Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

ফুরোচ্ছে ওষুধ, সঙ্কটে রোগীরা

সাধারণত, জেলায় ২১- ২২ রকম ওষুধের চাহিদা থাকে। সূত্রের খবর, বেশিরভাগেরই ভাঁড়ার ফুরিয়ে আসছে।

অপেক্ষায়: ওষুধের দোকানে লাইন। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে।  ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

অপেক্ষায়: ওষুধের দোকানে লাইন। বৃহস্পতিবার মেদিনীপুরে। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ০৩ এপ্রিল ২০২০ ০২:১৮
Share: Save:

জীবনদায়ী ওষুধপত্র যা মজুত ছিল ক্রমশ টান পড়ছে তাতে। ফলে উদ্বেগ বাড়ছে পশ্চিম মেদিনীপুরে।

সাধারণত, জেলায় ২১- ২২ রকম ওষুধের চাহিদা থাকে। সূত্রের খবর, বেশিরভাগেরই ভাঁড়ার ফুরিয়ে আসছে। এই সময়ে প্যারাসিটামল, ক্লোরোকুইনের মতো ওষুধের চাহিদা তুঙ্গে রয়েছে। কিন্তু চাহিদার তুলনায় ওষুধগুলির মজুত অনেকটাই কম। যেমন, জেলায় হাইড্রোক্সি ক্লোরোকুইনের চাহিদা রয়েছে মাসে গড়ে ১,৮৫২টি। এখন মজুত রয়েছে মাত্র ২৯৭টি। প্যারাসিটামল সাসপেনশনের চাহিদা রয়েছে মাসে গড়ে ১১,৫২২টি। রয়েছে মাত্র ৩,০০৫টি।

ওষুধ ব্যবসায়ীরা জানাচ্ছেন, লকডাউনের জেরে মাঝে জেলায় ওষুধপত্রের সরবরাহ বন্ধ ছিল। সমস্যার শুরু তখন থেকেই। কলকাতা থেকে ওষুধপত্র জেলায় পৌঁছয়নি। স্বাভাবিকভাবেই জেলা থেকে ওষুধপত্র শহরে এবং ব্লকগুলিতে পৌঁছয়নি। ওষুধের এক পাইকারি ব্যবসায়ী বলছেন, ‘‘একটি ওষুধের অর্ডার দিয়েছিলাম ১৭ মার্চ। সেই ওষুধ এসেছে ২৮ মার্চ।’’ মেদিনীপুর শহরের ক্ষুদিরামনগরের বাসিন্দা, ওষুধপত্রের পাইকারি ব্যবসায়ী সুকুমার পণ্ডা জানাচ্ছেন, ‘‘এখনও সব ওষুধের সরবরাহ স্বাভাবিক নয়। স্বাভাবিক হতে আরও কিছুদিন সময় লাগতে পারে।’’ বেঙ্গল কেমিস্ট অ্যান্ড ড্রাগিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিসিডিএ) মেদিনীপুর শাখার সম্পাদক সন্দীপ কুণ্ডুর কথায়, ‘‘সব ওষুধের সরবরাহ এখনও স্বাভাবিক হয়নি। কবে স্বাভাবিক হবে এখনই বলা মুশকিল।’’

ওষুধপত্র অত্যাবশ্যকীয় পণ্যের মধ্যেই পড়ে। তবে পশ্চিম মেদিনীপুরের একাংশ ওষুধ দোকান এখনও বন্ধ। কেন? খুচরো ব্যবসায়ীদের একাংশের দাবি, বাধ্য হয়ে তাঁরা দোকান বন্ধ রেখেছেন। এক খুচরো ব্যবসায়ীর কথায়, ‘‘দোকান খুলব কী করে? কর্মীরাই তো আসছেন না!’’ জেলা প্রশাসন অবশ্য জানাচ্ছে, ওষুধ দোকান খোলা রাখতেই হবে। প্রয়োজনে মালিকই দোকান চালাবেন। এই সময়ে ওষুধ দোকান বন্ধ রাখলে কড়া ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানিয়েছে প্রশাসন। শুধু মেদিনীপুরেই স্টকিস্ট এবং পাইকারি মিলিয়ে প্রায় ৬০ জন ওষুধের ব্যবসা করেন। খুচরো ব্যবসা করেন প্রায় ৩০০ জন। অর্থাৎ, প্রায় ৩০০টি ছোট- মাঝারি ওষুধ দোকান রয়েছে মেদিনীপুরে। জানা যাচ্ছে, সবে ওষুধপত্র আসা শুরু হয়েছে জেলায়। তবে জেলা থেকে তা শহরে এবং ব্লকগুলিতে পৌঁছনোর ক্ষেত্রে সমস্যা হচ্ছে। পরিবহণ ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত একজন বললেন, ‘‘শহরে এবং ব্লকে বাসে করেই ওষুধপত্র পৌঁছয়। এখন বাস পরিবহণ বন্ধ। ফলে শহরে এবং ব্লকে ওষুধপত্র পৌঁছনোয় সমস্যা হচ্ছে। কয়েকটি এলাকায় লরিতে করে পাঠানো হচ্ছে।’’

জেলা প্রশাসনের অবশ্য আশ্বাস, ওষুধপত্রের আকাল যাতে না হয় সে জন্য সবরকম চেষ্টা চলছে। জেলাশাসক রশ্মি কমল ও জেলা পুলিশ সুপার দীনেশ কুমার জানিয়েছেন, ওষুধপত্রের যাতে ঘাটতি না হয় সে দিকে নজর রাখা হয়েছে। জেলার মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক গিরীশচন্দ্র বেরা বলেন, ‘‘ওষুধের আকাল হওয়ার কথা নয়। নজরদারি আরও বাড়ানো হচ্ছে।’’

আশ্বাস দিচ্ছেন সকলে। তবে থেমে নেই ভোগান্তি। অনেকেই জীবনদায়ী ওষুধ জোগাড় করতে পারছেন না। মেদিনীপুরের এক বৃদ্ধ যেমন দীর্ঘদিন ধরে হৃদযন্ত্রের সমস্যায় ভুগছেন। নির্দিষ্ট ওষুধ মেলেনি। চিকিৎসককে ফোন করে আগের নির্দিষ্ট ওষুধের পরিবর্তে অন্য ওষুধ কিনতে হয়েছে তাঁকে। ওই বৃদ্ধ বলছিলেন, ‘‘এখন জীবন- মরণের চৌকাঠে দাঁড়িয়ে থাকা ছাড়া উপায় কী!’’

অভূতপূর্ব পরিস্থিতি। স্বভাবতই আপনি নানান ঘটনার সাক্ষী। শেয়ার করুন আমাদের। ঘটনার বিবরণ, ছবি, ভিডিয়ো আমাদের ইমেলে পাঠিয়ে দিন, feedback@abpdigital.in ঠিকানায়। কোন এলাকা, কোন দিন, কোন সময়ের ঘটনা তা জানাতে ভুলবেন না। আপনার নাম এবং ফোন নম্বর অবশ্যই দেবেন। আপনার পাঠানো খবরটি বিবেচিত হলে তা প্রকাশ করা হবে আমাদের ওয়েবসাইটে।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE