Advertisement
২৫ এপ্রিল ২০২৪

শিক্ষক নেই, ধুঁকছে প্রাথমিক স্কুল

কোথাও ছাত্র নেই। জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষে নিশ্চয় ছাত্র মিলবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষক। আবার কোথাও ৬৭ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য রয়েছেন ২ জন শিক্ষক।

নিজস্ব সংবাদদাতা
শালবনি শেষ আপডেট: ১৪ ডিসেম্বর ২০১৬ ২৩:৪৭
Share: Save:

কোথাও ছাত্র নেই। জানুয়ারি মাসে নতুন শিক্ষাবর্ষে নিশ্চয় ছাত্র মিলবে, সেই অপেক্ষায় রয়েছেন শিক্ষক। আবার কোথাও ৬৭ জন ছাত্রছাত্রীর জন্য রয়েছেন ২ জন শিক্ষক। দু’জন শিক্ষক দু’টি শ্রেণিকক্ষে পড়াতে ঢুকলেই বাকি শ্রেণিকক্ষ শিক্ষক শূন্য!

এই ছবিটা পশ্চিম মেদিনীপুর জেলার। গ্রামের প্রাথমিক স্কুলে যেখানে শিক্ষকের সঙ্কট রয়েছে, সেখানে শহরের ছবিটা ঠিক উল্টো। মেদিনীপুর শহরের রামচন্দ্র বিদ্যাপীঠে (বালক) ছাত্রই নেই! রয়েছেন একজন শিক্ষক। ওই স্কুলেই সকালে রয়েছে বালিকা বিভাগ। বালিকা বিভাগেও রয়েছে বড়জোর ১৫ জন ছাত্রী। শিক্ষক রয়েছেন দু’জন। রামচন্দ্র বিদ্যাপীঠের (বালক) শিক্ষক অর্ঘ্য চক্রবর্তী বলেন, “জানুয়ারি মাসেই তো নতুন শিক্ষাবর্ষ। ছাত্র এসে যাবে।” শহর লাগোয়া নতুন জামকুণ্ডা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আবার ১০ জন শিক্ষক! ছাত্র সংখ্যা বড়জোর একশো জন।

শিক্ষা দফতর জানিয়েছে, সরকারি নিয়ম অনুযায়ী ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ৬০ জন পর্যন্ত রয়েছে এমন স্কুলে দু’জন শিক্ষক থাকতে হবে। ছাত্রছাত্রী সংখ্যা ৬১-৯০ হলে ৩ জন শিক্ষক, ৯১-১২০ হলে ৪ জন শিক্ষক, ১২০-২০০ হলে ৬ জন শিক্ষক থাকার নিয়ম রয়েছে। পড়ুয়ার সংখ্যা ২০০ জনের বেশি হলে ৪০ জন ছাত্র পিছু একজন শিক্ষক থাকার নিয়ম। যদিও এই নিয়ম রয়েছে খাতায় কলমেই। অভিযোগ, সুযোগ-সুবিধা বেশি থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে গ্রামের স্কুল থেকে শহরে বদলি নেওয়ার প্রবণতা বেশি। ফলে শিক্ষকের অভাবে ধুঁকছে গ্রামীণ প্রাথমিক স্কুলগুলি।

শালবনি ব্লকের রামেশ্বরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রী রয়েছে ৬৭ জন। শিক্ষক রয়েছেন দু’জন। স্কুলের প্রধান শিক্ষক অশ্বিনী মাহাতো অবসর নেওয়ার পর মাস দু’য়েক স্কুল চালাতে হয়েছিল পার্শ্বশিক্ষক সবিতা মাহাতোকেই। স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষিপ্ত হচ্ছেন দেখে সম্প্রতি অন্য স্কুল থেকে আর একজন শিক্ষক জ্যোতির্ময় সর্দারকে বদলি করে আনা হয়েছে।

দু’জনে দু’টি শ্রেণিতে পড়াতে ঢুকলেই বাকি শ্রেণিকক্ষের পড়ুয়াদের পড়ানোর কেউ থাকে না। চতুর্থ শ্রেণির উত্তম মাহাতো, সঞ্জয় মাহাতো, পিয়ালী মাহাতোরা জানাল, “স্যারেরা অন্য ঘরে থাকলে আমরা নিজেরাই পড়ি।” শিক্ষক জ্যোতির্ময়বাবু বলেন, “সবসময় ভয়ে থাকি। ছোট ছোট বাচ্চা। যদি মারামারি করে। দু’জনে কী স্কুল চালানো যায়।”

কারও শরীর খারাপ হলে বা অন্য কারণে কেউ ছুটি নিলে ফের এক শিক্ষকের স্কুলে পরিণত হয় রামেশ্বরপুর প্রাথমিক বিদ্যালয়। সম্প্রতি অবসর নেওয়া প্রধান শিক্ষক অশ্বিনী মাহাতো বলেন, “কতবার সংসদে আবেদন জানিয়েছি, চারজন শিক্ষক দেওয়া হোক। কিন্তু কেউ শোনেনি। এ ভাবে কী পড়াশোনা হয়।” শুধু রামেশ্বরপুর নয়, ভেলাইডাঙা, বেনাগেড়িয়া থেকে শুরু করে জেলার সমস্ত ব্লকের প্রত্যন্ত এলাকার বেশিরভাগ প্রাথমিক স্কুলের অবস্থা কমবেশি একই রকম।

বিষয়টি শিক্ষা দফতরের অজানা নয়। এবিপিটিএ-র জেলা সম্পাদক ধ্রুবশেখর মণ্ডলের অভিযোগ, “শাসকদলের নেতারাই যেখানে অর্থের বিনিময়ে শিক্ষকদের গ্রাম থেকে শহরে বদলির সুযোগ করে দিয়েছেন, তাঁরাই আবার কী ভাবে তাঁদের গ্রামে ফেরাবেন।’’ বিজেপি-র জেলা শিক্ষা সেলের আহ্বায়ক প্রিয়তোষ জানাও একই সুরে বলেন, “চাকরি থেকে বদলি, সবই তো আর্থিক লেনদেনের উপর দাঁড়িয়ে। গ্রামের স্কুলগুলিতে শিক্ষকের সঙ্কট দেখলেই বোঝা যায়, শিক্ষায় আমরা কতটা পিছিয়ে পড়ছি।”

সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, এ বার সেই প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। প্রথম ধাপে জেলার কয়েকটি বিদ্যালয়কে চিহ্নিত করে শিক্ষক বদলির একটি তালিকাও রাজ্যে পাঠানো হয়েছে। জেলা স্কুল পরিদর্শক (প্রাথমিক) আমিনুল আহাসান বলেন, “রাজ্য থেকে তালিকাটি অনুমোদন হয়ে এলেই বদলি প্রক্রিয়া শুরু করে দেব।” কেন ছাত্র-শিক্ষকের আনুপাতিক হার মেনে সব বিদ্যালয়কে ধরা হল না? এর কোনও সদুত্তর মেলেনি। সংসদ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রথম ধাপেই সকলকে ধরা হলে, যে গোলমাল পাকাবে তা সামলানো কঠিন। তাই ধাপে ধাপে প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করার দিকেই এগোচ্ছে সংসদ।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Primary Teacher Teacher
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE