অস্বাস্থ্যকর: এলাকায় ডাস্টবিন নেই। তাই এলাকার বাসিন্দারা পুকুরেই ফেলছেন আবর্জনা। জলে জঞ্জাল পচে বেরোচ্ছে দুর্গন্ধও। নজর নেই কারও। মেদিনীপুর শহরের বড় আস্তানা এলাকায়। ছবি: সৌমেশ্বর মণ্ডল
সোমবার সকাল। পটাশপুর ২ ব্লকের উত্তর খাড় গ্রামে ঢুকতেই রে রে করে তেড়ে এলেন গ্রামের কিছু মানুষ। পরে বোঝা গেল, সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিকে স্বাস্থ্য দফতরের লোক ভেবেছেন তাঁরা। সাংবাদিক পরিচয় পাওয়ার পরেও উগরে দিলেন ক্ষোভ। কাঠগড়ায় সেই স্বাস্থ্য দফতর।
খানিক পরে গ্রামবাসীই নিয়ে গেলেন অজিত পট্টনায়কের বাড়িতে। অজিতবাবুর ছোটভাই অপজিৎ জ্বরে শয্যাশায়ী। আর অপজিতের ছেলে খাড় হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্র অঙ্কনের রক্তে ডেঙ্গির জীবাণু মিলেছে। ছেলের কথা বলতে গিয়ে মেজাজ হারালেন দীপ্তি পট্টনায়েক। বললেন, ‘‘২৪ অগস্ট এনএসওয়ান রক্ত পরীক্ষায় ডেঙ্গি ধরা পড়ে অঙ্কনের। ২৫ তারিখ ছেলেকে এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে ভর্তি করানোর পরে আবার রক্ত পরীক্ষা হয়। এবং আবারও ডেঙ্গির জীবাণু মেলে। কিন্তু সেখানে শুধুই অব্যবস্থা আর চিকিৎসকদের দুর্ব্যবহার।’’
দীপ্তিদেবীর অভিযোগ, এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালে পাঁচতলায় যাওয়ার জন্য লিফট ব্যবহার করতে দেওয়া হয়নি। মায়ের কোলে পা রেখে ঘুমানোয় চিকিৎসকেরা অঙ্কনকে বকুনি দিয়েছেন। অঙ্কনের জেঠু অজিতবাবু আরও বলেন, “সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের বাইরে পানের দোকান থেকে মাঝরাতে স্যালাইনের বোতলও কিনতে হয়েছে।’’
শুধু পট্টনায়ক বাড়িতেই ১১ জন সদস্যের সাত জন জ্বরে পড়েছেন। অঙ্কনের জেঠতুতো বোন সমীক্ষা পট্টনায়ক ডেঙ্গিতে আক্রান্ত হয়েছিল। উত্তর খাড় হাইস্কুলের ষষ্ঠ শ্রেণির এই ছাত্রী ২৮ অগস্ট থেকে এগরার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিল। চারদিন পরে ছাড়া পেয়েছে সে। পাশের গ্রাম দক্ষিণ খাড়ের বাসিন্দা চার বছরের ঋষিতা দাস মহাপাত্রও ডেঙ্গিতে আক্রান্ত। তার দিদা সজল পট্টানায়ক বললেন “আশা কর্মীরা একবার এসে ডেঙ্গি আক্রান্তের নাম লিখে নিয়ে গেছে। ব্যাস ওইটুকুই।’’ স্বাস্থ্য দফতর ও এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের পরিষেবায় স্থানীয়রা এতটাই ক্ষুব্ধ যে তাঁরা আর সরকারি হাসপাতালে যেতে চাইছেন না। পরিবারের কারও জ্বর হলে এলাকার নার্সিংহোম বা কলকাতায় নিয়ে যাচ্ছেন পরিজনেরা।
স্থানীয়রা জানালেন, গ্রামে প্রায় তিনশো পরিবার। তার মধ্যে কমপক্ষে ২০ জনের ডেঙ্গি হয়েছে। আর ৭০ জনের জ্বর হয়েছে। অথচ সোমবারই এগরা সুপার স্পেশ্যালিটি হাসপাতালের সুপার গোপাল গুপ্ত দাবি করেছিলেন, তাঁর হাসপাতালে কোনও ডেঙ্গি রোগী ভর্তি হননি, বা চিকিৎসা করাতে আসেননি। আর এ দিন গোপলবাবু বলেন, “শুধু এনএসওয়ান এজি পজিটিভ হলে ডেঙ্গি হয়েছে বলা যাবে না। সেই সঙ্গে এলাইজা রিপোর্টও দরকার। আর বাইরে থেকে স্যালাইন কেনার বিষয় জানি না। কোনও চিকিৎসক বা কর্মীর দুর্ব্যবহার নিয়ে অভিযোগ পাইনি। পেলে ব্যবস্থা নেবো।’’
মঙ্গলবার দিনভর গ্রামে ঘুরেও কোনও স্বাস্থ্য কর্মী বা আশাকর্মীর দেখা মিলল না। স্থানীয় বাসিন্দা বিনতি পট্টনায়ক, অজিত পট্টনায়করা বলছিলেন, “অনেক দিন আগেই গ্রামে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। কিন্তু তখন স্বাস্থ্য দফতরের কেউ আসেনি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy