দিঘা-নন্দকুমার ১১৬ বি জাতীয় সড়কে রামনগরের কাছে উপড়েছে গাছ।—নিজস্ব চিত্র
হাতে মোবাইল নিয়ে একে অন্যের সাড়া পাওয়ার আশায় কেটে যাচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা। কিন্তু কোনওদিকেই কোনওরকম সাড়াশব্দ নেই।
বিধ্বংসী ঘূর্ণিঝড় আমপানের প্রভাব থেকে পুরোপুরি মুক্ত হতে পারেনি উপকূলবর্তী পূর্ব মেদিনীপুর জেলা। বুধবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত দিঘা, কাঁথি, খেজুরি, হলদিয়া এবং নন্দীগ্রামে ব্যাপক তাণ্ডব চালিয়েছে সে। একটু ধাতস্থ হয়ে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা চেয়ে পাঠিয়েছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু এখনও ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত তালিকা জেলীর কোনও ব্লকই তৈরী করতে পারেনি বলে প্রশাসন সূত্রে খবর। কারণ জেলায় মোবাইল ফোন সংযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বিপর্যস্ত। ত্রিস্তর পঞ্চায়েত জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এবং গোটা জেলাতেই মোবাইল ও ইন্টারনেট পরিষেবা অধিকাংশ সময় অচল থাকায় সমস্যা হচ্ছে বলে জেলা প্রশাসনের আধিকারিকদের মারফত জানা গিয়েছে।
প্রশাসন সূত্রে খবর, শুক্রবার রামনগর-২ ব্লক সহ বেশ কয়েকটি ব্লকে পঞ্চায়েত প্রধানদের নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বৈঠক করেন প্রশাসনিক আধিকারিকেরা। এলাকা ভিত্তিক ক্ষয়ক্ষতির চূড়ান্ত তালিকা তৈরির জন্য গ্রামে গিয়ে সরেজমিন খতিয়ে দেখে ছবি সংগ্রহ করতে বলা হয়েছে। উপকূলবর্তী রামনগর-১ ও ২ ক্ষতি ব্লকে সবচেয়ে বেশি। যদিও, রামনগর-১ ব্লকের দিঘা ছাড়া অধিকাংশ এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন। ফলে পঞ্চায়েতের প্রধান-সহ অন্যান্য জন প্রতিনিধিদের মোবাইল ফোন বন্ধ। ঘূর্ণিঝড়ের পর থেকে কোনওভাবে তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ সম্ভব হচ্ছে না বলে প্রশাসনিক আধিকারিকদের দাবি।
একই পরিস্থিতি কাঁথি-১ ও দেশপ্রাণ ব্লকে। কাঁথিতে মাজিলাপুর, নয়াপুট, সাবাজপুট এলাকায় সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট বিডিও লিপন তালুকদার বলেন, ‘‘গ্রাম প্রধানের সঙ্গে সব ক্ষেত্রে যোগাযোগ সম্ভব হয়ে ওঠেনি এখনও। পঞ্চায়েতের কর্মীরা এলাকায় গিয়ে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য সংগ্রহ করছেন। জনপ্রতিনিধিরাও সাধ্যমত চেষ্টা করছেন। তবে চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতির তালিকা এখনও তৈরি করা যায়নি।’’
দেশপ্রাণ ব্লকে বাড়ি এবং প্রাকৃতিক সম্পদের অনেক বেশি ক্ষতি হয়েছে বলে আশঙ্কা প্রশাসনিক আধিকারিকদের। কিন্তু এ ক্ষেত্রেও তথ্য সংগ্রহে বাদ সেধেছে মোবাইল ফোন এবং ইন্টারনেট পরিষেবা।আমপানের হাত থেকে রেহাই পায়নি খেজুরি-২ ব্লকও। জনকা, খেজুরি, নিজকসবা এবং হলুদবাড়ি পঞ্চায়েতের কিছু এলাকায় ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। প্রচুর সংখ্যক বাড়িঘর ভেঙেছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি অসীম কুমার মণ্ডলের দাবি, ‘‘দশ হাজার বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তবে ব্লক প্রশাসনিক আধিকারিকদের সঙ্গে পঞ্চায়েত প্রতিনিধিদের যোগাযোগ অনেক ক্ষেত্রে এখনও সম্ভব হয়ে ওঠেনি। ফলে ক্ষয়ক্ষতির সামগ্রিক তথ্য পেতে সমস্যা হচ্ছে।’’
পূর্ব মেদিনীপুরের জেলাশাসক পার্থ ঘোষ বলেন, ‘‘প্রতিকূল পরিস্থিতির মধ্যে কাজ করতে হচ্ছে। মোবাইল সংযোগে সমস্যা হওয়ায় সব ব্লক থেকে ক্ষয়ক্ষতির তথ্য ঠিকমত পাওয়া যাচ্ছে না। তবে দ্রুত সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে বলে আশা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy