
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE