Advertisement
২৩ এপ্রিল ২০২৪
মোট সংখ্যাটা ৮। পজ়িটিভ ৩, নেগেটিভ ৫।
Coronavirus

স্বস্তি ফিরল পাঁচ নেগেটিভে, দাসপুর জুড়ে সচেতনতায় জোর

যুবকের সংস্পর্শে আসা বাকি যে ৫ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছিল, রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাঁদের সকলের।

 নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর ও দাসপুর শেষ আপডেট: ০৭ এপ্রিল ২০২০ ০১:৫৭
Share: Save:

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের মুম্বই ফেরত যুবকের পরিবারের সন্দেহভাজন সকলের করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট হাতে পেয়ে এই হিসেবে খানিক স্বস্তিতে জেলার স্বাস্থ্যভবন।

মুম্বই ফেরত ওই যুবকই জেলার প্রথম করোনা আক্রান্ত। তাঁর সূত্রেই পরে আক্রান্ত হয়েছেন তাঁর বাবা ও স্ত্রী। যুবকের সংস্পর্শে আসা বাকি যে ৫ জনের করোনা পরীক্ষা হয়েছিল, রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে তাঁদের সকলের। ওই ৫ জনের মধ্যে ৪ জনের শারীরিক পরিস্থিতিও ঠিকঠাক রয়েছে। ফলে, রবিবার রাতেই তাঁদের মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতাল থেকে ‘ছুটি’ দেওয়া হয়েছে। তাঁরা দাসপুরের বৈকুন্ঠপুরের এক লজে সরকারি কোয়রান্টিন সেন্টারে ফিরে গিয়েছেন। করোনা হাসপাতালে আছেন একমাত্র মুম্বই ফেরত সেই যুবকের মা। বছর চুয়াল্লিশের ওই মহিলারও শারীরিক পরিস্থিতি ঠিক রয়েছে। তবে চিকিৎসকেরা মনে করেছেন, ওই মহিলাকে এখন হাসপাতালেই পর্যবেক্ষণে রাখা জরুরি। সূত্রের খবর, চলতি সপ্তাহের শেষে ফের একবার তাঁর করোনা পরীক্ষা হবে। দ্বিতীয় দফার রিপোর্টও নেগেটিভ এলে তাঁকে হাসপাতাল থেকে ছাড়ার কথা ভাবা হবে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা মানছেন, ‘‘ওই পরিবারকে নিয়ে একটা দুশ্চিন্তা ছিলই। ৮ জনের মধ্যে ৫ জনের রিপোর্ট নেগেটিভ এসেছে। এটা স্বস্তিরই।’’

গোড়া থেকেই দাসপুরের ওই পরিবারকে নিয়ে দুশ্চিন্তা ছিল জেলার স্বাস্থ্যকর্তাদের। কারণ, চিকিৎসকদের নির্দেশ উড়িয়ে মুম্বই ফেরত ওই যুবক অবাধে অনেকের সঙ্গে মেলামেশা করেছেন। ঘরবন্দি থাকেননি। আশঙ্কা যে অমূলক ছিল না, পরে পরে তা বোঝাও গিয়েছে। শুরুতে ওই যুবকের করোনা ধরা পড়েছিল। পরে তাঁর বাবা ও স্ত্রী আক্রান্ত হন। তিনজনই এখন কলকাতার বেলেঘাটা আইডি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। অনুসন্ধানে নেমে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা দেখেছিলেন, ওই যুবক অনেকের পরোক্ষ সংস্পর্শে এসেছেন। তবে বাড়ি ফিরে, হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার আগে পর্যন্ত প্রত্যক্ষ বা সরাসরি সংস্পর্শে এসেছেন ৭ জনের। বাবা, মা, স্ত্রী, দাদা, বৌদি, জেঠু, জেঠিমার। একে একে ৭ জনকেই মেদিনীপুরের করোনা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সকলের করোনা পরীক্ষাও করা হয়।

দুশ্চিন্তা অবশ্য পুরোপুরি কাটছে না। কারণ, করোনা আক্রান্ত ওই যুবক, তাঁর স্ত্রী এবং বাবা এই সময়ের মধ্যে কার কার সংস্পর্শে এসেছেন, সোমবার পর্যন্ত তার হদিশ মেলেনি। অনুসন্ধানে নেমে জেলার স্বাস্থ্য আধিকারিকেরা দেখেছেন, যুবকের স্ত্রী বাড়িতেই ছিলেন। তিনি অন্য কারও সংস্পর্শে আসেননি। তবে যুবকের বাবা বাড়ি থেকে বেরিয়েছেন, বেশ কয়েকজনের সংস্পর্শে এসেছেন। জেলার এক স্বাস্থ্য আধিকারিক মানছেন, ‘‘সংস্পর্শে আসা লোকেদের চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে। চিহ্নিত করা সম্ভব হলে তাঁদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হবে। তেমন হলে কোয়রান্টিনেও রাখা হবে।’’

পরিস্থিতি দেখে দাসপুর-১ ব্লকের সব গ্রামে সচেতনতা প্রচারে নেমেছে ব্লক প্রশাসন। রবিবার থেকে ব্লক জুড়েই প্রচার শুরু হয়েছে। লকডাউন অমান্য করে কেউ যাতে অযথা বাইরে ঘোরাঘুরি না করেন, স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলেন, বাংলা ও সাঁওতালি দুটি ভাষায় তা প্রচার করা হচ্ছে।

প্রশাসন সূত্রে খবর, এক পরিবারে তিন জন করোনা আক্রান্তের খবর জানাজানির পরেও হুঁশ ফেরেনি লাগোয়া গ্রামগুলির অধিকাংশ বাসিন্দার। লকডাউন উপেক্ষা করেই বাসিন্দাদের একাংশ দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আনাজ বাজার, চা দোকানে আড্ডা জমছে। যুবকদের একাংশ বাইক হাঁকিয়ে পথে নামছেন। পুলিশের অভিযান চালিয়ে দাসপুর অনেককে গ্রেফতারও করেছে। তাতেও জটলা জমায়েত বন্ধ না হওয়ায় এ বার গ্রামে গ্রামে মাইকে প্রচারে জোর দেওয়া হয়েছে। ব্লক প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত গুলিকেও প্রচার চালাতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। দাসপুর ১-এর বিডিও বিকাশ নস্কর বলেন, “গোটা ব্লকেই মাইকে প্রচার চলছে।”

ওই যুবকের গ্রামে বাড়ি বাড়ি ঘুরে স্বাস্থ্য কর্মীরা থার্মাল স্ক্যানার দিয়ে তাপমাত্রা মাপার কাজও চালিয়ে যাচ্ছেন। ১৫৫টি পরিবারের সদস্যদেরই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়েছে। দেওয়া হয়েছে ফোন নম্বরও| প্রশাসনের এক সূত্রের খবর, আক্রান্ত পরিবারের সংস্পর্শে আসা বেশ কয়েকটি পরিবারকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এর মধ্যে যুবকের এক আত্মীয় বাড়িও রয়েছে। ওই পরিবারের সকলকে গৃহ পর্যবেক্ষণে (হোম কোয়ারান্টিন) থাকতে বলা হয়েছে। তাঁরা নিয়ম মানছেন কিনা তা দেখতে সিভিক ভলান্টিয়ারেরা নজরদারি চালাচ্ছেন।

(অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।)

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE