তখনও সে আসেনি। কিন্তু তার আগেই সে তার উপস্থিতি জানান দিল। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে পূর্ব মেদিনীপুরের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙল বাড়ি, বিদ্যুতের খুঁটি। উপড়ে গেল গাছ।
ঘূর্ণিঝড় ‘ফণী’ সতর্কবার্তা জেলায় জারি হয়েছিল দিন কয়েক আগেই। প্রাথমিক ভাবে আবহাওয়া দফতরের পূর্বাভাস ছিল, অন্ধ্রপ্রদেশ, ওড়িশা উপকূল থেকে ‘ফণী’ পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূল দিয়ে ঢুকবে বাংলায়। কিন্তু এ দিন সকালে ওড়িশায় ঢোকার পরেই নিজের গতিপথ বদলেছে ‘ফণী’। আবহাওয়া দফতর সূত্রের খবর, সরাসরি পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলবর্তী এলাকাগুলিতে হয়তো আর আছড়ে পড়বে না ওই ঝড়। শুক্রবার সন্ধ্যা পর্যন্ত পাওয়া পূর্বাভাস অনুসারে, বালেশ্বর দিয়ে খড়্গপুরে ঢুকে ‘ফণী’ আরামবাগ, বর্ধমান, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ হয়ে বাংলাদেশে চলে যাবে। কিন্তু আবাহবীদরা এ-ও জানাচ্ছেন, ঝড় ক্রমগত গতিপথ বদল করছে। ফলে পূর্ব মেদিনীপুরের উপকূলকে একেবারেই ‘বিপদ মুক্ত’ বলা যাচ্ছে না।
এ দিন জেলার আকাশ সকাল থেকেই ছিল মেঘলা। কোথায় হাল্কা থেকে ভারী বৃষ্টি পড়েছে। এর মধ্যেই সকাল ১০টা নাগাদ পাঁশকুড়ার রঘুনাথবাড়ি গ্রাম পঞ্চায়েতের সুন্দরনগর গ্রাম মাত্র ২০ সেকেণ্ডের ঝড়ে লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেখানেই আটটি বাড়ির ছাউনি উড়ে যায়। ভাঙে ৫০টি গাছ। চারটি বিদ্যুতের খুঁটিও উল্টে যায়। ওই এলাকায় এক কিলোমিটারেরও কম জায়গায় ঝড়ের তাণ্ডব চলে। প্রত্যক্ষদর্শী রঘুনাথ রায় বলেন, ‘‘হঠাৎ একটা বিকট আওয়াজ হল। তারপর আকাশ থেকে কালো হাতির শুঁড়ের মত একটা মেঘ নীচে নেমে আসে। শুরু হয় ব্যাপক ঝড়।’’
কয়েক সেকেন্ডের ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নন্দকুমার ব্লকের বহিচবেড়িয়া, চক-বহিচবেড়িয়া এবং মল্লিকচক গ্রামের বেশ কিছু এলাকা। সকাল সোয়া ৯টা নাগাদ ভারী বৃষ্টি-এবং ঝড়ে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে অন্তত ৫০টি বাড়ি এবং শতাধিক পান বোরোজ। ভেঙে পড়েছে সাতটি খুঁটি। ঝড়ে চক-বহিচবেড়িয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ের টালির চাল ভেঙেছে। বহিচবেড়িয়া গ্রামের অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের টিনের চাল উড়ে যায়। টালির চাল মাথা ভেঙে পড়ে আহত হয়েছেন এক দম্পতি। তাঁদের নন্দকুমার ব্লক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ভর্তি করানো হয়েছে।
নন্দকুমারের বিডিও মহম্মদ আবু তায়েব বলেন, ‘‘টর্নেডোর মত কয়েক সেকেন্ডের প্রবল ঝড়ে গ্রামগুলি তছনছ হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত বাসিন্দাদের জন্য স্থানীয় প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছে।’’
ভগবানপুর-২ ব্লকের মানিকজোড় গ্রামে মাটির বাড়ি ভেঙেছে এ দিন। কাঁথি দেশপ্রাণ ব্লকের দুরমুঠে বাসিন্দাদের বাড়ির উপরে ভেঙে পড়েছে বিদ্যুতের খুঁটি। তবে ওই দু’টি ক্ষেত্রেই কেউ হতাহত হননি। অন্যদিকে, মহিষাদলের গেঁওখালি, তেরপেক্ষা, সুতাহাটার কুকড়াহাটি এবং নন্দীগ্রামের তেরপেক্ষা রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল এ দিন। হলদি, হুগলি এবং রূপনারায়ণ নদে ব্যাপক জলের স্ফীতি লক্ষ্য করা গিয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy