ভরা শীতেও গলদঘর্ম অবস্থা হয়েছিল বেলপাহাড়ির ট্যুর গাইড মিলন দে’র।
মকর পরবে জঙ্গলমহল বেড়াতে এসেছিলেন ক্যালিফোর্নিয়ার জন স্যামুয়েল। খেয়েছিলেন মাংস-পিঠে। তার পরেই মিলনকে ওই পর্যটকের প্রশ্ন, ‘‘হোয়াট ইজ মাঁস পিঠা’? অনেক কষ্টে প্রশ্নের মানে বুঝেছিলেন মিলন। কিন্তু উত্তর দিতে পারেননি। কারণ, বাংলা আর কাজ চালানোর মতো হিন্দি ছাড়া আর কোনও ভাষাই যে জানেন না! মিলনের কথায়, ‘মাংস-পিঠের ঠিকুজি-কুষ্ঠি ইংরেজিতে কী ভাবে বোঝাব? আমার দ্বারা হয়নি। সাহেব অবশ্য একবারই জিজ্ঞাসা করেছিলেন।’’
শুধু মিলন নয়, ইংরেজি না-জানায় ভিন্ রাজ্য বা বিদেশি পর্যটকদের নিয়ে বেড়াতে গিয়ে প্রায়ই সমস্যায় পড়ছেন জঙ্গলমহলের গাইড ও গাড়ি-চালকেরা। প্রশ্নের উত্তর না পেয়ে হতাশ হন পর্যটকেরাও। তাই এ বার ৫০ জন গাইড ও গাড়ি-চালককে নিখরচায় ‘স্পোকেন ইংলিশ’ শেখাতে উদ্যোগী হয়েছে ঝাড়গ্রামের একটি বেসরকারি পর্যটন সংস্থা। প্রকৃতির মধ্যে ঘুরে আগামী শনিবার থেকেই শুরু হচ্ছে ওই পাঠ (ইংলিশ ফর ট্যুর গাইড)। সপ্তাহে তিন দিন করে চার মাস চলবে এই ক্লাস। পর্যটকদের সঙ্গে কথা বলা, তাঁদের প্রশ্নের জবাব দেওয়া— সবই শেখানো হবে। প্রকৃতির মধ্যে এই কর্মশালায় ইংরেজি শেখাবেন ঝাড়খণ্ডের চাকুলিয়া এলাকার রামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ইন্টারন্যাশন্যাল ইংলিশ হাইস্কুলের প্রিন্সিপ্যাল কো-অর্ডিনেটর দেবজ্যোতি শ্যামল। তিনি বলেন, “গাইড ও গাড়ি-চালকেরা বছরভর যে পরিবেশে কাজ করেন, সেখানেই হাতে-কলমে ইংরেজি শেখানো হলে, শেখাটা অনেকটাই সহজ হবে।”
ইংরেজি বলা রপ্ত হলে তাঁদের সুবিধা হবে বলে মানছেন গাইডরাও। তাঁদের মধ্যে মিঠুন খারওয়ার জানান, মাসখানেক আগে কয়েকজন দক্ষিণ ভারতীয় পর্যটক ইংরেজিতে চিল্কিগড়ের কনকদুর্গা মন্দিরের ইতিহাস জানতে চাওয়ায় তিনি অস্বস্তিতে পড়েন। তিনি মানছেন, ‘‘যে ইতিহাসের কথা আমরা সাবলীল বাংলায় বলি, সেটা কিছুতেই সে দিন ইংরেজিতে বলতে পারলাম না।’’ এ বার সেই সমস্যা মিটবে বলে মনে করছেন তিনি। গাড়ি-চালক সৌমেন গোস্বামী, দেবাশিস মাহাতো-রাও বলছেন, ‘‘পাঁচ-ছ’বছরে জঙ্গলমহলে ভিন্ রাজ্যের ও বিদেশি পর্যটকদের আনাগোনা বেড়েছে। ইংরেজি না-জানায় ওই সব পর্যটকদের স্থানীয় ইতিহাস ও দর্শনীয় বিষয়গুলি সম্পর্কে বোঝাতে সমস্যা হয়। স্পোকেন ইংলিশ ক্লাস শুরু হলে ভালই হবে।’’
কর্মসূচির আয়োজক বেসরকারি পর্যটন সংস্থাটির কর্ণধার সুমিত দত্ত জানান, পর্যটকদের সুবিধার জন্যই এমন উদ্যোগ। উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন ঝাড়গ্রামের মহকুমাশাসক নকুলচন্দ্র মাহাতোও।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy