Advertisement
২৪ এপ্রিল ২০২৪
credit card

ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতি, ধৃত প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্মী 

বহু গ্রাহকেই জানতেন না যে, অভিষেক সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছে। তাঁরা ব্যাঙ্কের কর্মীর ভেবেই অভিষেককে নিজেদের কার্ড দিয়ে দিতেন।

প্রতীকী চিত্র।

প্রতীকী চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কোলাঘাট শেষ আপডেট: ১১ জানুয়ারি ২০২০ ০৪:১০
Share: Save:

ক্রেডিট কার্ড জালিয়াতির ঘটনায় নাম জড়াল এক প্রাক্তন ব্যাঙ্ক কর্মীর। ফোনে গ্রাহকদের কার্ডের তথ্য জেনে নেওয়া নয়, ব্যাঙ্ক কর্মীর পরিচয় দিয়ে সোজা গ্রাহকের বাড়িতে গিয়েই চলেছে তার জালিয়াতির কাজকর্ম!

দমদমের বাসিন্দা বছর বত্রিশের অভিষেক মজুমদার তমলুকে একটি বেসরকারি ব্যাঙ্কে চাকরি করত। তার কাজ ছিল গ্রাহকদের ক্রেডিট কার্ডের আবেদনের নথি সংগ্রহ করা। সে জন্য তাকে বিভিন্ন গ্রাহকের বাড়িতেও যেতে হত। কাজে অস্বচ্ছতা ধরা পড়ায় বছর দেড়েক আগে ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষ অভিষেককে সাসপেন্ড করেন। কিন্তু এর পরেও সে ব্যাঙ্ক কর্মীর পরিচয় দিয়ে জালিয়াতির কাজ করত বলে অভিযোগ। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কোলাঘাটের ভোগপুর এলাকার বাসিন্দারা তাকে ধরে পুলিশের হাতে তুলে দেন।

পুলিশ সূত্রের খবর, ব্যাঙ্কে কাজ করায় বহু গ্রাহকের যোগাযোগ-সহ কার্ডের তথ্য ছিল অভিষেকের কাছে। সাসপেন্ড হওয়ার পরে সে এমন গ্রাহকদের সঙ্গে প্রথমে ফোনে যোগাযোগ করত, যাঁরা নিজেদের ক্রেডিট কার্ড তেমন ব্যবহার করতেন না। ফোনে অভিষেক তাঁদের বলত যে, কার্ড ব্যবহার না করে ফেলে রাখলেও একটি নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা গ্রাহকদের ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে দিতে হবে। পাশাপাশি, পরামর্শ দিত, কার্ডটি ব্যাঙ্কে ফেরত দিয়ে দেওয়ার জন্য। তা হলে তাদের আর বাড়তি অর্থ গুণতে হবে না। গ্রাহকেরা ব্যাঙ্কে গিয়ে কার্ড ফেরত দিতে চাইলে অভিষেক নিজে গিয়ে বাড়ি থেকে কার্ড সংগ্রহ করত।

জালিয়াতি এড়াতে

কারও সঙ্গে ব্যাঙ্কের তথ্য শেয়ার না করা ব্যাঙ্ক সংক্রান্ত কাজ করতে গেলে মাধ্যম নয়, সরাসরি ব্যাঙ্কে যান কেউ ব্যাঙ্ককর্মী পরিচয় দিয়ে বাড়িতে গেলে তাঁর ছবি তুলে, পরিচয় জানতে ব্যাঙ্কের সাথে কথা বলা

এ দিকে, বহু গ্রাহকেই জানতেন না যে, অভিষেক সাসপেন্ড হয়ে গিয়েছে। তাঁরা ব্যাঙ্কের কর্মীর ভেবেই অভিষেককে নিজেদের কার্ড দিয়ে দিতেন। আর অভিষেক অনলাইনে সেই কার্ডে গ্রাহকের ফোন নম্বর পরিবর্তন করে নিজের নম্বর দিয়ে দিত। ফলে কার্ড ব্যবহার করলেও গ্রাহকের কাছে সে সংক্রান্ত কোনও মেসেজ যেত না।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা নাগাদ ভোগপুর এলাকায় এক গ্রাহকের বাড়িতে একইভাবে অভিষেক ক্রেডিট কার্ড সংগ্রহ করতে আসে। গ্রাহকের সন্দেহ হওয়ায় তিনি সংশ্লিষ্ট ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষকে ফোন করেন। ব্যাঙ্কের তরফে সাফ জানানো হয়, ওই ব্যক্তিকে তাঁরা দেড় বছর আগেই সাসপেন্ড করেছেন। এর পরেই জালয়াতির সন্দেহে অভিষেককে আটকে রাখেন গ্রামের মানুষজন। খবর পেয়ে পুলিশের পাশপাশি, অন্য প্রতারিতরাও সেখানে আসে। স্থানীয়দের দাবি, বিক্ষোভের মুখে অভিষেক স্বীকার করে নেয় যে, সে তমলুক, হলদিয়া ও কোলাঘাট এলাকার ৪৫ জনের অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় ৫০ লক্ষ টাকা চুরি করেছে। এ নিয়ে অভিষেকের নামে কোলাঘাট থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে।

তমলুকের জানুবসানেরর বাসিন্দা সত্যেশ্বর মান্না বলেন, ‘‘অভিষেক কয়েক মাস আগে আমার ক্রেডিট কার্ড নিয়ে যায়। ব্যাঙ্ক কর্মী হওয়ায় সন্দেহ হয়নি। মাস দুয়েক আগে আমার অ্যাকাউন্ট থেকে লক্ষাধিক টাকা কেটে নেওয়া হয়। আমি থানায় অভিষেকের নামে অভিযোগ জানানোর জন্য ব্যাঙ্ক ম্যানেজারের কাছে ওর ঠিকানা চাই। কিন্তু আমাকে তা দেওয়া হয়নি।’’

জালিয়াতির প্রসঙ্গে তমলুকের ওই ব্যাঙ্ক কর্তৃপক্ষের দাবি, ‘‘অভিষেক মজুমদার আগে এই ব্যাঙ্কের ক্রেডিট দফতরে কর্মরত ছিলেন। ওঁর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আসায় সাসপেন্ড করা হয়েছিল।’’ তমলুকের এসডিপিও অতীশ বিশ্বাস বলেন, ‘‘জেলার বিভিন্ন এলেকায় কার্ড জালিয়াতির অভিযোগ আসছিল। এক জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আদালতে তোলা হয়েছিল। বিচারক পাঁচ দিনের পুলিশ হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।’’

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE