Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিশু ধর্ষণ-খুন, ফাঁসির আদেশ

নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির আদেশ দিল ঘাটাল মহকুমা আদালত। বৃহস্পতিবারই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবপ্রসাদ নাথ কুশপাতার বাসিন্দা লাল্টু মহাপাত্রকে দোষী সাব্যস্ত করেন। শুক্রবার ফাঁসির আদেশ দেন।

আদালতে লাল্টু মহাপাত্র।

আদালতে লাল্টু মহাপাত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
ঘাটাল শেষ আপডেট: ০৪ জুলাই ২০১৫ ০১:০৯
Share: Save:

নাবালিকাকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় ফাঁসির আদেশ দিল ঘাটাল মহকুমা আদালত। বৃহস্পতিবারই অতিরিক্ত জেলা ও দায়রা বিচারক দেবপ্রসাদ নাথ কুশপাতার বাসিন্দা লাল্টু মহাপাত্রকে দোষী সাব্যস্ত করেন। শুক্রবার ফাঁসির আদেশ দেন।

২০১১ সালের ২০ জানুয়ারি ঘাটালের কুশপাতায় বছর দশেকের একটি মেয়েকে ধর্ষণ করে খুনের ঘটনায় উত্তাল হয়ে ওঠে গোটা মহকুমা। অভিযুক্তের ফাঁসির দাবিতে সরব হন বাসিন্দারা। এ দিন তাই সাজা শুনতে আদালতে ভিড় জমিয়েছিলেন উৎসাহী অনেক মানুষই।

আদালতে উপস্থিত ছিলেন মৃতার মা রেজবানু বিবিও। রায় শুনেই কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি। বলেন, ‘‘এত দিনে আমার মেয়ের আত্মা শান্তি পাবে। আমিও শান্তি পেলাম।’’

সরকারি আইনজীবী শক্তিপদ দাস আধিকারী বলেন, “অভিযুক্ত লাল্টু মহাপাত্রের বিরুদ্ধে ধর্ষণ, খুন ও প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা সব অভিযোগই প্রমাণ হয়েছে। তবে তার মা ও বাবা বেকসুর ছাড়া পেয়েছেন।” আদতে মুর্শিদাবাদের লালগোলার শিশে গ্রামের বাসিন্দা রেজবানু বিবি স্বামী পরিত্যক্তা। ঘটনার বছর দেড়েক আগে তিনি দুই মেয়েকে নিয়ে লাল্টু মা‌হাপাত্রদের বা়ড়িতে ভাড়াটে হিসাবে আসেন। বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করেই সংসার চালাতেন রেজবানু। তাঁর অভিযোগ, সেই সময় তিন মাসের বাড়ি ভাড়া বাকি ছিল। তা নিয়ে অভিযুক্তের বাবা প্রশান্ত মহাপাত্র ও মা কমলা মহাপাত্র নানা ভাবে অত্যাচার করতেন তাঁর উপর।

ঘটনার দিন সকালে কাজে বেরিয়েছিলেন তিনি। দুই মেয়ে পাড়ায় খেলা করছিল। সেই সময়ই বছর তিরিশের লাল্টু তাঁর বড় মেয়ে শাবানাকে ডেকে নিয়ে যায়। একটি পরিত্যক্ত ঘরে ধর্ষণ করে। কান্নাকাটি করলে মেরে ফেলার হুমকিও দেয়। তা সত্ত্বেও কান্নাকাটি করলে শাবানাকে শ্বাসরোধ করে খুন করে লাল্টু। পরে বাড়ি লাগোয়া একটি ছোট ডোবায় শাবানার দেহ পুঁতে দেয়। অনেক খোঁজাখুঁজির পর ওই দিনই বিকেলে ডোবা থেকে দেহটি উদ্ধার হয়।

ঘটনার পরই লাল্টু বেপাত্তা হয়ে যায়। ব্যবসায়ী লল্টু নানা রকম অপরাধের সঙ্গে যুক্ত ছিলই। মোটর বাইক চুরির ঘটনায় পুলিশের খাতায় তার নামও ছিল। মৃতার মায়ের অভিযোগের ভিত্তিতে প্রশান্ত ও কমলা মহাপাত্রকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ১১ দিন পর বাঁকুড়ার সারেঙ্গা থানা সংলগ্ন গোয়ালতোড়ের মেটালা জঙ্গল থেকে লাল্টু মহাপাত্রকে গ্রেফতার করা হয়। পুলিশের জেরায় ঘটনার কথা স্বীকার করে সে।

এ দিন রায় শোনানোর আগে বিচারক দেবপ্রসাদ নাথ অভিযুক্ত লাল্টু মহাপাত্রকে তাঁর বক্তব্য আদালতকে জানাতে বলেন। লাল্টু অবশ্য তখন বলে, “আমি নির্দোষ।” এর পরই বিচারক ফাঁসির আদেশ শোনান। অভিযুক্ত পক্ষের আইনজীবী দেবকুমার চট্টোপাধ্যায় জানান তাঁরা এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে যাবেন। প্রসঙ্গত আট মাস আগেই এই ঘাটাল মহকুমা আদালত আরও একটি ফাঁসির আদেশ শুনিয়েছিল। দুই শিশু কন্যাকে খুন করে নদীর চরে পুঁতে দেওয়ার ঘটনায় অভিযুক্ত বাবা রাকেশ সিংহের ফাঁসির নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারক দেবপ্রসাদ নাথই। ঘাটাল আদালতের ইতিহাসে সেই ছিল প্রথম ফাঁসির আদেশ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE