Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

হেলে পড়া চিমনিই ভাবনা ভাঙ্গিপাড়ার

মাটিতে মিশে গিয়েছে নীলকর সাহেবদের প্রাকৃতিক নীল তৈরির ভাটিঘর। হেলে পড়েছে পোড়া মাটির তৈরি ‘হেরিটেজ’ চিমনিও।

জীর্ণ: হেলে থাকা এই চিমনি ঘিরেই বিপদের আশঙ্কা এলাকাবাসীর। নিজস্ব চিত্র

জীর্ণ: হেলে থাকা এই চিমনি ঘিরেই বিপদের আশঙ্কা এলাকাবাসীর। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
গড়বেতা শেষ আপডেট: ২২ মার্চ ২০১৭ ০০:২৬
Share: Save:

মাটিতে মিশে গিয়েছে নীলকর সাহেবদের প্রাকৃতিক নীল তৈরির ভাটিঘর। হেলে পড়েছে পোড়া মাটির তৈরি ‘হেরিটেজ’ চিমনিও। আচমকা চিমনি ভেঙে পড়লে বড় বিপর্যয়ের আশঙ্কা করছেন গড়বেতার খড়কুশমার ভাঙ্গিপাড়ার বাসিন্দারা। প্রশাসনকে জানিয়েও কাজ হয়নি বলে অভিযোগ।

উঁচু মিনারের আদলে তৈরি চিমনি দিয়ে এক সময় বিষাক্ত নীলের ধোঁয়া বেরতো। মাটি ক্ষয়ের ফলে এখন চিমনিটি কিছুটা দক্ষিণ দিকে হেলে পড়েছে। চিমনির খুব কাছেই রয়েছে বেশ কিছু বাড়িঘর। এলাকার নিত্য ব্যবহার্য পুকুরটিও রয়েছে চিমনির কাছেই। ভাঙ্গিপাড়ার প্রায় ৫০-৬০টি পরিবারের লোকজন ওই পুকুরের জলে নিয়মিত স্নান করেন। সারা দিনই চিমনির পাশের রাস্তায় লোকজনের যাতায়াত লেগেই থাকে। এলাকাবাসীর বক্তব্য, চিমনিটি ভেঙে পড়লে বড় ধরনের বিপর্যয়ের আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় পঞ্চায়েত-প্রশাসনকে আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন বাসিন্দারা। তবে ‘হেরিটেজ-চিমনি’ ভেঙে ফেলার এক্তিয়ার পঞ্চায়েতের হাতে নেই। তাই খড়কুশমা পঞ্চায়েত কর্তৃপক্ষ হাত গুটিয়ে বসে রয়েছেন বলে অভিযোগ।

চিমনির এক পাশে খোলা আকাশের নিচে রান্না করছিলেন মমতা ভাঙ্গি। তিনি বলেন, “ঘরের ভিতর রান্না করতে ভয় করে। হেলে পড়া চিমনির বিপরীত দিকে বসে তাই রান্না করছি। ঝড়-বৃষ্টির সময় প্রাণ হাতে করে ঘরেই রান্না করি।” স্থানীয় বাসিন্দা আলিয়ার ভাঙ্গি, আবু বক্কর ভাঙ্গিরা বলেন, “আমাদের অ্যাসবেস্টসের ছাউনি দেওয়া মাটির বাড়ি। প্রায় ৫০ ফুট উঁচু ইটের তৈরি চিমনি ভেঙে পড়লে আমরা কেউ বাঁচব না।”

আলিয়ার, আবুদের বাড়ির পিছনে রয়েছে কয়েকটি পাকা বাড়িও। এলাকাবাসীর আশঙ্কা, চিমনি ভেঙে পড়লে পাকা বাড়িগুলি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা গড়বেতা কলেজের পড়ুয়া আলাউদ্দিন ভাঙ্গি, মুস্তাফা ভাঙ্গি-রা বলেন, “আমাদের পূর্বপুরুষরা এক সময় নীলকর সাহেবদের অত্যাচারে বাধ্য হয়ে নীল চাষ করতেন বলে শুনেছি। নীলের ভাটির এখন আর কোনও অস্তিত্ব নেই। তবে ঘন জনবসতির মাঝে চিমনিটি আমাদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

খুদে স্কুল পড়ুয়া নুরুদ্দিন ভাঙ্গি, গৃহবধূ আসমা ভাঙ্গি, কাঠ মিস্ত্রি নাদের আলি মোল্লাদের কথায়, “চিমনি পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় আশঙ্কায় বুক ঢিপঢিপ করে।” এমন বিপজ্জনক চিমনি ভেঙে দেওয়ার দাবি তুলেছেন এলাকাবাসী। মেদিনীপুরের পুরাতত্ত্ব গবেষক চিন্ময় দাশ বলেন, “ওই হেরিটেজ চিমনি অতীত ইতিহাসের সাক্ষী। অবিলম্বে চিমনির যথাযথ সংস্কার করে এলাকাবাসীর নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা প্রয়োজন।” গড়বেতার বিধায়ক আশিস চক্রবর্তী বলেন, “সমস্যা খতিয়ে দেখে উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Chimney Dangerous Damaged
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE