হাতির তাণ্ডবে তছনছ আলুখেত। রংড়াকোলায়। —নিজস্ব চিত্র।
এতদিন সংখ্যায় ছিল ৪০-৪৫টা। উৎসবের রাতে বাড়ল সংখ্যা। বুধবার খাবারের খোঁজে চুবকা অঞ্চলের রংড়াকোলা ও ভিড়িংপুর গ্রামে হানা দিল দলমার পালের প্রায় ৭০-৭৫টি হাতি।
বুধবার ছিল জঙ্গলমহলের মূলবাসীদের নববর্ষের সূচনা, ‘আখ্যান যাত্রা’। ঘরে ঘরে পিঠে পুলির আয়োজন। উৎসব মুখর গ্রামে হাজির হল দলমার দামালরা। তাল কাটল আনন্দের। ফসল বাঁচাতে শুরু হয় ছুটোছুটি। যদিও মশাল জ্বালিয়ে, শব্দ করেও শেষ রক্ষা হয়নি। স্থানীয় সূত্রের খবর, রাংড়াকোলা ও ভিড়িংপুর গ্রামে প্রায় ৭০ বিঘে খেতের আলু ও শীতকালীন আনাজ চাষের ক্ষতি হয়েছে। এখনও কাটছে না আতঙ্ক। বৃহস্পতিবার বিকেল থেকে রাংড়াকোলা গ্রামে শুরু হয়েছে দেড়শো বছরের ঐতিহ্যবাহী কালামদনের মেলা। ফের মেলায় যদি চলে আসে দাঁতালরা!
স্থানীয় বাসিন্দা কর্ণ সামন্ত, মহাদেব নায়েক, আদিত্য ঘোড়াইরা ব্যস্ত ছিলেন হাতি তাড়াতে। তারই মধ্যে হাতিরা একাধিক দলে ভাগ হয়ে আলু ও আনাজ খেত তছনছ করতে থাকে। সারা রাত তাণ্ডব চালিয়ে ভোরে হাতির দলটি ফের নদী পেরিয়ে কনকাবতীর দিকে ফিরে যায় তারা। রাংড়াকোলার আলু চাষি লক্ষ্মণ মাইতি-র দু’ বিঘা খেতের আলু সাবাড় করে দিয়েছে হাতিরা। আনাজ চাষি অশোক সামন্ত পাঁচ কাঠা জমিতে ১২০০ বাঁধাকপি ফলিয়েছিলেন। আটশোর বেশি কপি খেয়ে নিয়েছে হাতিরা। কিছু কপি নষ্টও করেছে। কীভাবে চাষের খরচটুকু উঠবে ভেবে পাচ্ছেন না লক্ষ্মণ, অশোকদের মতো এলাকার প্রায় জনা পঞ্চাশ চাষি।
স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য রমলা সামন্ত বলেন, ‘‘হাতিগুলি প্রতি রাতে হানা দিচ্ছে। বৃহস্পতিবার থেকে রাংড়াকোলায় মেলা শুরু হয়েছে। খুবই উৎকন্ঠার মধ্যে আছি। পুলিশ-প্রশাসন ও বন দফতরকে মেলা চত্বরে নিরাপত্তা দেওয়ার জন্য অনুরোধ করা হয়েছে।’’ কংসাবতী নদীর চর থেকে কিলোমিটার খানেক দূরে কালামদনের মন্দিরের লাগোয়া মাঠে সারা রাত ধরে মেলার আসর বসে। ফলে মেলায় আসা লোকজনের নিরাপত্তা নিয়ে চিন্তিত স্থানীয়রা। মেলা কমিটির সদস্য তারাপদ মাইতি বলেন, ‘‘হাজার-হাজার মানুষ মেলায় আসেন। হাতিরা চলে এলে কী যে হবে জানি না। আলো দেখলে হাতি এড়িয়ে চলে। তাই মেলা চত্বরে চারটি জেনারেটর এনে আলো ঝলমলে করে রাখার ব্যবস্থা করেছি।’’
ডিএফও (ঝাড়গ্রাম) বাসবরাজ হোলাইচ্চি বলেন, ‘‘ক্ষতিগ্রস্ত চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে। মেলা উপলক্ষে এলাকায় বনকর্মী ও হুলাপাটির নদরদারি থাকবে।’’
হাতির হানায় ফসল নষ্ট চলছে চন্দ্রকোনাতেও। বুধবার রাতে দলছুট দুই দাঁতাল পানিকোটর জঙ্গল থেকে বেরিয়ে ধামকুড়িয়া,চালঘোরি,রাজবাঁধ সহ সংশ্লিষ্ট গ্রামে ঢুকে পড়ে।মাঠে নেমে আলু খেত লন্ডভন্ড করে।তারা শীতকালীন আনাজ খেতেও হামলা চালায়। পা ও শুঁড়ে করে কয়েক বিঘার আনাজ নষ্ট করে ফের পানিকোটর জঙ্গলে ঢুকে পড়ে। বন দফতর সূত্রের খবর, চন্দ্রকোনায় এখন পযর্ন্ত তিন একরের মতো আলু এবং আনাজের ক্ষতি হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের ফর্ম দেওয়া হচ্ছে।নিয়ম মেনেই সংশ্লিষ্ট চাষিদের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy