ভগ্নপ্রায় আবাসনের সামনেই পুজোর আয়োজন। নিজস্ব চিত্র
আয়ারল্যান্ডের ঋষিন মিত্র, আমেরিকার নীলাদ্রি দাস, আবুধাবির পূজা মিত্র কিংবা বেঙ্গালুরুতে কর্মসূত্রে থাকা শুভদীপ মান্না ও দ্বীপান্বিতা মান্নার শৈশব কেটেছে বন্ধ কারখানার কর্মীর ছেলেমেয়ে হিসেবে। সকলেই এখন বিদেশে প্রতিষ্ঠিত। সেখান থেকেই হলদিয়ায় থাকা বাবা ও মাকে পুজোয় সাহায্য করেন। খোঁজখবর নেন পুজোর।
এক সময় যে পুজো তাঁদের কেটেছে নমো নমো করে নানা রকম না পাওয়ার মধ্যে, সেই তাঁদের দৌলতেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে এই পুজার মণ্ডপ। ভাঙা চোরা পার্ক, ভগ্ন আবাসনের গায়ে গাছ বেরিয়েছে। তবু সেখানেই এখন বয়স্ক মানুষদের কলরবে মুখর। সন্তোষ দাস, মানিক মিত্র, স্বপন সমাদ্দার বলেন, ‘‘আমরা রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে এসেছিলাম। কাজের সূত্রে এক সুতোয় বাঁধা পড়েছি। এই কদিন আমরা এভাবেই মেতে থাকি। আমাদের আর কোথাও যাওয়ার নেই। সেই ইচ্ছাও নেই।’’ পূর্ণিমা চক্রবর্তী, মোনালিসা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, এই বয়সেও আমরা নতুন করে বাঁচার স্বপ্ন দেখছি।
উদ্যোক্তাদের সকলেরই বয়স ষাট পেরিয়ে গিয়েছে। সকলেই বন্ধ হয়ে যাওয়া সার কারখানার কর্মী। ৪৩ বছর আগে প্রথম আয়োজন হয়েছিল দুগার্পুজোর। সেই সময় হলদিয়ার হিন্দুস্থান ফার্টিলাইজারের রমরমা অবস্থা। পুজোয় নটরাজ হল-সহ একাধিক হলে নানা অনুষ্ঠান হত। হলদিয়া টাউনশিপে সেক্টর ১৩-র পুজো কমিটির সম্পাদক দিলীপ কুলভি বলেন, ‘‘বিভিন জায়গা থেকে এসে আমরা তখন সবে চাকরিটে যোগ দিয়েছি। ধুমধাম করে পুজো হত। মহিলারা নাটক করতেন। ১২০০-১৪০০ মানুষ পুজোয় ভোগ খেতেন। এখন সে সব অতীত। তবু পুজো আসে যায়। আমরাও পুজো কাটাই স্মৃতি ঘেঁটে।’’
তবে সেই স্মৃতি আগলেই এ বার অন্যরকম পুজো করছেন এই মানুষগুলি। বন্ধ কারখানার ভগ্ন আবাসনের সামনেই এই কদিন সেই মধুর স্মৃতি আগলে পড়ে থাকবেন তাঁরা। স্থানীয় বাসিন্দা ও জাদুকর বৈদ্যনাথ ঘোষ জানান, নটরাজ হলে প্রথম এদের পুজোর অনুষ্ঠান করেছিলাম। সে কি জাঁক। এখনও মনে পড়ে।
ধুসর সেই স্মৃতি নিয়ে এবার তরুণদের হাত ধরেই ফিনিক্স পাখির মতো জেগে উঠেছে ১৩ পল্লির পুজো।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy