প্রতীকী ছবি।
দেড় মাসের এক শিশুর ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধারের পরই এক প্রৌঢ়ার বাড়িতে চড়াও হল গ্রামবাসী। ডাইনি অপবাদে চলল মারধর। ভেঙে দেওয়া হল প্রৌ়ঢ়ার বাড়িও। সোমবার সকালে খবর পেয়ে মোহনপুর ব্লকের উত্তর মোহনপুর গ্রামে পৌঁছয় পুলিশ। উদ্ধার করে প্রৌঢ়াকে। ময়নাতদন্তের জন্য শিশুর দেহ পাঠানো হয় খড়্গপুর হাসপাতালে।
কুসংস্কারের বশে কয়েকজন গ্রামবাসী পুলিশ না পৌঁছনো পর্যন্ত একজন প্রৌঢ়ার উপর হামলা চালালেন। চলল ভাঙচুর। এই ঘ়টনায় কি কোনও পদক্ষেপ করবে প্রশাসন? মোহনপুরের বিডিও পরিমল গায়েন বলেন, ‘‘একটা ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ দ্রুততার সঙ্গে পদক্ষেপ করেছে। আগামী দিনে মানুষের মধ্যে থাকা কুসংস্কার দূর করতে কর্মসূচি নেওয়া হবে।’’ স্থানীয় বিজ্ঞান সংগঠনের নেতা কনককান্তি করের কথায়, ‘‘ডাইনি প্রথার বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষকে এক হতে হবে।’’
স্থানীয় সূত্রের খবর, পেশায় গাড়িচালক বাপি কিস্কু প্রতিদিনের মতো রবিবার রাতে বাড়ি ফেরার পর তাঁকে খেতে দেন তাঁর স্ত্রী পান কিস্কু। এরপর তাঁদের দেড়মাসের পুত্রসন্তান রবিকে দুধ খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে দেন পান। সোমবার ভোরে মশারির বাইরে রক্তাক্ত অবস্থায় রবিকে পড়ে থাকতে দেখা যায়। দেড়মাসের শিশুর ডান হাত ও ডান পায়ের নীচের অংশ কাটা ছিল। মাথা ছিল খুবলানো। সারা শরীরে আঁচড়ের দাগ। এ খবর পাড়া-প্রতিবেশীদের মধ্যে জানাজানি হতেই দেখতে ছুটে আসে অনেকেই। ধীরে ধীরে জনসমাগম বাড়ে। বাড়ে উত্তেজনা। রাগ যায় লাগোয়া প্রতিবেশী বাসন্তী সরেনের ওপর। সকাল ১০টা নাগাদ গ্রামবাসীদের কয়েকজন বাসন্তীর বাড়িতে গিয়ে শুরু করে ভাঙচুর। ডাইনি অপবাদে চলে মারধর। মৃত শিশুর বাবা বাপি বলেন, ‘‘ডাইনি ছাড়া কে হাত-পা খাবে। শেয়াল,কুকুর হলে বাইরে টেনে নিয়ে যেত। ছেলের এমন অবস্থা দেখে সন্দেহ হয়। শুধু ডান দিকের সব কিছুই ক্ষত-বিক্ষত।’’ কেন বাসন্তীকে সন্দেহ? স্থানীয় সূত্রের খবর, বাসন্তী তন্ত্রসাধনা করেন। তাই তাঁকেই সন্দেহ করেছিল গ্রামবাসীরা। বাসন্তীর কথায়, ‘‘হঠাৎ আমাকে মারধর করে লোকজন। কেন বুঝতে পারিনি। পরে জানতে পারি আমি নাকি তাদের ছেলেকে মেরে ফেলেছি।’’ পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অনুমান, কোনও বন্য জন্তুর (শেয়াল) কাজ হবে এটা। কেননা সারা শরীরে নখের আঁচড়ের দাগ ছিল।
এলাকায় পৌঁছে দেখা গেল, বাপির বাড়ি বাঁশ দিয়ে ঘেরা। তবে দরজা পোক্ত হলেও অন্যদিকে জায়গায় জায়গায় খোলা। যে কেউ অনায়াসে ঘরের ভেতর ঢুকতে পারে। গ্রামের সামনেই মোহনপুর হাইস্কুল। আশেপাশের বাড়ির ছেলে-মেয়েরা পড়াশুনো করলেও এ পাড়ায় তেমন কেউ স্কুলে যায় না।
স্থানীয় বাসিন্দা সিদ্ধার্থ পরিচ্ছা, তাপসকুমার নন্দী, গুরুবারী মুর্মু বলেন, ‘‘এর আগে এ ধরনের কোনও ঘটনা ঘটেনি। তবে পারিবারিক কোনও সমস্যার জেরে এ ঘটনা ঘটেছে কি না, জানা নেই। মৃত্যু নিয়ে সত্যিই সন্দেহ থেকে যাচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy