প্রতীকী ছবি।
দেড় দশক আগেও খিদে আর অভাবের সঙ্গে নিত্য লড়তেন বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত সব গ্রামের বাসিন্দারা। অনাহার আর অপুষ্টির শিকার হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছিলেন সমায় শবর, মঙ্গলি শবররা। ২০০৪ সালে অনাহারের গ্রাম আমলাশোলে সেই পাঁচ আদিবাসীর মৃত্যু জানাজানি হতেই তোলপাড় হয়েছিল রাজ্য-রাজনীতি। ওই ঘটনাকে হাতিয়ার করে তৎকালীন বাম সরকার বিরোধী জনমত গড়ে তুলেছিল মাওবাদীরাও।
রাজ্যে ক্ষমতার পালা বদলের পরে পেরিয়ে গিয়েছে ছ’টা বছর। আমলাশোল-সহ বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গ্রামগুলির চেহারাও এই সময়ের মধ্যে অনেকখানি বদলে গিয়েছে। সেই পরিবর্তনের ছবিই তুলে ধরা হচ্ছে সরকারি তথ্যচিত্র ‘পট-বদল’-এ। কুড়ি মিনিটের ওই তথ্যচিত্রে আমলাশোল-সহ গোটা বেলপাহাড়ির অতীত আর বর্তমানের তুলনা করতে গিয়ে উস্কে দেওয়া হয়েছে সাড়ে ১৩ বছর পরে সেই অনাহারের স্মৃতি।
প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে এলাকায় নানা ভাবে মানুষজনকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা হচ্ছে। উন্নয়ন বিরোধী নানা ধরনের অপপ্রচারও করা
হচ্ছে। রাত- বিরেতে ঝাড়খণ্ড সীমানা দিয়ে এলাকায় ঢুকে গ্রামবাসীদের মধ্যে প্রভাব বাড়ানোর চেষ্টা করছে মাওবাদীরাও। এমন আবহে তথ্যচিত্র নির্মাণের উদ্যোগ বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। ঝাড়গ্রাম জেলা প্রশাসনের এক আধিকারিক বলেন, তথ্যচিত্রটি ইউটিউবে পোস্ট করার পাশাপাশি প্রত্যন্ত গ্রাম-গঞ্জে প্রশাসনিক উদ্যোগে দেখানো হবে।
বিরোধীদের অবশ্য অভিযোগ, প্রকৃত উন্নয়ন হয়নি বলেই তথ্যচিত্র বানিয়ে এ সব প্রচার করতে হচ্ছে। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতির বিরোধী কংগ্রেস সদস্য সুব্রত ভট্টাচার্য ও বিজেপি-র ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি সুখময় শতপথী একই সুরে বলেন, ‘‘শাসকদলের প্রতি আনুগত্য দেখিয়ে কিছু মানুষ উপকৃত হয়েছেন। বাকি কাজের কাজ কিছুই হয়নি। তাই এখন পঞ্চায়েত ভোটের মুখে প্রশাসনকে দিয়ে উন্নয়ন হয়েছে বলে প্রচার করানো হচ্ছে।’’ তৃণমূলের ঝাড়গ্রাম জেলা সভাপতি অজিত মাইতির অবশ্য দাবি, মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জঙ্গলমহলে যে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে, সেটাই তথ্যচিত্রে দেখানো হচ্ছে।’’ বেলপাহাড়ির বিডিও সন্তু তরফদারেরও বক্তব্য, ‘‘উন্নয়নই যে শেষ কথা বলে, সেই বাস্তব চিত্র ধরা হয়েছে তথ্যচিত্রে।’’
বদলে যাওয়া আমলাশোল ও বেলপাহাড়ির প্রত্যন্ত গাঁ-গঞ্জের মানুষ এখন কেমন আছেন, তাই দেখানো হয়েছে ওই তথ্যচিত্রে। রয়েছে শান্তি বজায় রাখার বার্তাও। বেলপাহাড়ি পঞ্চায়েত সমিতি ও ব্লক প্রশাসনের উদ্যোগে মুম্বইয়ের এক নির্মাণ সংস্থাকে তথ্যচিত্র তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। গত দু’মাস ধরে বেলপাহাড়ির বিভিন্ন এলাকায় দৃশ্যগ্রহণ হয়েছে। এখন চলছে সম্পাদনার কাজ।
এর আগে জামবনি ব্লক প্রশাসন চিল্কিগড়কে প্রচারের আলোয় আনতে তথ্যচিত্র বানিয়েছিল। বেলপাহাড়ি নিয়ে তৈরি তথ্যচিত্রটিও মানুষের মনে দাগ কাটবে বলেই প্রশাসনের আশা। তথ্যচিত্রটির পরিচালক সৌগত সুন্দরের বক্তব্য, ‘‘তথ্যচিত্রটির কাজ করতে গিয়ে দারুণ অভিজ্ঞতা হয়েছে। উন্নয়ন পরিষেবা সম্পর্কে ধারণা দেওয়ার পাশাপাশি, বেলপাহাড়িতে পর্যটনের সমূহ সম্ভাবনার বিষয়েও তথ্যচিত্রে আলোকপাত করা হয়েছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy