Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪

‘কৃষকবন্ধু’র ফর্ম নিয়ে পাত পেড়ে খিচুড়ি খেলেন ওঁরা

শিরোমণির স্কুলের মাঠে এঁকে বেঁকে গিয়েছে লাইন। একটি নয়। দু’টি। একটিতে তুলনায় কম। একটিতে বেশি। মাইকে ক্রমাগত হেঁকে চলেছেন বিধায়ক দীনেন রায়, ‘‘যাঁরা ফর্ম নিতে এসেছেন, তাঁরা খেয়ে যাবেন। কেউ না- খেয়ে যাবেন না। আপনাদের সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’’

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

অলঙ্করণ: তিয়াসা দাস।

নিজস্ব সংবাদদাতা
মেদিনীপুর শেষ আপডেট: ২৯ জানুয়ারি ২০১৯ ০৩:৩৮
Share: Save:

শিরোমণির স্কুলের মাঠে এঁকে বেঁকে গিয়েছে লাইন। একটি নয়। দু’টি। একটিতে তুলনায় কম। একটিতে বেশি। মাইকে ক্রমাগত হেঁকে চলেছেন বিধায়ক দীনেন রায়, ‘‘যাঁরা ফর্ম নিতে এসেছেন, তাঁরা খেয়ে যাবেন। কেউ না- খেয়ে যাবেন না। আপনাদের সকলের খাওয়ার ব্যবস্থা রয়েছে।’’

ফর্ম ‘কৃষকবন্ধু’ প্রকল্পের। সোমবার থেকে পশ্চিম মেদিনীপুরে শুরু হল সেই ফর্ম বিলি। মেদিনীপুর সদর ব্লকের শিরোমণি থেকে প্রকল্পের সূচনা। তাই সেখানেই আয়োজন করা হয়েছিল একটি অনুষ্ঠানের। কৃষকেরা এলেন। লাইন দিয়ে দাঁড়িয়ে ফর্ম নিলেন। তারপরই ভিড় জমালেন অন্য একটি লাইনে। সেটি খাওয়ার লাইন। প্রকল্পের সূচনা উপলক্ষে আয়োজন করা হয়েছিল খাওয়াদাওয়া। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানালেন, ফর্ম নেওয়ায় ভিড় তো ছিল তবে তা খাওয়ার লাইনের মতো নয়। পাত পেড়ে খিচুড়ি, তরকারি আর চাটনি খেলেন কৃষকরা। পিক আপ ভ্যান করে কৃষকদের আনা হয়েছিল এখানে। শিরোমণি গ্রাম পঞ্চায়েতের তৃণমূল সদস্য সুশোভন মাইতি যেমন তাঁর এলাকার কৃষকদের চারটি গাড়িতে করে এখানে আনেন। সুশোভনের দাবি, "এই প্রকল্পে কৃষকেরা উজ্জীবিত! ওঁরা নিজেরাই চাঁদা তুলে গাড়ি ভাড়া করেছেন। আমি তদারকি করেছি মাত্র!" প্রায় দু'শো কৃষককে এনেছিলেন তিনি।

পরিবেশও গড়ে তোলা হয়েছিল মানানসই করে। উপস্থিত ছিলেন সাংসদ, বিধায়কেরা, পুলিশ- প্রশাসনের আধিকারিকেরা। লাগানো হয়েছিল প্রচুর ফ্লেক্স। সরকারি সেই ফ্লেক্সে লেখা ছিল, ‘কৃষিবান্ধব সরকার, একগুচ্ছ উপহার’। সঙ্গে ছিল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ছবি। রাজ্য সরকার কৃষকদের জন্য কী কী করেছে, তা তুলে ধরা হয় ফ্লেক্সে। ফর্ম বিলির সূচনায় বক্তৃতা করতে গিয়ে সাংসদ মানস ভুঁইয়া, বিধায়ক দীনেন রায়, তৃণমূলের জেলা সভাপতি তথা জেলা পরিষদের সহ- সভাধিপতি অজিত মাইতিদের কথাতেও উঠে আসে কৃষি ক্ষেত্রে রাজ্য সরকারের সাফল্যের দিকগুলো।

চলছে ‘কৃষক বন্ধু’র ফর্ম বিলি। —নিজস্ব চিত্র।

জেলা কৃষি দফতর সূত্রে খবর, প্রথম পর্যায়ে ব্লকপিছু দু’টি করে মৌজায় ফর্ম বিলি শুরু হয়েছে। পরে বাকি মৌজাগুলোয় ফর্ম বিলি হবে। পশ্চিম মেদিনীপুরে ২১টি ব্লক রয়েছে। মৌজা পিছু গড়ে ৪০০ জন কৃষক থাকেন। সেই হিসেবে প্রথম পর্যায়ে জেলায় প্রায় ১৬,৮০০ ফর্ম বিলি হবে। জেলার কৃষি আধিকারিক প্রভাত বসু বলেন, ‘‘প্রথম পর্যায়ে ব্লকপিছু দু’টি করে মৌজায় ফর্ম বিলি হচ্ছে। পরে বাকি মৌজাগুলোয় ফর্ম বিলি হবে।’’

বিজেপির জেলা সভাপতি শমিত দাশ অবশ্য কটাক্ষ করতে ছাড়েননি। তিনি বলেন, ‘‘কৃষকেরা ধানের দাম পাচ্ছেন না। অভাবি বিক্রি চলছে। কে বন্ধু কে শত্রু, কৃষকেরা তা ভালই বুঝতে পারছেন!’’ ফর্ম নেওয়ার ভিড়ে ছিলেন দুলালচন্দ্র পাল। তিনি বলছিলেন, ‘‘একটি চাষের জন্য একর প্রতি দু’দফায় মোট পাঁচ হাজার টাকা কম নয়। তাই ভাবলাম ফর্মটা পূরণ করেই রাখি।’’

‘কৃষকবন্ধু’-এর ফর্ম পেলেন। সঙ্গে বাড়তি পাওনা খিচুড়ি। খাওয়া শেষে লস হেমরম নামে এক যুবক বলছিলেন, ‘‘খিচুড়িটা খারাপ ছিল না। মাংস থাকলে জমে যেত!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Form Krishak Bandhu Scheme
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE