Advertisement
১৯ এপ্রিল ২০২৪
Coronavirus

নিভৃতবাসেও সম্প্রীতির বাঁধন, পরিযায়ীরাই দিশারি

বিজয়ের মা প্রয়াত। বাবা মনোহারি জিনিসপত্রের ফেরিওয়ালা। রুজির প্রয়োজনে তিনি বাড়িতে খুব কমই থাকেন।

নিভৃতবাস কেন্দ্রে চলছে ক্যারাম খেলা। নিজস্ব চিত্র

নিভৃতবাস কেন্দ্রে চলছে ক্যারাম খেলা। নিজস্ব চিত্র

কিংশুক গুপ্ত
বিনপুর শেষ আপডেট: ২৭ মে ২০২০ ০৪:৩৯
Share: Save:

তামিলনাড়ু ফেরত সাত পরিযায়ী শ্রমিকের মধ্যে একজন বৈষ্ণব। বাকি ছ’জন মুসলিম। ঝাড়গ্রাম জেলার বিনপুরের একটি শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবনে একসঙ্গে রয়েছেন তাঁরা। বছর কুড়ির বিজয় মহন্তের খাবার আসছে নিভৃতাবাসে থাকা মেহবুব আলি, আসগর আলি, সাদ্দাম খাঁ, শেখ রশিদ বক্সদের বাড়ি থেকে।

বিজয়ের মা প্রয়াত। বাবা মনোহারি জিনিসপত্রের ফেরিওয়ালা। রুজির প্রয়োজনে তিনি বাড়িতে খুব কমই থাকেন। বিজয়ের দাদা লকডাউনে এখনও তামিলনাড়ুতে আটকে রয়েছেন। বিজয়ের বাড়ি থেকে রান্না করে খাবার পাঠানোর মতো কেউ নেই। এই পরিস্থিতিতে নিভৃতাবাসের সংখ্যালঘু বন্ধুদের বাড়ি থেকেই বিজয়ের জন্য খাবার পাঠানো হচ্ছে। বিনপুর থানার সংখ্যালঘু সম্প্রদায় অধ্যুষিত দহিজুড়ি এলাকায় এমন সম্প্রীতির ছবি অবশ্য নতুন কিছু নয় বলে দাবি এলাকাবাসীর। দহিজুড়ি পঞ্চায়েতের প্রধান ফাল্গুনী দে বলেন, ‘‘দহিজুড়িতে উভয় সম্প্রদায় বহু যুগ ধরে সম্প্রীতির সঙ্গে বসবাস করছে। সেই কারণেই বিজয় স্বচ্ছন্দে মেহেবুদের সঙ্গে রয়েছেন। এটাই আমাদের এলাকার ঐতিহ্য।’’

দহিজুড়ির সাত তরুণ তামিলনাড়ুর কাঞ্চিপুরমের ওরগদামে একটি কারখানায় শ্রমিকের কাজ করতেন। গত ফেব্রুয়ারিতে সেখানে গিয়ে লকডাউনে আটকে পড়েন তাঁরা। সঙ্গে টাকা-পয়সা শেষ হয়ে আসায় ওই শ্রমিকেরা দহিজুড়ির তৃণমূল কর্মী শেখ নাসিরুদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। নাসিরুদ্দিন অনলাইনে তাঁদের ফেরার অনুমতিপত্রের ব্যবস্থা করে দেন। কাঞ্চিপুরম থেকে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন রাজ্যের শ্রমিকদের সঙ্গে একটি বাস ভাড়া করে গত ২১ মে রাতে ফেরেন দহিজুড়ির ওই সাত তরুণ। নাসিরুদ্দিন বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত প্রধানের অনুমতি নিয়ে এবং বিনপুর থানাকে জানিয়ে স্থানীয় চকচালতা এলাকার শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের ভবনে ওই সাতজনকে রাখার ব্যবস্থা করা হয়।’’

চকচালতা শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেল খোজমেজাজে ক্যারম খেলছেন বিজয় ও অন্যরা। বিজয়ের সঙ্গে ওই নিভৃতবাসে রয়েছেন চকচালতা গ্রামের বছর ছত্রিশের মেহেবুব আলি, বছর চৌত্রিশের আসগর আলি, দহিজুড়ির বছর আঠাশের সাদ্দাম খাঁ, বছর ছাব্বিশের শারুপ মণ্ডল, ২৫ বছরের শেখ রশিদ বক্স, ২০ বছরের রাব্বান খাঁ। বিজয় বলেন, ‘‘বন্ধুদের বাড়ি থেকে পাঠানো খাবার সবাই মিলে ভাগ করে খাচ্ছি। নিত্যনতুন স্বাদের খাবার ভালই লাগছে।’’ অসগরের স্ত্রী তাহিমা বিবি বলেন, ‘‘বিজয় যাতে ভরপেট খেতে পারে, সেজন্য বেশি করে খাবার পাঠাই।’’

সোমবার ইদের দিনে শিশুশিক্ষা কেন্দ্র লাগোয়া ফাঁকা মাঠে নমাজ পড়েছেন ছ’জন। তাঁদের বাড়ি থেকে পাঠানো ইদের পোলাও, সিমুই, লাচ্ছার মতো খাবার-দাবার বিজয়ের সঙ্গে ভাগ করে খেয়েছেন তাঁরা। সাদ্দাম, আসগর-রা বলছেন, ‘‘বিজয় আমাদের ভাইয়ের মতো। ওর সঙ্গে আমাদের কোনও প্রভেদ নেই।’’ দহিজুড়ির জামে মসজিদের ইমাম মৌলনা সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, ‘‘ইসলামের আদর্শ মানুষের পাশে থাকা। বিজয়ের পাশে থেকে সাদ্দামরা সেটাই করছে। এটাই মানবধর্ম!’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Health Coronavirus Lockdown
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE